শেন ওয়ার্ন ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ৩৫০ তম টেস্ট ক্রিকেটার। প্রথম টেস্ট খেলেন ভারতের বিরুদ্ধে। তবে অভিষেক ম্যাচে মাত্র একটি ইনিংসেই বল করার সু্যোগ পেয়েছিলেন।মাত্র ১ উইকেট পেয়েছিলেন ১৫০ রান দিয়ে। সেই উইকেটটি ছিল ২০৬ রান করা রবি শাস্ত্রীর। অভিষেক ম্যাচে তেমন কিছুই করতে না পারলেও ধীরে ধীরে তিনি তাঁর জাত চিনিয়েছিলেন তারপর সাম্রাজ্য গুছিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাজত্ব করেছিলেন।
শেন ওয়ার্ন বল হাতে যেমন জ্বলে উঠতেন তেমনি লোয়ার অর্ডারে ব্যাট হাতেও দলের প্রয়োজনে অক্সিজেন জোগাতেন। ১৪৫ ম্যাচের ১৯৯ ইনিংসে ৫৪৭০ টি বল মোকাবিলা করে ১৭.৩২ গড়ে তাঁর রানের সংখ্যাটি হল ৩১৫৪ রান। এর মধ্যে ১২ টি অর্ধশত রান, সর্বোচ্চ ৯৯ রানের একটি ইনিংস। ১৯৪ টি ওয়ানডে কেরিয়ারে ১০৭ ম্যাচে ১,৪১৩ বলের সম্মুখীন হয়ে তাঁর সংগ্রহ ১,০১৮ রান। একটি অর্ধশত, সর্বোচ্চ স্কোর ৫৫।
ক্রিকেট দুনিয়ায় শেন ওয়ার্ন ছিলেন এক বর্ণময় চরিত্র। টাকার বিনিময়ে জুয়াড়িকে পিচ নিয়ে খবর দেওয়া, বিবাহ বহির্ভূত অবাধ যৌনতা, যৌন কেলেঙ্কারি, ডোপিং তার জন্য সাময়িক নির্বাসন সবই ঘটেছে তাঁর জীবনে। ওয়ার্নের বর্ণময় জীবনে এসেছে অসংখ্য নারী। এর জন্য তাকে মাশুল দিতে হয়েছে। স্ত্রী সিমোন ক্যালাহান তিন সন্তান নিয়ে আলাদা হয়ে গিয়েছেন। ব্রিটিশ একজন নারীকে অশালীন বার্তা পাঠিয়ে ২০০০ সালে হারিয়েছিলেন সহ-অধিনায়কের পদ।
ধূমপান করতে ভীষণ পছন্দ করতেন। কিন্তু নিকোরেট নামে একটি কোম্পানির সঙ্গে ধূমপান না করার শর্তে বড় অঙ্কের একটি চুক্তি করেন। এর কিছু দিন পর নিউ জিল্যান্ড সফরের সময় একটি ছবিতে দেখা যায়, চুক্তি ভেঙে চুপিচুপি ধূমপান করে যাচ্ছেন তিনি।
সতীর্থ স্টিভ ওয়াহ ও রিকি পন্টিংয়ের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়েছেন এমনকি অস্ট্রেলিয়ার সফল কোচ জন বুকাননের সঙ্গেও। তবে ক্রিকেটকেও শেন ওয়ার্ন উজাড় করে দিয়েছেন।
কমেন্ট্রি বক্সে ওয়ার্ন প্রমাণ করেছিলেন যে তিনিই রিচি বেনো, বিল লরির যোগ্য উত্তরসূরী। গলফের পিচেও নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছেন আর কোচ হিসেবেও জাত চিনিয়েছেন। আর সেরা শিক্ষকের মত নতুন সব স্পিনারকে হাতে ধরে বলের গ্রিপ চিনিয়েছেন।
১৬ বছরের ক্রিকেট জীবনে স্পিনের জাদুকর শেন ওয়ার্ন ছুঁয়েছিলেন নানা রেকর্ড :
১. ১৯৯৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম সদস্য।
২. টেস্টে প্রথম ৬০০ উইকেট নেওয়া বোলার।
৩. টেস্টে প্রথম ৭০০ উইকেট নেওয়া বোলার।
৪. অ্যাশেজে মাইক গ্যাটিংকে করা বলটা ‘বল অফ দ্যা সেঞ্চুরি’ হিসেবে স্বীকৃত।
৫. ১৯৯৪ সালে উইজডনের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হওয়া।
৬. ১৯৯৭ সালে জাতীয় পুরষ্কার পান।
৭. ২০০৪ সালে এক বছরে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেন।
অনেক বইলেখা হয়েছে তাঁকে নিয়ে। গবেষণা হয়েছে তাঁর বোলিং নিয়ে। ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত ডেলিভারি-টিও তাঁরই করা। ১৯৯৩ সালে মাইক গ্যাটিং-কে আউট করা সেই ডেলিভারি পরিচিত ‘বল অব দা সেঞ্চুরি’ নামে।
নিষেধাজ্ঞার সময়ে ওয়ার্ন হারিয়ে না গিয়ে ফিরে আসেন আরও সমৃদ্ধ হয়ে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে নেন ২৬ উইকেট। পরের সিরিজে ৯৬ উইকেট নিয়ে গড়েন বিশ্বরেকর্ড। অবসর নেওয়ার পর ধারাভাষ্যে খেলার গভীরে গিয়ে ব্যাখ্যা করতেন বিভিন্ন টেকনিক্যাল ব্যাপার। একই সঙ্গে মাঝে মধ্যে করতেন বিস্ফোরক মন্তব্যও।