ভারত ২৫ বছর আগে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে হেরেছিল। রবিবার সেই হারের বদলা নিল রোহিতের ভারত। একই সঙ্গে ইতিহাসে প্রথমবার পরপর দুটি আইসিসি ট্রফি জিতল ভারত। ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল আর এদিন জিতল ২০২৫ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এর আগে পর্যন্ত কখনও সিনিয়র পর্যায়ে ভারতীয় পুরুষ ক্রিকেট দল পরপর দুটি আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়নি। এদফিন সেটাই করে দেখালেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাদেজারা। একইসঙ্গে আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে প্রতিটি মহাদেশের দেশকে হারানোর নজির গড়ে ফেলল ভারত।
যতটা সহজে আজকের ম্যাচটা ভারতের জেতা উচিত ছিল, তা হয়নি। কারণ, নিউ জ়িল্যান্ড লড়াই করল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারল না। অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন হলেন রোহিত শর্মারা। ২৫ বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে হারতে হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারতকে। সেই হারের বদলা নিলেন রোহিতেরা। গত বছর জুন মাসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। ৯ মাসের মধ্যে অধিনায়ক হিসাবে আরও একটি আইসিসি ট্রফি জিতলেন রোহিত। কোচ হিসাবে সফল গৌতম গম্ভীর। নিজের প্রথম আইসিসি ট্রফিতেই দলকে চ্যাম্পিয়ন করলেন তিনি। চলতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে একটি ম্যাচেও টস জিততে পারেনি ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। আজকের ফাইনালেও না। এক দিনের ক্রিকেটে টানা টস হারের নজির গড়লেন ভারত অধিনায়ক। তাতে অবশ্য কোনও সমস্যা হয়নি ভারতের। শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হেসেছেন রোহিত।
রবিবার টসে জিতে নিউজিল্যান্ড প্রথমে ব্যাটিং করে সাত উইকেটে তোলে ২৫১ রান। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের শুরুটা দেখে মনে হয়েছিল যে কিউয়িরা স্বচ্ছন্দেই ৩০০ রান তুলে ফেলবেন। যদিও তা হয়নি কারণ, ভারতীয় স্পিনারদের বোলিঙে প্রবল চাপে পড়ে যান তাঁরা। তখন মনে হয়েছিল যে কিউয়িরা বড়োজোর ২৩০ রানের ইনিংস গড়তে পারবে। এদিন ভারতকে আরও এক বার ম্যাচে ফেরালেন বরুণ চক্রবর্তী। বল করতে এসে শুরুতেই সুযোগ তৈরি করেন তিনি। রাচিন বড় শট মারতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন। বাউন্ডারিতে সেই সুযোগ ফস্কান শ্রেয়স আয়ার। তাতে দমেননি বরুণ। ১৫ রানের মাথায় ইয়ংকে আউট করে নিউ জ়িল্যান্ডকে প্রথম ধাক্কা দেন ভারতীয় স্পিনার। পরে যখন গ্লেন ফিলিপ্স হাত খোলার চেষ্টা করছেন তখন ৩৪ রানের মাথায় তাঁকে বোল্ড করেন বরুণ। ১০ ওভার বল করে ৪৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন তিনি। কিন্তু সাতে নেমে মাইকেল ব্রেসওয়েলের ৪০ বলে অপরাজিত ৫৩ রানের সুবাদে ২৫০ রানের গণ্ডি পার করে যান। কিউয়িদের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৩ রান করেন ডারিল মিচেল। তবে ১০১টি বল খেলেন। ২৯ বলে ৩৭ রান করেন রাচিন। কুলদীপ ১০ ওভারে খরচ করেন ৪০ রান। রবীন্দ্র জাদেজা ১০ ওভারে ৩০ রান দিয়ে এক উইকেট নেন। অক্ষর প্যাটেল কোনও উইকেট না পেলেও আট ওভারে মাত্র ২৯ রান খরচ করেন। তবে ভারতীয় পেসাররা কিছুটা বেশি রান খরচ করে ফেলেন। নয় ওভারে ৭৪ রান দিয়ে এক উইকেট নেন মহম্মদ শামি। হার্দিক পান্ডিয়া তিন ওভারে ৩০ রান খরচ করেন।
পেসারদের কারণে ভারতের লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে গেলেও শুরুটা দুর্দান্ত করেন রোহিত শর্মারা। ট্রেডমার্ক রোহিত স্টাইলে খেলতে থাকেন ভারত অধিনায়ক। শুভমন গিল সেরকম ছন্দে না থাকলেও রোহিত কার্যত একাহাতে ইনিংস টানছিলেন। দু’জনে মিলে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ রান তুলে ফেলেন। অর্ধশতরান পূরণ করে ফেলেন রোহিত। বিনা উইকেটে ১০০ রানের গণ্ডিও পেরিয়ে যায় ভারত। কিন্তু ১৯ তম ওভারে গ্লেন ফিলিপসের অবিশ্বাস্য ক্যাচে খেলার মোড় ঘুরে যায়। গিল যে শটটা মেরেছিলেন, সেটা নিশ্চিত চার ছিল। ফিলিপস সেটাও ক্যাচ ধরে দেন। সেখান থেকেই হোঁচট খেতে শুরু করে টিম ইন্ডিয়া। ১৮.৩ ওভারে ভারতের স্কোর ছিল বিনা উইকেটে ১০৫ রান। সেখানে ২৬.১ ওভারে ১২২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে। এক রানে আউট হয়ে যান বিরাট কোহলি। লাগাতার চাপের মুখে রান না ওঠায় বড় শট মারতে গিয়ে ৭৬ রানে আউট হয়ে যান রোহিত। তারপর রীতিমতো রক্তচাপ বেড়ে যায় ভারতের। শ্রেয়স আইয়ার, অক্ষর প্যাটেলরা ভারতকে টানতে থাকলেও নিউজিল্যান্ড একাধিক সুযোগ তৈরি করে। একটা সময় যে ম্যাচটায় ভারত সহজে জিতবে বলে মনে হচ্ছিল, তাতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শুরু হয়ে যায়। শেষপর্যন্ত ছয় বল বাকি থাকতেই চার উইকেটে ম্যাচ জিতে যায় ভারত।
এই ম্যাচেও ভারতের ফিল্ডিং খারাপ হল। চারটি ক্যাচ পড়ল। মহম্মদ শামি, রোহিত শর্মা, শ্রেয়স আয়ার, শুভমন গিল এদিন ক্যাচ ফেলেন। তার ফলে সুবিধা হয় নিউ জ়িল্যান্ডের। শুধু ক্যাচ ফস্কানো নয়, বাউন্ডারিতে খারাপ ফিল্ডিং করলেন কুলদীপ, শুভমন। ফলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে এক রানের বদলে দু’রান হয়। ভারত যদি ক্যাচগুলি ধরতে পারত তা হলে নিউ জ়িল্যান্ড অনেক কম রানে আটকে যেত। তবে ফাইনালের মতো ম্যাচে এই রকম ক্যাচ ফস্কানোর খেসারত দিতে হয়নি ভারতকে।