কলকাতা ব্যুরো: পরপর দুটো বছর পুরীর রথযাত্রা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেখানেও কলকাতার দূর্গা পূজার মত মানুষের জন্য ঝোলানো রইল নো এন্ট্রি’ বোর্ড। গত শুক্রবারে রাতে মন্দিরের রত্ন সিংহাসনে ফিরে গিয়েছেন ভাই-বোনসহ জগন্নাথ দেব। কিন্তু পুরী মন্দিরের সামনে এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই রথ। যে রথ টানার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ রথযাত্রায় ভিড় জমান পুরীতে। কিন্তু মহামারী আবহে মানুষের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই এবারেও বিধি মেনে টানা হয়েছে রথ। উল্টো রথ শেষে দেবতা মন্দিরে ফিরে যেতেই সামান্য হলেও মানুষের সেখানে পৌঁছানোয় কড়াকড়িতে কিছুটা হালকা দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
শুক্রবার পর্যন্ত পুরীর মন্দিরকে কেন্দ্র করে চতুর্দিকে যে ব্যারিকেড করে পুলিশ মানুষের মন্দির মুখী ভিড় সামলে ছিল, শনিবার তার কয়েকটি গেট খুলে দেওয়া হয় জনতার চলাচলের জন্য। তবে পুরীতে মানুষের আগমন যে জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়ার জন্য, তা এখনো খোলেনি। আদবে কবে খুলবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। পুরী জেলায় করোনা আক্রান্তর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও নির্দিষ্টভাবে পুরীর মন্দিরে লাগোয়া এলাকায় বা এই শহরে সেই প্রভাব তুলনায় কম। কিন্তু প্রশাসন কোন ঝুঁকি নিতে নারাজ। তাই পুরীর মন্দিরকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন ভক্তদের হতাশা, অন্যদিকে সেবায়েত, পান্ডারা দুর্দশায়, মন্দির বন্ধ থাকায়। তারা আশা করছেন, আগস্ট মাসে মন্দির খোলার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হতে পারে। যদিও দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা মন্দির খুললেও বিধির কড়াকড়ি থাকবে বলে নিশ্চিত। তাই মন্দির খুললেও ভিড় কতটা হবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে তাদের।


এতদিন কড়াকড়ির মধ্যেও শুক্রবার রাতে জগন্নাথ দেব তার রথ থেকে মন্দিরে পৌঁছে গেছেন। কিন্তু সেই রথ দেখার জন্য মানুষের উৎসাহের শেষ নেই। আর পুলিশ কিছুটা রাশ হালকা করায় শনিবার সকাল থেকেই মন্দির লাগোয়া ওই তিনটি রথ দেখতে ভিড় জমান বহু মানুষ। তাদের বেশিরভাগই স্থানীয়। আবার অন্যান্য জেলা থেকেও মানুষ এসে ভিড় জমিয়েছেন ওই রথের দড়িকে একটু ছুঁয়ে পূণ্য অর্জনের জন্য।

অধিকাংশই রথের সময় ওই দড়িতে টান দিয়ে পূর্ণ করতে আসেন। কিন্তু মহামারী আবহে গত দু’বছরে তা করা যায়নি। এবার রথ শেষে মন্দিরে জগন্নাথ ফিরে গেলেও, সেই ফাঁকা রথের চাকা বা দড়ি ছুঁয়েই যেন পূণ্য পেতে চাইছেন মানুষ। আর মন্দিরকে কেন্দ্র করে যে সব দোকান খোলা থাকে, চলে ব্যবসা, গত প্রায় একমাস হয়ে গেল সেগুলি পুরোপুরি বন্ধ। ফলে ব্যবসায়ীরাও চাইছেন খুলে যাক মন্দির। তাতে পুণ্যার্থী যেমন আসবে, তেমন ফিরবে তাদের সুদিন।
মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত পান্ডারা বলছেন, পুরীর মন্দিরের সঙ্গে বাঙালির যোগ ওতপ্রোত। পশ্চিমবাংলার পুণ্যার্থীরা পুরীতে সারাবছর ভালো ভিড় জমান। এবার তাদেরও দেখা নেই। কিন্তু বহু বাঙালি পুণ্যার্থী লক ডাউন থাকায় দু বছর ধরে যেতে পারছেন না, পুরীতে। পান্ডারা এই লকডাউন এর মাঝেও কুরিয়ার করে ভোগ পাঠিয়ে, তাদের শোক কিছুটা লাঘব করার চেষ্টা করেছেন।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version