এক নজরে

মহারাষ্ট্রের আইনজীবীদের ট্রেনে যাত্রায় জরুরী তকমা বোম্বে হাইকোর্টের, কলকাতা সেই তিমিরেই

By admin

October 10, 2020

কলকাতা ব্যুরো: করোনা আবহে মহারাষ্ট্রের আইনজীবিদের ট্রেনে আদালতে পৌঁছানোর জন্য জরুরী পরিষেবার স্বীকৃতির ব্যবস্থা করল বোম্বে হাইকোর্ট। প্রায় নজিরবিহীনভাবে বোম্বে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছেন, যারা আদালতে ফিজিক্যালি শুনানিতে যোগ দিতে ইচ্ছুক, তারা এখন থেকে লোকাল ট্রেনে উঠতে পারবেন জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হিসেবেই। ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্র এবং গোয়া বার কাউন্সিল হাইকোর্ট এর কাছে আইনজীবী ও তাদের ক্লার্কদের ট্রেনে যাতায়াতের জন্য জরুরী পরিষেবার স্বীকৃতি চেয়ে মামলা করে ছিলেন। আগামী ১৯ অক্টোবর পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ভাবে এই ব্যবস্থা চালু থাকবে বলে জানিয়ে দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। শুধু বোম্বে হাইকোর্টই নয়, রাজ্যের নিম্ন আদালতগুলিতেও আইনজীবীদের যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে।শুধু এই ব্যবস্থাতেই থেমে থাকেনি বোম্বে হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতির দত্ত রাজ্য সরকার, রেল সহ এই ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে যুক্ত সব প্রতিষ্ঠানকেই একসঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছেন। আদালতের বক্তব্য, এব্যাপারে শুধু সরকারি অফিসাররা যুক্ত হলেই চলবে না, মন্ত্রীদেরও এ ব্যাপারে যুক্ত করতে হবে। ট্রেন স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে সব প্রতিষ্ঠানকেই একসঙ্গে হয়ে মগজ খাটানোর পরামর্শ দিয়েছে বোম্বে হাইকোর্ট। গতানুগতিক ভাবে না ভেবে হাইকোর্টের পরামর্শ, বাস্তবোচিত ভাবনা নিয়েই আলোচনা ইতিবাচক দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।গত প্রায় তিন মাস ধরে কলকাতা হাইকোর্ট ফিজিক্যাল হিয়ারিং চালু করার ব্যাপারে উঠে পড়ে লেগেছিল। ইতিমধ্যেই ফিজিক্যাল হিয়ারিং এর জন্য পাঁচটি বেঞ্চ নিয়মিত বসছে। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই আইনজীবীরা আদালতে হাজির হতে পারছেন না। হাইকোর্টের আইনজীবীদের তিনটি সংগঠন এর আগেও প্রশাসনিকভাবে চিঠি দিয়ে লোকাল ট্রেন এবং কলকাতা মেট্রো চালু না হওয়া পর্যন্ত ফিজিক্যাল হিয়ারিং সম্ভব নয় বলে জানিয়েছিল।আদালত মেনে নিয়েছিল, কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবীদের একটা বড় অংশ ও হাইকোর্ট কর্মীরা লোকাল ট্রেন এবং মেট্রো রেল যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করেন। যদিও বাস্তবে তার মধ্যেই সরকারের থেকে ১৫ টি বাস নিয়ে মফস্বলের জেলাগুলো থেকে হাইকোর্ট, কর্মীদের নিয়মিত আনার ব্যবস্থা করলেও, আইনজীবীদের ক্ষেত্রে কোন সুরাহাই হয়নি। সম্প্রতি মেট্রো রেল চালু হয়েছে। তবে লোকাল ট্রেন সাধারণের জন্য কবে চালু হবে তা এখনও অনিশ্চিত।এ প্রসঙ্গে বোম্বে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সেখানকার আইনজীবিদের জন্য এমন সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী বলে প্রশংসা করছেন কলকাতার আইনজীবীরা। সেখানে লোকাল ট্রেন কিছু চালু হয়েছে। সেই ট্রেনেই এখন এসেনশিয়াল সার্ভিস এর লোক হিসেবেই আইনজীবীরা যাতায়াত করতে পারবেন।কলকাতার বহু আইনজীবী একে নজিরবিহীন ও বাস্তবোচিত বলে আখ্যা দিচ্ছেন। এর পরেই তারা প্রশ্ন তুলছেন, কলকাতা হাইকোর্টের অবস্থান নিয়ে। তাদের প্রশ্ন, রাজ্য সরকার এখনও ট্রেন চালানোর ব্যাপারে বাড়তি উদ্যোগ না নিলেও লোকাল ট্রেনের মত, একটি সাধারণ জনগণের যাতায়াতের মাধ্যম, বছরের অর্ধেক সময় বন্ধ হয়ে থাকলেও, হাইকোর্ট এ ব্যাপারে কোন অবস্থান নিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে না। অথচ হাইকোর্টে বা অন্যান্য আদালতে ফিজিক্যাল হিয়ারিং করার জন্য আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। যদিও এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার ছিল লোকাল ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নেওয়া।বিচারপতি দত্ত শুক্রবার শুনানিতে রেলের তরফে দাঁড়ানো অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অনিল সিংহের কাছে কলকাতার মেট্রো চলাচল সম্পর্কেও খোঁজখবর নেন। তাকে এএসজি জানান, মেট্রো সংখ্যা কমানো হলেও, কলকাতায় প্রতিদিনই ভিড় এড়িয়ে মেট্রো চলার জন্য ই- পাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।কলকাতায় নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে হাইকোর্ট, বহু আইনজীবী মনে করছেন, কলকাতা হাইকোর্টের একসময় কর্মরত বিচারপতি দত্ত, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এমন বাস্তব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে অন্যদেরও দেখা উচিত। তাদের মতে, যেখানে কোনও সরকার নাগরিক পরিষেবার ক্ষেত্রে যথাযথ উদ্যোগ বা সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসী করবে সেখানে আদালত পারে হস্তক্ষেপ করতে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, কলকাতায় এখনো তেমনভাবে কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।আবার আইনজীবীদের সংগঠনগুলিও একসময় এ নিয়ে একটু নড়াচড়া করলেও, এখন তাদের তরফ এ কোন আর উদ্যোগ নেই। মামলা তো দূরের কথা। আইনজীবীদের তরফে একটি মামলা দায়ের হলেও তা এখন প্রায় হিম ঘরে। অথচ সেই মামলাই জরুরি হিসেবে শুনানির দরকার ছিল।বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত র এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টের তার একসময়ের সহকর্মী বলেন, বাস্তববোধ এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলেই, কলকাতায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো ও মা ফ্লাইওভার সম্প্রসারণের কাজ গড়াতে পেরেছে। যে কঠিন জটিলতার মধ্যে এই দুটি প্রকল্প আটকে ছিল, তাকে দিনের পর দিন তিনি মধ্যস্থতা করে হস্তক্ষেপ না করলে, আজ এই দুটো প্রকল্প এগোতে পারতো কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে।।