কলকাতা ব্যুরো: দুর্যোগের আশঙ্কায় অসহায় শহরবাসী ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুত কলকাতা পুরসভা ও শহরের পুলিশ প্রশাসন ৷ লালবাজার সূত্রে খবর, আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস মাথায় রেখেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি সেরে রেখেছে কলকাতা পুরসভা ও পুলিশ ৷ ইতিমধ্যেই নগরপাল সৌমেন মিত্রের সঙ্গে জরুরি বৈঠক সেরে ফেলেছেন সংশ্লিষ্ট ন’টি বিভাগের ডেপুটি কমিশনাররা।
হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহান্তে এবং আগামী সপ্তাহের শুরুতেই যদি প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়, তাহলে কীভাবে তা সামাল দেওয়া হবে, তা নিয়েই বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। এদিকে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরের তৈরি হওয়া নিম্নচাপ ইতিমধ্যেই গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে ৷ আবহাওয়াবিদদের হিসাব বলছে, রবিবার সন্ধ্যায় তা ওড়িশা উপকূলে পৌঁছে যাবে ৷ গোপালপুর ও বিশাখাপত্তনমের মধ্যবর্তী কলিঙ্গপত্তনম দিয়ে ঢুকবে স্থলভাগে ৷

অন্যদিকে, রবিবার থেকে সোমবারের মধ্যে আরও একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ার কথা রয়েছে পূর্ব-মধ্য ও উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ৷ এটি ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলে আসবে ৷ আর এই জোড়া ফলার প্রকোপেই ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি নামবে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জেলায় ৷ সমস্যা হল, ইদানীংকালে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা মারাত্মক বেড়েছে ৷
ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এর জন্য দায়ী মানুষই ৷ প্রকৃতির উপর লাগাতার অত্যাচারেরই খেসারত দিতে হচ্ছে মানুষকে ৷ কলকাতা তথা গোটা রাজ্যেও বৃষ্টির পরিমাণ বেড়েছে অনেকটাই ৷ প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহেই নিয়ম করে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে ৷ সবথেকে দুর্ভোগের বিষয় হল, বৃষ্টিতে জল জমছে এবং সেই জল লাগাতার কয়েক দিন জমে থাকছে ৷ এর জন্য শহরের বেহাল নিকাশি ব্যবস্থাকেই দুষছে আমজনতা ৷ বাড়ছে ক্ষোভ ৷ জমা জলে দুর্ভোগের পাশাপাশি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনাও বাড়ছে ৷ তাতে মুখ পুড়ছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ৷ এমনকী, এখনও কলকাতার বহু এলাকা থেকে বৃষ্টির জমা জল নামেনি ৷

এই অবস্থায় ফের যদি ভারী বৃষ্টি শুরু হয়, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে উঠবে বলেই আশঙ্কা শহরবাসীর ৷ সমস্যা যে গভীর, তা প্রশাসনও বিলক্ষণ বুঝছে ৷ আর সেই কারণেই এত তৎপরতা ৷ লালবাজারের সূত্র বলছে, নগরপালের সঙ্গে বৈঠকে কলকাতা পুলিশের কমব্যাট ফোর্সের প্রতিনিধিরাও ছিলেন ৷ দুর্যোগের সময় মানুষের কাছে যাতে দ্রুত সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়া যায়, তার জন্য কলকাতা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে খোলা হয়েছে বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর। পাশাপাশি ২২ টি বিশেষ ইউনিটকে প্রস্তুত রেখেছে লালবাজার ৷ বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন নগরপাল৷ তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলে এই বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবেন পুলিশের কর্মী ও আধিকারিকরা।

জমা জলে রাস্তায় গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলে উদ্ধারকাজে সমস্যা তৈরি হয় ৷ তাই আপাতত শহরের রাস্তায় অযথা গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ৷ এছাড়া, শহরের ২৫ টি ট্র্যাফিক কিয়ক্সের ওসি-দের রাস্তায় থাকতে বলা হয়েছে ৷ জমা জলের জন্য যাতে যানজট না হয়, তার জন্য বৃষ্টির দিনগুলিতে রাস্তায় অতিরিক্ত সার্জেন্ট নামানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷

পাশাপাশি, লালবাজারের কন্ট্রোল রুমকে কলকাতা পুরনিগমের আধিকারিকদের সঙ্গেও ২৪ ঘণ্টা সমন্বয় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ এর পাশাপাশি সিইএসসি-র আধিকারিকদের সঙ্গেও আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন লালবাজারের কর্তারা ৷ বৃষ্টির জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঠেকাতে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী এই বেসরকারি সংস্থাকে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ৷