কলকাতা ব্যুরো: সোমবার সন্ধ্যায় রাজ্য নেতৃত্বের থেকে বরখাস্তের চিঠি পাওয়ার পর জানিয়েছিলেন যা বলার মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে বলবেন ৷ কথামতোই এদিন প্রেস ক্লাবে রীতেশ তিওয়ারিকে পাশে বসিয়ে বিস্ফোরক রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার।
মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি ক্ষোভ উগড়ে দিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ৷ জয়প্রকাশ জানালেন, ২০০৯ লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির উত্থান মেনে নিতে পারেনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং রাজ্যের বিজেপির একাংশ ৷ যাঁদের হাত ধরে ১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ভাল ফল হল, তাঁদের সঙ্গেই প্রতারণা করা হল বলে অভিযোগ করেন তিনি ৷ জয়প্রকাশ এদিন অভিযোগের সুরে জানান, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে ৪০ শতাংশ ভোট পাওয়ার পরেও বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্য নেতৃত্বের উপর আস্থা রাখতে পারেনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ৷ পরিবর্তে অন্য দল থেকে লোক ভাঙিয়ে এনে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের কারণেই দলের এই ভরাডুবি ৷ যা দলের নীচুতলার কর্মী, বুথকর্মীদের সঙ্গে প্রতারণার সামিল বলেই মত পদ্মশিবিরের বিক্ষুব্ধ নেতার ৷
তবে এখানেই শেষ নয় ৷ বিক্ষুব্ধ জয়প্রকাশের আরও অভিযোগ, “আব কি বার দোশো পার” স্লোগান দিয়ে বিধানসভায় মুখ থুবড়ে পড়ার পরেও কোনও পর্যালোচনা হল না দলের অন্দরে ৷ তিনি জানান, খারাপ ফল হতেই পারে কিন্তু চাদর চাপা দিয়ে দিলে রোগ সারে না ৷ কিন্তু এক্ষেত্রে সেটাই করা হলো ৷ বুথস্তরের কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে গেলে এগুলো প্রয়োজন ছিল বলেই মত তাঁর ৷
এ বিষয়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বহুবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হয়েছে তাঁদের ৷ দাবি জয়প্রকাশের ৷ পাশাপাশি দলের নবনির্বাচিত সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধেও এদিন তোপ দাগেন জয়প্রকাশ ৷ মাত্র আড়াই বছর আগে রাজনীতিতে আসা সুকান্ত মজুমদারকে কটাক্ষ করে তিনি জানান, দু’বছর খেলেই মেসির দলের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় না ৷
অন্যদিকে বোমা ফাটিয়েছেন রীতেশও। তাঁর বক্তব্য, তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। এ ক্ষেত্রে লড়াইটা যে আদি বিজেপি বনাম নব্য বিজেপি–সেই কথাও স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিলেন তিনি। রীতেশের কথায়, আগে যারা পার্টিকে প্রতিষ্ঠা করেছে, তাদের সরানোর অভিসন্ধি কাজ করছে। যদিও এই ঘটনার সঙ্গে বঙ্গ বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি যুক্ত নন বলেই মনে করছেন বিক্ষুব্ধ নেতা।
পাশাপাশি অমিতাভ চক্রবর্তী (রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক), ও অমিত মালব্যের (বিজেপির আইটি সেলের প্রধান) বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন রীতেশ। তাঁর বক্তব্য, অমিতাভ চক্রবর্তী ও অমিত মালব্য বিজেপিকে যে ধ্বংস করতে চাইছে তার উত্তর বুথ স্তরের বিজেপি কর্মীরা দেবে। এরা তৎকাল বিজেপি। এরা কতদিন থাকবে তার ঠিক নেই। এরা দলের কোনও নেতাই নয়। লড়াই তৃণমূলের বিরুদ্ধে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে হচ্ছে।
এরপরই রীতেশ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, ক্ষমতা থাকলে অমিতাভ চক্রবর্তী আপনার বিল্ডিং থেকে নেমে ৫ জন কর্মীকে নিয়ে পথসভা করে দেখান। এরা সুসময়ে মধু খেতে এসেছে। আমি দেখব ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের সময় এরা কোথায় থাকে?