এক নজরে

রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে বড় কেলেঙ্কারির ইঙ্গিত

By admin

August 27, 2021

কলকাতা ব্যুরো: এ যেনো কেঁচো খুঁড়তে কেউটের হদিশ! টেট পাশ না করেই চাকরি জুটে গিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষকের। সেই ‘ভুল’ ধরা পরতেই চাওয়া হলো টেট পাশের নথি। কিন্তু তা দেবেন কি করে? তার আগেই তো চাকরির ব্যাবস্থা হয়ে গিয়েছে, সরকারি স্কুলের শিক্ষকের। কিন্তু নথি না দেওয়ায় চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো।টেটের না হয় নথি দেননি, তাবলে চাকরি খাওয়া! তিনি হাইকোর্টে মামলা করলেন। ফেরাতে হবে চাকরি। আদালত বললো, দেরিতে হলেও সংসদ ভুল ধরেছে। তাই তাঁর চাকরি ফিরে পাওয়ার কোনো কারণ নেই।ব্যাস। ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়লো বেড়াল। মামলাকারি জানালেন, তিনি একা না কি! এই রকম অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। যাঁদের নথি ছাড়াই শিক্ষকের চাকরি জুটেছে। কি ভাবে? তা অবশ্য খোলসা করেননি তিনি। উল্টে ১২ জনের তালিকা দিয়েছেন আদালতে। তার দাবি, ২০১৬ সালে রাজ্যে যে ৪২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে, সেই তালিকায় এরাও আছেন। কিন্তু এদেরও প্রয়োজনীয় নথি নেই চাকরি পাওয়ার। বেয়াইনি এই নিয়োগের অভিযোগ প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের বিরুদ্ধে। শুধু উত্তর দিনাজপুরের মতো একটি জেলাতেই যদি এমন সংখ্যায় নিয়োগ কেলেঙ্কারির আঁচ পাওয়া যায়, তাহলে এই নিয়ে বিস্তারিত বিচার হলে রাজ্যে কি ফল পাওয়া যাবে, তার ভেবেই এখন প্রমাদ গুনছেন আইনজীবীরা। আর বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলীও বড় কেলেঙ্কারির ইঙ্গিত পেয়ে বৃহত্তর স্বার্থে বিচারের ইস্যু হিসেবে এটিকে জনস্বার্থ মামলা হিসেবে দেখার নির্দেশ দিয়ে তা প্রধান বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

উত্তর দিনাজপুরের স্বদেশ দাস ২০১৬ সালে জেলায় প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে চাকরি পান। এর কিছুদিন পরেই জেলা শিক্ষা সংসদ খেয়াল করে, তার টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র তাদের কাছে নেই। সংসদ জরুরী ভিত্তিতে তাকে ওই নথি জমা দিতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু তিনি সেই নথি জমা দিতে না পারায় তাকে বরখাস্ত করা হয়।সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা করেন তিনি। হাইকোর্ট প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের প্রথমেই নথি না দেখে চাকরি দেওয়ার ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করে। কিন্তু পরে নথি না পেয়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। এর পরেই ওই অভিযুক্ত শিক্ষক ১২ জনের নামের তালিকা আদালতের কাছে দেন। তাতে তার অভিযোগ, এদের কারোর প্রয়োজনীয় নথি না থাকা সত্ত্বেও তারা এখন চাকরি করছেন স্কুল শিক্ষক হিসেবে।বিস্ময়কর এমন অভিযোগ পাওয়ার পর বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি গোটা বিষয়টিকে জনস্বার্থ মামলা হিসেবে দেখার নির্দেশ দিয়ে যাবতীয় নথিপত্র ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট রেজিস্ট্রি বিভাগকে।রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতার অভিযোগ নতুন নয়। এমন বহু নিয়োগ নিয়ে বেয়াইনির অভিযোগে মামলা এখন চলছে হাইকোর্টে। কিন্তু উত্তর দিনাজপুরের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে অভিযোগ সামনে এসেছে তা আগামী দিনে বৃহত্তর কোনও কেলেঙ্কারি সামনে আনবে কিনা তা নিয়েই কৌতুহল তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, ২০১৪ সালে প্রায় ২২ লক্ষ যুবক-যুবতী টেট পরীক্ষায় বসে ছিলেন। তাদের মধ্যে ৪২ হাজার জনকে প্রাথমিকের শিক্ষক হিসেবে ২০১৬ সালে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী স্বদেশ দাসের মত আরো কত নথিবিহীন প্রার্থী কোন ‘অলৌকিক পথে’ চাকরি পেয়েছিলেন, এখন সেই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে।পাশাপাশি সিঙ্গেল বেঞ্চ যেভাবে প্রাথমিক জমা পড়া নথি দেখেই বৃহত্তর আঙিনায় বিচারের জন্য মামলাটি জনস্বার্থের রূপ দিয়েছেন, তাতেও প্রমাদ গুনছেন বহু বর্ষিয়ান শিক্ষক। তারা মনে করছেন, যা তথ্য সামনে এসেছে, তা হিমশৈলের চূড়াটুকু মনে হচ্ছে। যদি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের কড়া হস্তক্ষেপে এই বিচার চলে, তাহলে সারা রাজ্যেই শিক্ষক নিয়োগে এমন যে কত কীর্তি সামনে আসবে তা কে বলতে পারে, মনে করছেন শিক্ষকরাই। আবার একবার চাকরি দেওয়ার পরেও এই বিতর্কিত শিক্ষকের থেকে নথি যাওয়ার পিছনে রাজনৈতিক সমীকরণ কাজ করছে কিনা প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। ফলে একজনকে শাস্তি দিতে গিয়ে শিক্ষা সংসদের নিজের সিদ্ধান্ত বুমেরাং হল কিনা সেই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে হাইকোর্টের অলিন্দে।