কলকাতা ব্যুরো: দেউচা পাচামি প্রকল্পে ১০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ প্রস্তুত করেছে রাজ্য। এই প্রকল্পে রাজ্যের বিনিয়োগ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। মঙ্গলবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, শীঘ্রই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর কোল ব্লক বীরভূমের দেউচা পাচামিতে কয়লা উত্তোলন শুরু হবে। তিনি আশ্বস্ত করেন, যাদের ওই এলাকায় বাড়ি সহ জমি রয়েছে, তারা কোনও ভাবেই বঞ্চিত হবে না। তাদের জন্য সরকার ত্রাণ ও পুর্নবাসনের জন্য প্যাকেজ প্রস্তুত করেছে।
এই প্রসঙ্গে সিঙ্গুর প্রকল্পের কথা টেনে এনে বাম সরকারকে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সিঙ্গুরে যেভাবে জমি অধিগ্রহণ হয়েছে দেউচায় সেভাবে জমি নেওয়া হবে না। তাদের কর্মসংস্থান, বাসস্থান সবরকমের ব্যবস্থা করা হবে।’
সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই এলাকায় ১২টি গ্রামে ৪ হাজার ৩১৪টি বাড়িতে ২১ হাজারেরও বেশি মানুষের বাস রয়েছে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় জানিয়েছেন, ‘শুধু টাকা নয়, জমি-বাড়ির সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিপূরণে চাকরিও দেওয়া হবে জমিহারাদের। তিনি বলেন, ওই এলাকায় জমিসহ বাড়ি রয়েছে এমন ব্যক্তি বিঘা প্রতি ১০ লাখ থেকে ১৩ লাখ টাকা পাবেন। এছাড়াও জিনিসপত্র স্থানান্তর, রক্ষণাবেক্ষণ এবং খামারে থাকা পশুপাখিদের জন্যেও আরও সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা পাবেন বাসিন্দারা।’
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, প্রায় ৩ হাজার জন ক্রাশার লেবার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাবেন। ওই এলাকায় ১৬০ জন কৃষি শ্রমিক ৫০ হাজার টাকা পাবেন। ৫০০ দিনের জন্য ১০০ দিনের কাজ পাবেন। ২৮৫ জন ক্রাশার মালিক তাঁদের জমি বাড়ির দাম এবং ৫০ হাজার টাকা শিফ্টিং অ্যালাউন্স পাবেন। ছয় মাস ধরে ১০ ট্রাক ব্যাসল্ট বিনামূল্যে পাবেন। কাছের চাঁদা মৌজায় ব্যাসল্ট শিল্প উদ্যানের পুনর্গঠন হবে । ২৭ জন খাদান মালিক জমি ও বাড়ির দাম পাবেন।
তবে এখানেই শেষ নয়, মমতা আরও জানিয়েছেন, সরকারের তৈরি পুর্নবাসন প্রকল্প অনুযায়ী ৬০০ বর্গফুটের একটি বাড়িও পাবেন এবং পরিবারপিছু একজন সদস্যকে কনস্টেবল র্যাঙ্কে চাকরি দেবে সরকার। এছাড়াও দেউচা পাঁচামির ফলে যে লক্ষাধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। তাতেও প্রাধান্য পাবেন ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা।
সোমবারই দেউচা পাচামি নিয়ে প্যাকেজের আলোচনায় নবান্নে প্রথম বৈঠকে বসেছিল রাজ্য সরকারের কমিটি। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব, পিডিসিএলের সচিব, বীরভূমের এসপি, ডিএম, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়-সহ কমিটির সদস্যরা।
২০১৫ সালে মোট ১৭টি কয়লা ব্লককে কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রকের তরফ থেকে বন্টন করা হয়। যার মধ্যে দেউচা-পাচামি কয়লাখনিও রয়েছে। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খনি। সেখানে ২১০২ মিলিয়ন টন কয়লা মজুত আছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। মমতা বলেন, ‘এখন আমাকে বাইরে থেকে কয়লা কিনতে হয়। দেউচা-পাঁচামি কোল ব্লক থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হলে আমাকে বাইরে থেকে কয়লা কিনতে হবে না। এখানকার কয়লা রাজ্যের বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা যাবে। তখন আর লোডশেডিং হবে না।’
তবে এদিন পুরো ঘোষণা শেষ করার পর সিঙ্গুরের প্রসঙ্গ তোলেন মমতা। বলেন, সিঙ্গুর যেভাবে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল আমরা সেভাবে করব না। সিঙ্গুরে জোর করে জমি অধিগ্রহণের অভিযোগ তুলেই রাজ্যে রাজনৈতিক শক্তিবৃদ্ধি হয় মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেসের ৷ সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের উপর ভর করেই ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসেন মমতা ৷
পরে আদালতের রায়েও দেখা যায় যে সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের পদ্ধতি ভুল ছিল৷ সেই পথে যে তাঁর সরকার হাঁটবে না, সেটাও স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷