কলকাতা ব্যুরো: হিজাব ইস্যুতে এ রাজ্যে যাতে কোনরকম ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে সব থানাকে সর্তক করলো রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগ। গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত ডিজি নিরজ কুমার সিংয়ের সই করা সেই সতর্কবার্তা প্রতিটি থানাকে ইতিমধ্যেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি কর্নাটকে স্কুলপড়ুয়ার হিজাব বিতর্কে আদালতে এখন মামলা চলছে। যা নিয়ে গোটা দেশেই চর্চা শুরু হয়েছে। সেই বিতর্কে এ রাজ্যে যাতে কোন অনভিপ্রেত ঘটনা না ঘটে, তাই এই সতর্কতা বলে জানাচ্ছেন রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তারা।
তবে হিজাব বিতর্কের আঁচ এসে লাগলো বাংলাতেও। বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগণার বসিরহাট মহকুমার বসিরহাট থানার সাকচুড়া টাকি রোডে শতাধিক হাই মাদ্রাসার ছাত্রী হিজাব পরে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখালেন। তাঁরা হাতে প্ল্যাকার্ড ফেস্টুন ব্যানার নিয়ে কর্ণাটকের ঘটনার প্রতিবাদে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন।
এদিন তাঁরা বলেন যেভাবে আমাদের পোশাকের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। প্রত্যেক মুসলিম ছাত্রীদের উপরে যেভাবে সংবিধান বিরোধী কার্যকলাপ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা বরদাস্ত করা হবে না। আমরা মর্মাহত। এই নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে তাঁরা।
ইতিমধ্যে কর্ণাটক আদালতে হিজাব পরার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে আরএসএস। সেই ঘটনার রেশ এবার এসে পৌঁছলো বাংলাতেও। মাদ্রাসার ছাত্রীরা বলেন আমাদের হিজাব পরা সাংবিধানিক অধিকার, সেই অধিকার যেন কেড়ে না নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে এক নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নমো বলেন, মুসলিম মেয়ে ও বোনেরা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের স্পষ্ট উদ্দেশ্য বুঝতে পারে, যা তাদের তিন তালাকের প্রথা থেকে মুক্তি দিয়েছে। আমাদের সরকার প্রতিটি নির্যাতিত মুসলিম নারীর পাশে দাঁড়িয়েছে। মুসলিম বোন-কন্যারা আমাদের উদ্দেশ্য বোঝে। আমরা তাদের তিন তালাক মুক্ত করেছি; তাদের সুরক্ষা দিয়েছে। যখন বিজেপি মুসলিম মহিলাদের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছিল, তখন এই বিরোধীরা অস্থির হয়ে পড়েছিল যে তাদের মেয়েরা ‘মোদী-মোদী’ বলছে। ওরা মুসলিম বোনদের প্রতারণা করেছে’।’ তিনি ভোটারদের রাজ্যে বিজেপি সরকারকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার আবেদন করেছেন।
কর্ণাটকের উপকূলীয় শহর উদুপিতে একটি সরকারী প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ছয়জন মুসলিম মেয়েকে হিজাব পরে ক্লাসে যেতে বাধা দেওয়া হয়। জানানো হয় ওই কলেজের নিয়ম অনুসারে পয়লা জানুয়ারি থেকে হিজাব পরে কলেজে আসা নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। এরপরেই প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়। হিন্দু কলেজের ছাত্ররা জাফরান স্কার্ফ পরে এবং জাফরান পতাকা নেড়ে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। তাদের দাবি হিজাব পরে কলেজে যেতে পারলে, তাদের ধর্মীয় পোশাক এবং প্রতীক প্রদর্শনের অনুমতিও কলেজে দেওয়া হোক।
এদিকে হিজাব ইস্যুতে উত্তাল কর্ণাটক সহ গোটা দেশ। এই ইস্যুতে শুনানি চেয়ে ও হস্তক্ষেপ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী কপিল সিব্বাল। তিনি অনুরোধ করেন এই সমস্যা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের অবিলম্বে এই ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করা উচিত। এরপরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রমানা জানান বিষয়টি ভেবে দখবেন তাঁরা। কর্ণাটকের একজন কলেজ ছাত্রী ফাতিমা বুশরা সুপ্রিম কোর্টে দায়ের আবেদনটি দায়ের করেন। সেই আবেদনই উত্থাপন করেছিলেন কপিল সিব্বাল। ফাতিমা আবেদনে বলেন হিজাবের উপর বিধিনিষেধের কারণে তার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন বিষয়টি হাইকোর্ট শুনুক। আজ তিন বিচারপতির বেঞ্চে তা তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে সিব্বাল জানান পরীক্ষা আর দুই মাস বাকি। তার আগেই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। প্রধান বিচারপতি জবাবে বলেন, এই পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হঠকারিতা হবে। হাইকোর্ট কোন পথে এগোচ্ছে দেখে নিয়ে তারপরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কারণ যদি বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের তালিকাভুক্ত হয়, তাহলে হাইকোর্ট বিষয়টি শুনবে না।