কলকাতা ব্যুরো: চারিদিকে কাঁচ দিয়ে ঢাকা, আরামদায়ক সিট! দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনার তুঙ্গে ছিল এই নতুন কোচ। পর্যটনশিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষ, স্টেকহোল্ডার থেকে শুরু করে রেলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পরও এই কোচ শুরুর দিন নিয়ে দড়ি টানাটানি চলছিল। যা নিয়ে স্বভাবতই মুখ ভার হয়ে গিয়েছিল পর্যটক থেকে শুরু করে অন্যান্য পর্যটন ব্যবসায়ীদের। আগামীকাল অর্থাৎ শনিবার থেকেই পথ চলা শুরু করছে এই ভিস্তাডোম ট্যুরিস্ট স্পেশাল ট্রেন। পুজোর আগে এই কোচ চালুর খবর পর্যটনশিল্পে আনন্দের জোয়ার এনে দিয়েছে। তবে শুধুই বাংলা নয়, অসমেও শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে আরও একটি ভিস্তা ট্রেন পরিষেবা। জানা গিয়েছে, গুয়াহাটি থেকে নিউ হাফলং পর্যন্ত চলবে ট্রেন।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি ভাবে কোচের চাকা গড়ানোর আগেই দু’সপ্তাহের টিকিট ‘বুক’ হয়ে গিয়েছে। যা দেখে রেলের আশ্বাস, এখন সপ্তাহে তিন দিন করে হলেও পর্যটন মরসুমে রোজ এই কোচ চালানো যায় কিনা, তা ভেবে দেখা হচ্ছে।
ভিস্তাডোম কোচের বিশেষত্ব হলো এই বিশেষ সুসজ্জিত কামরা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। কামরায় মাথার ওপর খোলা আকাশ। আশপাশও কাচের। এছাড়া ভিস্তাডোমে রয়েছে রিভলভিং চেয়ার। যাতে পর্যটকেরা একদিকে চেয়ারে বসেই অন্যদিকের জানলা দিয়ে বাইরের প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করতে পারবেন। কোচগুলি থেকে পর্যটকরা খোলা আকাশ, পাহাড়, সবুজ বনভূমির ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ দেখতে পারবেন।
আপাতত ট্রেনের টিকিটের দাম হবে ১১৫০ টাকা। প্রাথমিকভাবে, ট্রেনটি সপ্তাহে দুবার, বুধবার এবং শনিবার চলবে। গুয়াহাটি থেকে সকাল ৬.৩৫ এ ছাড়বে। হাফলঙে পৌঁছবে ১১.৫৫ মিনিটে। মাঝে মান্দারডিসা এবং মাইবং স্টেশনে থামবে। ফিরতি পথে, ট্রেনটি নিউ হাফলং থেকে বিকাল ৫ টায় ছাড়বে এবং রাত ১০.৪৫ -এ গুয়াহাটি পৌঁছাবে।
অন্যদিকে, নিউ জলপাইগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার, সপ্তাহে দুটি ট্রেন যাতায়াত করবে। শুক্র, শনি, রবি, সকাল ৭টা ২০ তে আলিপুরদুয়ারের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে একটি ট্রেন। ওই তিনদিনই দুপুর ২টোয় এনজেপি-এর উদ্দেশ্যে ছাড়বে অপর ট্রেন। প্রতিটি ট্রেনে ৫টি কোচ। তার মধ্যে একটি কোচ ভিস্তাডোম। ট্রেনে মোট ৪৪টি সিট। মাঝে বেশকিছু স্টেশনে এই ট্রেনটির স্টপেজ রয়েছে।
তবে স্টেশনের স্টপেজ নিয়েও কিছুদিন আগেও মনমালিন্য চলছিল। প্রথমে ঠিক করা হয়েছিল, শিলিগুড়ি-আলিপুরদুয়ার রুটে মাদারিহাটে দাঁড়াবে না ট্রেন। কিন্তু মাদারিহাট জলদাপাড়ার গেটওয়ে। বলা চলে ডুয়ার্সের রাজরানী! এনিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে এবং রেল মন্ত্রকের কাছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলি মাদারিহাটে স্টপেজের আর্জি জানায়। অবশেষে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রেল। জানিয়ে দেওয়া হয় মাদারিহাটে দাঁড়াবে ট্রেন।
হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম নেটওয়ার্ক জানায়, মাদারিহাটে ট্রেন না দাঁড়ালে পর্যটকরা জলদাপাড়ার জঙ্গল উপভোগ করতে পারত না। আর সেটা জলদাপাড়ার পক্ষেও খারাপ হত।
পরে রেলের আধিকারিকেরা জানান, চালসা এবং হাসিমারায় এই ট্রেন দাঁড়াবে। ভিস্তাডোম কোচের পাশাপাশি এই ট্রেনে নন এসি চেয়ার কার ও এসি চেয়ার কারও থাকছে। ভিস্তাডোম কোচে থাকছে ৪৪টি সিট। সেই সিটগুলি ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরানো যাবে। সম্পূর্ণ কাঁচের তৈরি এই কোচের ভেতর থেকেই জঙ্গল ও ডুয়ার্সের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। আইআরসিটিসি থেকে করা যাবে আগাম বুকিং, থাকবে খাবার কেনার ব্যবস্থাও।
এছাড়াও পোস্ট, ছবি, ট্যাগ দিয়ে ভরে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। শুধুমাত্র অপেক্ষা শনিবারের। সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন ভ্রমণপ্রেমী, পর্যটন ব্যবসায়ী ও পর্যটনশিল্পের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মানুষ। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের তরফে জানা গিয়েছে, আপাতত সপ্তাহে তিন দিন- শুক্র, শনি ও রবিবার আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে ভিস্তা ডোম ট্রেনটি চলবে। আলিপুরদুয়ার জেলার রাজাভাতখাওয়া, কালচিনি, হাসিমারা, মাদারিহাট, চালসা, সেবক, গুলমা হয়ে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত চলবে এই ট্রেন।
এই ট্রেন চালু হওয়ায় ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসা যেমন জমে উঠবে, তেমনই রেলের আয় বাড়বে বলেও মনে করছেন তিনি। পাহাড়-সহ ডুয়ার্সের বাসিন্দাদের অন্যতম জীবিকা হল পর্যটন ব্যবসা। কিন্তু করোনা মহামারী ও তার জেরে লাগু হওয়া বিধিনিষেধের জেরে গত বছর থেকেই পাহাড়-সহ ডুয়ার্সে পর্যটন ব্যবসা লোকসানে চলছে। ডুয়ার্সে তো পর্যটকদের দেখা নেই বললেই চলে।
অত্যাধুনিক ভিস্তা ডোম ট্রেন চালু হলে ডুয়ার্সে পর্যটকদের ভিড় বাড়বে বলে আশাবাদী সেখানকার পর্যটন ব্যবসায়ীরা। রেলের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, এই ট্রেনটি চালু হওয়ায় ডুয়ার্সে পর্যটকদের ঘোরার একটা নতুন দিগন্ত খুলে গেল।