কলকাতা ব্যুরো: উৎসবের মেজাজে শুরু ভোটগ্রহণ। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকেছে গোটা শহর। শীতের আমেজ গায়ে মেখে সকাল সকাল ভোট উৎসবে মেতেছেন কলকাতাবাসী। নজরদারি চালাতে ড্রোন ব্যবহার করছে কলকাতা পুলিশ। ১৪৪ ওয়ার্ডে মোট বুথ সংখ্যা ৪ হাজার ৯৫৯টি। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৬৭০। এর মধ্যে উত্তেজনাপ্রবণ বুথ ১,১৩৯। পুরভোটে নিরাপত্তার দায়িত্ব কলকাতা পুলিশ। থাকছে সাড়ে ২৩ হাজার পুলিশ কর্মী। প্রতি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে একজন সাব ইন্সপেক্টর বা অ্যাসিট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টরের নেতৃত্ব ২-৪ জন সশস্ত্র পুলিশ কর্মী মোতায়েন। থাকছেন লাঠিধারীরাও।

এদিন সকালে ভোট শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজাবাজার সংলগ্ন টাকি বয়েজ স্কুলের বুথে উত্তেজনার অভিযোগ আসে। কংগ্রেস প্রার্থী নন্দন ঘোষের দাবি, তাঁর পোলিং এজেন্টদের মারধর করা হয়েছে। আঘাত লেগেছে মাথা ও হাতে। এর পিছনে রাজ্যের শাসকদলের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন ওই কংগ্রেস প্রার্থী। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের দাবি, শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। জিততে পারবে না জেনেই বিরোধীরা এ ধরনের অভিযোগ আনছে। এদিকে বুথের সামনে জমায়েত হয়েছিল। পুলিশ দ্রুত সেই জমায়েত সরিয়ে দেয়। 

এছাড়াও, গড়িয়ার ব্রিজি এলাকার ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের ১৭-২৫ নম্বর বুথে বাম এজেন্টদের বসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বামেদের দাবি, বুথ থেকে এজেন্টদের বের করে দিয়েছে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। যদিও ঘাসফুল শিবিরের দাবি বিরোধীদের কোনও সংগঠন নেই। তাই তারা এজেন্ট দিতে পারছেন না। উলটে শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে।

তবে এদিন একাধিক বুথে সিসিটিভি অকেজো করার অভিযোগ উঠছে। কোথাও কোথাও সাদা কাগজ দিয়ে সিসিটিভি ঢেকে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। অভিযোগ, টাকি বয়েজ স্কুল, গড়াগাছা, বেলেঘাটা এবং বেনিয়াটোলা এলাকার একাধিক বুথে এধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। আবার ৮১ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী অনিন্দিতা পাল অভিযোগ করেছেন, ওয়ার্ডের একাধিক বুথে বসানোই হয়নি সিসিটিভি। তবে এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি পুলিশের।

পাশাপাশি ৭ নম্বর ওয়ার্ড বাগবাজারের শ্রীরামকৃষ্ণ হোমে নির্দল প্রার্থীর এজেন্টকে বুথে বসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ। এছাড়াও ২ নম্বর ওয়ার্ড সিঁথির রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দির বুথে বিজেপি এজেন্টকে বসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূলের দাবি, সংগঠন নেই বিজেপির। তাই মিথ্যা অভিযোগ করছে গেরুয়া শিবির।

খবর পাওয়া গিয়েছে, ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সজল ঘোষের নির্বাচনী কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। অভিযোগ, তাঁর অফিসে অবৈধ জমায়েত হচ্ছিল। এমনকী, নির্বাচনীবিধি ভেঙে দলীয় প্রতীক দেখা যাচ্ছিল বিজেপির কার্যালয়ে। 

রবিবার ফের উত্তেজনা ছড়ায় ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে। তৃণমূল ও কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি বেঁধে যায়। অভিযোগ, ভুয়ো ভোটার কার্ড নিয়ে ভোট দিতে এসেছিল কয়েকজন। তাদের দেখেই তেড়ে যান কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ।

এদিন ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী মিনাদেবী পুরোহিতের পোশাক ছিড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এদিন সকাল পৌনে ন’টা নাগাদ মিনাদেবী পুরোহিত ও দুই নির্দল প্রার্থী বুথে ঢুকেছিলেন। সেই সময় তাঁরা আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। পুলিশ কোনও কাজ করছে না বলেও অভিযোগ তাঁদের। ইতিমধ্যেই ঘটনার রিপোর্ট তলব করেছে নির্বাচন কমিশন।

৩০ নম্বর ওয়ার্ডের ফুলবাগান এলাকায় বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে তৃণমূলের ব্যানার, ফ্লেক্স। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীর অভিযোগ, ভোটারদের ভয় দেখাতেই বোমাবাজি করা হচ্ছে। বোমাবাজির প্রমাণ নেই, দাবি পুলিশের। 

এছাড়া মানিকতলায় বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ। তৃণমূলের দাবি, ভোটারদের বিরিয়ানি খাইয়ে ভোট কিনতে চাইছে বিজেপি। বেসরকারি হাসপাতালের ছাদে বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে। যদিও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতালের কর্মীদের জন্যই বিরিয়ানি রান্না হচ্ছিল।  

৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে খান্না হাই স্কুলের সামনে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। 

২২ নম্বর ওয়ার্ডে বহিরাগতদের বুথে ঢোকার চেষ্টার অভিযোগ। তৃণমূল-বিজেপি অশান্তি ঘিরে এলাকায় উত্তেজনা।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version