কলকাতা ব্যুরো: হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী পণ্ডিত বিরজু মহারাজ। রবিবার রাতে আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হন ৮৩ বছরের শিল্পী। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানেই চিকিৎসকরা বিরজু মহারাজকে মৃত ঘোষণা করেন। 

শোনা গিয়েছে, বাড়িতেই ছিলেন বিরজু মহারাজ। নাতিদের সঙ্গে খেলছিলেন তিনি। আচমকা বুকে ব্যথা অনুভব করেন। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সমস্ত কিছু শেষ। শিল্পীর প্রয়াণে শোকাহত নৃত্য জগৎ। সম্প্রতি তাঁর কিডনির অসুখ ধরা পড়েছিল। ডায়ালিসিসও চলছিল বলে জানা গিয়েছে। 

লখনউয়ের বিখ্যাত ‘মহারাজা’ ঘরানায় জন্ম বিরজু মহারাজের। কত্থক নৃত্যের জগতে তাঁর পরিবারের সুনাম বহু দিনের। বাবা অচ্চন মহারাজের কাছেই প্রথম তালিম শুরু বিরজু মহারাজের। পরে কাকা লচ্ছু মহারাজ ও শম্ভু মহারাজের কাছে নাচ শেখেন। শুধু নাচ নয় কণ্ঠসংগীতেও পারদর্শী ছিলেন বিরজু মহারাজ। ভালো তবলাও বাজাতেন। ছবিও অসাধারণ আঁকতেন। 

মাত্র ন’বছর বয়সে বাবাকে হারান বিরজু মহারাজ। নাচকেই নিজের জীবনের লক্ষ্য করে নেন। কলকাতার সঙ্গে নিবিড় যোগ ছিল তাঁর। এই শহরেই নাকি প্রথম দর্শকদের সামনে পারফর্ম করেছিলেন। ১৩ বছর বয়স থেকেই নাচের তালিম দিতে শুরু করেন বিরজু মহারাজ। সেই বয়সেই দিল্লির সংগীত ভারতীতে নাচ শেখাতেন তিনি। পরে দিল্লির ভারতীয় কলা কেন্দ্র এবং কত্থক কেন্দ্রেও শেখাতে শুরু করেন। পরবর্তীকালে নিজের স্কুল ‘কলাশ্রম’ খুলেছিলেন বিরজু মহারাজ।

সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ সিনেমার দু’টি গানের কোরিওগ্রাফি করেছিলেন বিরজু মহারাজ। পরে ২০০২ সালে সঞ্জয় লীলা বনশালি পরিচালিত ‘দেবদাস’ ছবিতে ‘কাহে ছেড়ে মোহে’ গানে মাধুরী দীক্ষিতকে নাচ শিখিয়েছিলেন। পেয়েছিলেন সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার। পদ্ম বিভূষণ সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। প্রিয় ‘পণ্ডিতজি’কে হারিয়ে শোকাহত তাঁর অনুরাগীরা। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কত্থক কিংবদন্তিকে। 

অন্যদিকে রবিবারই সবার চোখের আড়ালে চিরবিদায় নেন নাট্য দুনিয়ার প্রথম সারির অভিনেত্রী শাঁওলি মিত্র। বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি নিজেও মঞ্চদুনিয়ার দিকপাল ব্যক্তিত্ব। রবিবার দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শম্ভু-তৃপ্তি মিত্রের কন্যা। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। রবিবার দুপুরেই সিরিটি মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

শেষ ইচ্ছাপত্রে ‘নাথবতী অনাথবৎ’ কন্যা জানিয়ে গিয়েছিলেন, দাহকার্যের পর তাঁর মৃত্যুর খবর যেন জানানো হয় সবাইকে। তাঁর শেষকৃত্যে হাজির ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যকর্মী এবং রাজনীতিবিদ অর্পিতা ঘোষ। বাবা শম্ভু মিত্রের মতোই মৃত্যুর পরবর্তী নিয়ম বিধি প্রকাশ করে গেলেন তিনি। ফুলের ভারে তাঁর দেহ যেন সেজে না ওঠে এমনই নির্দেশ ছিল তাঁর।

প্রয়াত নাট্যব্যক্তিত্ব শেষ ইচ্ছাপত্রে তাঁর মানস-পুত্র এবং কন্যা সায়ক চক্রবর্তী এবং অর্পিতা ঘোষের উপরেই তাঁর দাহকার্যের ভার দিয়ে গিয়েছিলেন। মহা-সমারোহ বা পুষ্পস্তবকে তাঁর দেহ সাজিয়ে তোলার বিরুদ্ধে ছিলেন শাঁওলি। অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতোই সাদামাঠা ভাবে, সবার অগোচরে চলে যেতে চান তিনি।

প্রয়াত পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ ছবিতে ‘বঙ্গবালা’র চরিত্রে দেখা গিয়েছিল শাঁওলিকে। অভিনয় করেছেন ‘বিতত বীতংস’, ‘ডাকঘর’, ‘পুতুলখেলা’, ‘একটি রাজনৈতিক হত্যা’র মতো একাধিক কালজয়ী নাটকে। অভিনয় সুবাদেই তিনি ২০০৯-এ পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত। এ ছাড়াও সম্মানিত হয়েছেন সঙ্গীত-নাটক অকাদেমি (২০০৩) এবং বঙ্গ-বিভূষণ (২০১২) সম্মানে। ২০১১-য় রবীন্দ্র সার্ধ্বশত জন্মবর্ষ উদযাপন কমিটির চেয়ারপার্সন ছিলেন তিনি।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version