কলকাতা ব্যুরো: তিন বছর আগে ক্লাবকে অনুদান দেওয়া নিয়ে যে যে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্ট এই টাকা দেওয়ায় স্থগিতাদেশ দিয়েছিল, বৃহস্পতিবার প্রায় একই রকমের প্রশ্ন তুলল হাইকোর্ট। এবার আবার সরকার ৫০ হাজার টাকা করে ক্লাবগুলোকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এর ডিভিশন বেঞ্চে এই টাকা দেওয়া নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় সরকারকে। সরকারের তরফে মামলায় যোগ দেওয়া এডভোকেট জেনারেলকে প্রায় প্রশ্নমালা য় ভরিয়ে দেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্য সরকার হাইকোর্টে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৯৫% ক্লাবকে ওই টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, এর আইনি বৈধতা কতটা আছে তা নিয়ে বিচার করবে আদালত। তার আগে আরো জানতে চায়, পুজোর অনুমতিতে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কিভাবে সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষের ভিড় সামলাতে পুলিশ? হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, দুর্গাপূজার সময় ভিড় সামলে পুলিশের উপরে তাদের ভরসা নেই। তবে রাজ্যের উপরে এখনো কিছুটা ভরসা আছে। তাই ভিড় সামলাতে ব্লু প্রিন্ট তৈরি করে তা আদালতকে দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
টাকা দেওয়া নিয়ে কি কি প্রশ্ন তুলল হাইকোর্ট দেখে নেওয়া যাক তা একবার-
১) অনুদান কি শুধু দূর্গাপূজাতেই দেয় সরকার ? নাকি অন্য উৎসবেও দেওয়া হয় ? ঈদেও কি দেওয়া হয়েছিল ? দূর্গাপূজা নিয়ে আমরাও গর্বিত, কিন্তু তাই বলে কি যেভাবে ইচ্ছা টাকা দেওয়া যায় ? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কি এই ভেদাভেদ করা যায় ?
২) আপনারা বলছেন যে এই টাকা দেওয়া হচ্ছে মাস্ক- স্যানিটাইজার কেনার জন্য। এটা তো সরকার নিজেই কেন্দ্রীয়ভাবে কিনে করতে পারত। তাতে খরচ কম হতো।
৩) যেখানে সংক্রমণের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ, সেখানে পুজোর অনুমতি কিভাবে দিলেন ?
৪) কি কি সুরক্ষা বিধি মেনে চলছেন আপনারা ?
৫) ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্লু-প্রিন্ট কি ?
৬) সব কাজ পুলিশ করলে ক্লাবকে টাকা দেওয়ার কি যুক্তি ? ” – মন্তব্য বিচারপতি সঞ্জীব ব্যানার্জীর।
২০১৮ সালেও সরকার রাজ্যের ক্লাবগুলোকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করলে মামলা হয় হাইকোর্টে। সেই মামলাতে রাজ্য সরকার পরে জানায় সেভ ড্রাইভ সেফ লাইফ প্রকল্পে ওই টাকা দেওয়া হচ্ছে। যদিও আদালত সেই যুক্তিতে সন্তুষ্ট না হয়ে টাকা দেওয়ায় স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সেখানেই আদালত পুলিশের মাধ্যমে সেই টাকা দেওয়ার অনুমতি দিলেও মামলা এখনো ঝুলে রয়েছে শীর্ষ আদালতের কাছে। আর এবার গতবারের প্রসঙ্গ তুলে হাইকোর্টের রাজ্য সরকারকে খোঁচা, এমনভাবে টাকা দিলে রাজনৈতিক ফায়দা হয় বৈকি। তারপরেই আদালতে প্রশ্ন, হাইকোর্ট পরিকাঠামোগত কাজের জন্য টাকা চাইলে তো পাওয়া যায় না।
এই মামলা হয়েছিল যেমন টাকা দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে, তেমন আরো একটি মামলা শুক্রবার ওঠার কথা বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এর ডিভিশন বেঞ্চে। যেখানে পুজোর অনুমতি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। একইসঙ্গে বারোয়ারি পুজো বন্ধের দাবি তোলা হয়েছে ওই মামলায়। ফলে এদিন স্বতপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্টে যেভাবে পুজোর অনুমতি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এদিন, যেভাবে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পুজোর অনুমতি দেওয়া নিয়ে হাইকোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, সেখানে ওই মামলাটি শুনানির জন্য এলে তখন আদালতের অবস্থান কি হয় তা নিয়েই সন্দিহান আইনজীবীরা।
আবার এদিনের মামলাটি ফের শুক্রবার শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। তার আগে রাজ্য সরকারের এডভোকেট জেনারেল এবং মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যকে বৈঠক করে ভিড় সামাল দেওয়ার ব্লু প্রিন্ট সম্পর্কে আলোচনা করে মত বিনিময় করতে বলেছে আদালত।