এক নজরে

আমেরিকায় পালাবদলে চিন চিন্তা

By admin

November 08, 2020

মৈনাক শর্মা

সমস্ত অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ৪৬ তম মার্কিন রাষ্ট্রপতি হলেন জো বাইডেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয় ও বাইডেনের জয়ে ভারতের ভবিষ্যৎ নিয়ে কৌতূহল লক্ষণীয় ভারতবাসী ও বিশ্ব বাসীর কাছে। কিন্তু সত্যিই কি ট্রাম্পের পরাজয় ও বাইডেনের জয় দিল্লির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ? এক্ষত্রে দ্বিপাক্ষিক মত বিশ্লেষকদের।

বাইডেনের জয়কে ভালো চোখে দেখছে না কূটনৈতিক বিশ্লেষকের একাংশ।.তাদের মতে এই জয়ের প্রভাব দেখা যাবে ভারত- চীন সীমান্ত বিবাদেও। ২০১৩ সালে বাইডেন পুত্র হান্টার বাইডেনের বেজিং আগমনের কিছু দিনের মধ্যেই ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চিনে বিনিয়োগ চুক্তি হয় । এছাড়া ২০১৭ বি এইচ আর নামক চিন বিনিয়োগ কোম্পানির এক সম্মান জনক পদ লাভ করে বাইডেন পুত্র হান্টার বাইডেন। অর্থাৎ বারাক ওবামা সরকারের উপ রাষ্ট্রপতি পদে থাকা জো বাইডেনের চিনা ঘনিষ্টতার প্রমান রয়েছে। বাইডেনের চিন ঘনিষ্টতা বাণিজ্য ও কোয়ার্ডর ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা বাড়াতে পারে দিল্লির।

আমেরিকা প্রধানত ভারতের বাণিজ্যিক মিত্র দেশ। ২০১৮ সালে চিনের সাথে ওয়াসিংটনের বাণিজ্য ক্ষতি কমাতে ট্রাম্প সকরকার চিন থেকে আশা উপকরনের উপর ভারী শুল্কের ঘোষণা করে। চিন ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যিক ঘাটতি প্রায় ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের ফলে চিনের অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিল শিল্পে প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হয়, যা আমেরিকা ও চিনের বাণিজ্য যুদ্ধের রূপ দেয়। ওয়াসিংটন ও বেজিংয়ের বাড়তে থাকা বাণিজ্য দূরত্বে লাভ হয় ভারতের।. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ এ আমেরিকার সাথে বাণিজ্যে ভারতের ৭৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিরিক্ত লাভ হয়। এছাড়া প্রায় ২০৩ টি চিন উপকরণকে স্থানচ্যুতি ঘটায় ভারতীয় উপকরণ। বিশেষ করে কার্পেট, ঔষধীয় ও ইস্পাত দ্রব্য। এর আগে ডেমোক্রেটিক দলের রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার কার্যকালে এত লাভের মুখ দেখেনি ভারত। অর্থাৎ চিন ও আমেরিকার বাণিজ্যিক দূরত্ব লাভের দিক দিল্লির যা সম্ভব হতো ট্রাম্প পুনরায় রাষ্ট্রপতি হলে।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে চিন , রাশিয়া ও ইরানের প্রভাব থাকবে এমনি দাবি করে আমেরিকান ইন্টেলিজেন্স বিভাগের প্রকাশিত হওয়া রিপোর্ট। মার্কিন ন্যাশনাল সেন্টার ইন্টেলিজেন্স বিভাগের প্রধান উইলিয়াম এভনিনার মতে, মার্কিন নির্বাচনে অপ্রত্যক্ষ ভাবে প্রভাব থাকবে এই তিন দেশের। প্রসঙ্গত এই দেশ গুলির উপর অতিরিক্ত পরিমানে ওয়াসিংটনের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করে ট্রাম্প প্রশাসন। বাইডেনের জয়ে এই ব্যবধান কমতে পারে, যা দিল্লির জন্য ফলদায়ক। কারণ রাশিয়ার সাথে ওয়াসিংটনের বিবাদে এস ৪০০ সুরক্ষা মিসাইল চুক্তিতে চাপ সৃষ্টি হচ্ছিলো দিল্লির। এছাড়া আমেরিকার জেনেরালাইজেড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্সেস ( G S P ) বা ডিউটি ফ্রি তালিকা থেকে ট্রাম্প কার্যকালে বাদ পড়া কিছু ভারতীয় উপকরণ আবার সেই তালিকা ভুক্ত হতে পারে বলে মত আরেক অংশের।

তাছাড়া আমেরিকাতে বসববাস করি প্রবাসী ভারতীয়দের মত আদায়ের জন্য জো বাইডেনের তুরুপের তাস ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন উপরাষ্ট্রপতি কমলা হ্যারিসের দিকেও আলোকপাত করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সম্প্রতি ট্রাম্প সরকারের আমেরিকা ফার্স্ট নীতির দ্বারা প্রতিবন্ধকতা জারি করা হয় এইচ ১৬ ভিসার উপর। যার সোজা প্রভাব পরে আমেরিকাতে পড়তে আশা বা বাণ্যিজ্য অথবা চাকুরী করতে আশা প্রবাসী ভারতীয়দের উপর। কমলা হ্যারিসের সূত্র ধরে মার্কিন মুলুকে থাকা প্রবাসী ভারতীয়রা এর ফলে এইচ ১৬ ভিসাতে ছাড় পেতে পারে।

বাণিজ্যিক দিক দিয়ে ট্রাম্পের পরাজয় দিল্লির জন্য ক্ষতি। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে বাইডেনে র জয় ভারতের জন্য আসার দিকও হতে পারে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও আমেরিকাকে নিয়ে গঠিত কোয়ার্ড নিয়ে বাইডেনের নীতি থেকেই বোঝা যাবে দিল্লির ভবিষ্যৎ। অর্থাৎ ট্রাম্পের হার ও বাইডেনের জয়, ভারতের পক্ষে আশা না হতাশা কারণ হবে এই সিদ্ধান্তে আশা এখন উচিত নয়।