কলকাতা ব্যুরো: বাজি জ্বালানো নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দুই আদালতে আইনের ধুন্ধুমার লড়াই চলেছে। আর কালীপুজোর রাতে যত গড়িয়েছে ততোই বেআইনি বাজির দাপট বেড়েছে। সন্ধ্যার পর থেকেই কলকাতা থেকে জেলা সর্বোচ্চ একটিই ছবি। আদালতে আইনি লড়াই শুরু হয়েছিল মূলত সবুজ বাজি জ্বালানো যাবে কিনা তা নিয়ে। অথচ কালীপুজোর রাতে সবুজের দেখা না পাওয়া গেলেও দেদার ফটলো চকলেট, সেল বোম সহ অন্যান্য বাজি। যা অন্তত তিন বছর আগে সুপ্রিম কোর্ট ও পরিবেশ আদালতের নির্দেশে নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে গোটা দেশে।


কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত আটটা পর্যন্ত ২১৯ কেজি বেআইনি শব্দ বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বেআইনি বাজি ব্যবসা ও জ্বালানোর অভিযোগে ৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু রাত পর্যন্ত শব্দদ্বৈতের দাপটে ঘুম ছুটেছে সাধারণ নাগরিকদের। গত কয়েকদিন ধরেই রাজ্য পুলিশ এবং কলকাতা পুলিশ তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে গিয়েছে বাজি ধরা নিয়ে। কিন্তু এদিন রাতে যেভাবে বাজি ফেটেছে, তাতে এত বাজি কোথা থেকে এল, প্রশ্ন উঠেছে তাই নিয়ে।
আর সেই পরিপ্রেক্ষিতেই প্রথম কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ডিভিশন বেঞ্চের দেওয়া রায় কেন বহাল থাকল না, তা নিয়ে আফসোস জুড়েছেন পরিবেশকর্মী থেকে সাধারণমানুষ। তারা মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্ট অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে এরাজ্যে ও সবুজ বাজি জ্বালানোর নির্দেশ দিলেও, আসলে সেই নির্দেশের চূড়ান্ত অপব্যবহার হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট তার রায় বলেছিল, যেহেতু এ রাজ্যে শুধু সবুজ বাজি জ্বলবে তা নিশ্চিত করার কোনো পরিকাঠামো নেই, তাই করোনা আবহে এবার সব বাজি ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকা উচিত।


কিন্তু সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে বাজি ব্যবসায়ীরা শীর্ষ আদালতে গেলে, সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায় খারিজ করে দেয়। আর বাস্তব অবস্থা, কালীপুজোর রাতে শব্দ দানবের উৎপাতে অতিষ্ঠ হতে হলো নাগরিকদের। ফলে আইন-আদালত আর ভারসাম্য বজায় রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও, বাস্তবে দুর্ভোগ পোহাতে হল সাধারণ মানুষকেই।
কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে একদিকে যাদবপুর গড়িয়া অন্যদিকে বেলেঘাটা বা বরানগর, এমনকি জেলার প্রায় প্রতিটি এলাকা থেকেই, রাত যত বেড়েছে, ততই শব্দ বাজি ফাটানোর খবর এসেছে। এই অবস্থায় ফের আগামী বছর এই বাজি নিয়ে নতুন মামলার অপেক্ষা করছেন নাগরিকরা। তাদের মতে, সারাবছর চুপচাপ থাকার পর মামলাকারীরাও একেবারে শেষ মুহূর্তে আদালতে যান। তার ফলে একটা জোড়াতালি দিয়ে পথ বের হয়। প্রতিবছর এমনটাই চলছে। ফলে নুঙ্গি বা চামপাহাটির বাজি ব্যাবসার দুঃখ দূর করতে কিছু মানুষের এই বেয়াইনি বাজি জ্বালানো আদবে পরিবেশের ক্ষতিই ভবিতব্য হয়ে উঠেছে এ রাজ্যে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version