এক নজরে

#ImranKhan: কাপ্তানে “অনাস্থা”, মধ্যরাতে যবনিকা পতন ইমরান সরকারের

By admin

April 10, 2022

কলকাতা ব্যুরো: শেষ বল পর্যন্ত দাঁতে দাঁত চেপে ক্রিজে লড়াই করলেন। স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারের আউটের পর আর বেশিক্ষণ ‘নট আউট’ থাকতে পারলেন না ইমরান খান। পাক অ্যাসেম্বলিতে মধ্যরাতের টানটান ম্যাচের যবনিকা পতন হলো। অনাস্থা ভোটে ইমরান খানের বিরুদ্ধে পড়লো ১৭৪টি ভোট। পতন হলো বহু চর্চিত ইমরান সরকারের। তবে ইতিমধ্যেই হেলিকপ্টার করে ইসলামাবাদ ছেড়েছেন ইমরান। জানা যাচ্ছে, পরবর্তী পাক প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন পাক সংসদের বিরোধী দলনেতা শাহবাজ শরিফ। তবে নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম মনোনীত করতে পাকিস্তানের স্থানীয় সময় অনুযায়ী সোমবার দুপুর ২টোয় ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন ডাকা হতে পারে বলে খবর। আগামীকালই নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা হতে পারে বলে খবর।

তবে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা পেশকে কেন্দ্র করে শনিবার মধ্যরাতে চূড়ান্ত নাটকের সাক্ষী থাকলো গোটা বিশ্ব। প্রতি মুহূর্তে বদলালো ঘটনাক্রম। শেষমেশ দেশের আমলা ও সরকারি আধিকারিকদের দেশ ছাড়ার উপরও জারি করা হলো বিধিনিষেধ! পাক সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই দেশের বিমানবন্দরগুলিতে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, NOC সঙ্গে না থাকলে কোনও সরকারি আধিকারিক বা আমলাই দেশ ছেড়ে যেতে পারবেন না!

উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো শনিবারের মধ্যে অনাস্থা ভোট হওয়ার কথা ছিল। তবে এদিন পাকিস্তানের সময় রাত প্রায় ১১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনাস্থা ভোটের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এরই মধ্যে চরম নাটকীয় ভাবে স্পিকার আসাদ কাইসার এবং ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি পদত্যাগ করেন। এরপর পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির চেয়ার প্যানেলের সদস্য আয়াজ সাদিক স্পিকারের দায়িত্ব সামলান। মধ্যরাতের আগেই তিনি অনাস্থা ভোটের প্রক্রিয়া শুরু করেন। আর ভোট শুরুর মাঝে মধ্যরাতে চার মিনিটের জন্য অধিবেশন মুলতুবি করে রবিবার ফের শুরু হয় নয়া অধিবেশন। এরপর রবিবার ভোর রাতে ১৭৪-০ ভোটের ব্যবধানে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয়। ৩৪৪ আসন বিশিষ্ট পাক অ্যাসেম্বলিতে ম্যাজিক ফিগার ১৭২। এরপরই ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারিত করা হয়। তবে এর আগে ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফের সদস্যরা অ্যাসেম্বলি ত্যাগ করেন।

তবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকটের মাঝেই এদিন মধ্যরাতে দরজা খোলা হয় পাক সুপ্রিম কোর্টের। মধ্যরাতেই আদালতে যান পাক সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। পাক সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী অনাস্থা ভোট না হলে ইমরান খান, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ জারি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে গভীর রাতে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করে আসেন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার। ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাত হয় পাক সেনা প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার। এরপর পাক স্থানীয় সময়ে রাত সাড়ে ১১টায় অ্যাসেম্বলি ভবনে পৌঁছান স্পিকার আসাদ কাইসার। ততক্ষণে পাক অ্যাসেম্বলির বাইরে প্রিজন ভ্যান মোতায়েন করা হয়। এই আবহে ইমরানের চাপের মুখে স্পিকার পদত্যাগ করেন। এদিন পার্লামেন্টে ঢোকার মুখে স্পিকারের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের হাতাহাতি শুরু হয়।

পদত্যাগের মুহূর্তে স্পিকার বলেন, ৩০ বছর ধরে ইমরান খানের সঙ্গে আছি। ছাত্র অবস্থায় পিটিআই-তে যোগ দিয়েছি। কীভাবে ভোটের নির্দেশ দিই! পাশাপাশি তিনি ইমরান খানের ‘ষড়যন্ত্রে’র তত্ত্বের উপর জোর দিয়ে একটি সাদা কাগজ দেখিয়ে দাবি করেন, এতেই প্রমাণ রয়েছে যে ‘বিদেশি শক্তি’ পাক সরকারের পতনের নেপথ্যে রয়েছে।

এদিকে ভোটাভুটি শুরু হতেই প্রথম ভোট দেন পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারি। এরপর একে একে আরও ১৭৩ জন ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি সদস্য অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। এরই মাঝে ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর জন্য বরাদ্দ সরকারি বাসভবন ছেড়ে চলে যান। অ্যাসেম্বলিতে ভোটাভুটির ফল প্রকাশ হতেই শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘পাকিস্তানে নতুন ভোর হতে চলেছে।’ এই অনাস্থা ভোটকে কেন্দ্র করে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আগে থেকেই তৎপর ছিল প্রশাসন। তৈরি রাখা হয় হাসপাতাল থেকে অন্যান্য জরুরি পরিষেবা।