কলকাতা ব্যুরো : হাইকোর্টের নির্দেশের পর এ রাজ্যে হাতির মৃত্যু ঠেকাতে বিদ্যুৎ পরিবাহি তারে কম পাওয়ার ব্যবহারের পরিকল্পনা করলো রাজ্য সরকার। রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তর ও বনদপ্তর প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মূলত ডুয়ার্স এবং এ রাজ্যের জঙ্গলমহল ও লাগোয়া এলাকাগুলিতে, বিদ্যুতের তারে হাতির মৃত্যু যাতে না ঘটে, প্রথমে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ করার। সেই হিসেবে উঠে এসেছে হাতির হানা রুখতে যে বিদ্যুৎ পরিবাহী তার ব্যবহার করা হয়, সেগুলোতে জোরালো বিদ্যুতের ব্যবহার করা হবে না। সে ক্ষেত্রে হাতি ওই তারের ছোঁয়া লাগলেও সতর্ক হয়ে যাবে, কিন্তু জীবন সংশয় হবে না।
রাজ্য বনবিভাগের হিসেব বলছে, ২০১৫ সাল থেকে পাঁচ বছরে এ রাজ্যে ৪৭ টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে পঁচিশটি ডুয়ার্সের জঙ্গলের। বাকি গুলি দক্ষিণবঙ্গে। হা তি মৃত্যুর ক্ষেত্রে ডুয়ার্সের রেলপথ একটা বড় কারণ। কিন্তু তার থেকেও বেশি হাতি মারা যায় বিদ্যুতের ছোঁয়ায়। গ্রামবাসীরা তাদের ফসল রক্ষা করতে অথবা চা বাগানগুলোর শ্রমিকদের বস্তির চারপাশে রাতের বেলায় বিদ্যুতের তারের সংযোগ দেওয়া থাকে। কারণ হাতির দল এসে হঠাৎ করে হামলা চালাতে গেলে ওইসব তারের ছোঁয়ায় হাতির মৃত্যু হয়।
লকডাউন এর মধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি একটি সুয়োমোটো মামলা চালু করেন। আদালতের বক্তব্য, এ রাজ্যে হাতি, বাইসান সহ অন্যান্য জীবজন্তু বহু ক্ষেত্রে মারা যাচ্ছে মানুষের গাফিলতিতে। কিছু ক্ষেত্রে রেল লাইনে কাটা পড়া আবার বিদ্যুৎ পিষ্ট হওয়া ছাড়াও চোরা শিকারীদের হানায় এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বেশকিছুদিন শুনানির পর হাইকোর্ট সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়, এই সমস্ত জীবজন্তুর নিরাপত্তায় পরিকল্পনা তৈরি করতে।
বন দপ্তরের আধিকারিকরা এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই একাধিক বৈঠক করেছেন। একদিকে নর্থ ফ্রন্টাইর রেলের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি বিদ্যুৎ দপ্তরের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে বনদপ্তরের। আরো বেশকিছু পরিকল্পনার সঙ্গেই আপাতত লো ভোল্টেজ বিদ্যুতের তার যাতে ব্যবহার করা হয়, তা নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে জঙ্গলের মধ্যে বা বহু জায়গায় গ্রামের মধ্যে যেসব বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে, তাতে শর্ট সার্কিটের ফলে সেখানে এসে হাতি গা ঘষলে তাতেও বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা যায়। সেই সমস্যা ঠেকাতে এবার থেকে বিদ্যুতের পোলের গায় প্লাস্টিক জাতীয় চাদরে মুড়ে দেওয়ার ভাবনা চিন্তা করা হয়েছে। যাতে কোনভাবে শর্টসার্কিট হয়ে গেলেও, তাতে গায়ে লাগলেও হাতির মৃত্যু না হয়। মূলত বর্ষাকালে অনেক সময় এমনভাবে বিদ্যুতের খুঁটিতে শর্টসার্কিট হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে।