কলকাতা ব্যুরো: চলতি সপ্তাহের ১৯ ডিসেম্বর কলকাতায় পুরভোট। জোরকদমে প্রচার করছেন ডান-বাম সব পক্ষের প্রার্থীরা। সোমবার তেমনই ছবি সামনে এলো। হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। তাই শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা তুঙ্গে। সোমবার কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচার সারতে দেখা গেলো প্রার্থীদের।
সোমবার সকালে কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের অন্তর্গত বেহালা ১২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি মনোনীত প্রার্থী নবনীতা ভট্টাচার্যকে ডোর টু ডোর প্রচার করতে দেখা যায়। তিনি এদিন এলাকার স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে জনসংযোগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের অভাব-অভিযোগের কথা শুনলেন। নবনীতা ভট্টাচার্য জানান এই এলাকার বহু মানুষের অভিযোগ পানীয় জল। এছাড়া নিকাশি ব্যবস্থা ও অল্প বৃষ্টিতেই জল জমার সমস্যা রয়েছে । এরপরই তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যদি জিতে আসেন তাহলে এই ওয়ার্ডের উন্নয়ন করবেন।
অন্যদিকে কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী স্বপন সমাদ্দারের সমর্থনে এদিন প্রচারে সামিল হন রাজ্যের পরিবহণ ও আবাসন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ট্যাংরা এলাকায় প্রচার চালান তাঁরা। পায়ে হেঁটেই চলে জনসংযোগ। ফিরহাদ হাকিম জানান, তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে আগামী দিনে মানুষের সমর্থন থাকবে কিনা সেটা সময়ই বলবে। তবে ২০২৪-এ বিজেপি কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকবে কিনা সেটা দেশের মানুষ ঠিক করে ফেলেছে। ওরা আগে নিজেদের ঘর সামলাক।
ফিরহাদ আরও বলেন, ত্রিপুরাতে তৃণমূল কংগ্রেসকে রুখতে ওরা কি কি করেছে তা দেশের মানুষ দেখেছেন, জানেন। বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেসের সমস্ত কিছুতেই রাজনীতি দেখে ভুলত্রুটি ধরে। অথচ যখন বিজেপির কেউ মাদকদ্রব্য নিয়ে ধরা পড়ে সেটা নিয়ে ওদের কোন মন্তব্য থাকে না। আগামী দিনে এরা যে বিজেপি বলে আর কিছুই থাকবে না। শুধুমাত্র দিলীপ ঘোষই একা পড়ে থাকবেন পদ্ম শিবিরে। পাশাপাশি ফিরহাদ জানান, বিজেপি বাস্তববাদী হয়ে রাজনীতি না করে অনুমানের ভিত্তিতে রাজনীতি করে, এটার জন্যই ওরা আগামী দিনে আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
প্রসঙ্গত, স্বপন সমাদ্দার কলকাতা পুরসভার দীর্ঘদিনের মেয়র পারিষদ। বাম জমানায় তৎকালীন মেয়র প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে স্বপন সমাদ্দার কলকাতা পৌরসভার মেয়র পারিষদ হন। এদিন ফিরহাদ হাকিম জানান, এলাকার মানুষ ওকে ভীষণ ভালোবাসে। যখন যে কোনও বিপদ-আপদ ও প্রয়োজনে স্বপনকে এলাকার মানুষ কাছে পায়, ওর উপর মানুষের ভরসা আছে। ওর জয় একপ্রকার নিশ্চিত এটা বলাই যায়।
অন্যদিকে কলকাতা পুরভোটের সময়ই তিন দিন সিঙ্গুরে বিজেপির পক্ষ থেকে ধরনা কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে এদিন সাংবাদিকরা ফিরহাদ হাকিমকে প্রশ্নক্রলে তিনি বলেন, এটা আসলে কন্সেন্ট্রেশন ডাইভার্ট করার প্রচেষ্টা মাত্র। পুরভোট হওয়ার আগেই ওরা হেরে বসে আছে এটা ওরা বিলক্ষণ বুঝেছে। তাই বাহানা করে ওরা সিঙ্গুরের আন্দোলন কে ফোকাসে আনতে চাইছে। সিঙ্গুরে অনেকদিন ধরেই ওরা চেষ্টা করছে নিজেদের পায়ের তলার জমি ফিরে পেতে। ওখানে সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম নেতা রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে দলে টেনে বাজিমাত করতে চেয়েছিল। কিন্তু বেচারাম মান্নাই ওখানে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে। সিঙ্গুরের মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে তারা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই বিজেপি যতই চেষ্টা করুক লাভ কিছু হবে না।
তবে শুধু তৃণমূল কংগ্রেস বা বিজেপিই নয়। মঙ্গলবার সকালে ডোর টু ডোর প্রচার সারেন কলকাতা কর্পোরেশনের অন্তর্গত বেহালার ১২১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী আশিস মন্ডল। আশিস মণ্ডল জানান, এই ১২১ নম্বর ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন কোনও কাউন্সিলর ছিল না। তাই এই এলাকায় সন্ত্রাস চলছিল।
পাশাপাশি প্রার্থী আরও জানান, এই ওয়ার্ডেই কাটমানি, সিন্ডিকেট নিয়ে সাধারণ মানুষের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তবে তিনি জিতে এলে এই ওয়ার্ডের শান্তি বজায় থাকবে ও সিন্ডিকেট রাজ বন্ধ হবে বলে জানান আশিস মণ্ডল।