কলকাতা ব্যুরো: শিলিগুড়ি স্টেশন! এখন এখানে এলে বোঝাই দায় যে এককালে দুর্গাপুজো নিয়ে এখানে প্রচুর মাতামাতি হতো, বাজার-দোকান বসতো! রেলওয়ে কমিটির দ্বারা এই পুজো শিলিগুড়ির সর্বপ্রথম দুর্গাপুজো ছিল। বহু প্রাচীন এই স্টেশনে চলতো জোড়া ঢাকের আওয়াজ, কোথাও আবার বাজত কাঁসর। ট্রেনের আওয়াজকে ছাপিয়ে পুজোর কয়েকদিন আগে থেকেই শোনা যেত ঢাকের আওয়াজ। করোনা নামক দস্যুর আগমনের আগে যেন এই টাউন স্টেশনের চিত্রটা এইরকমই থাকত। তবে এখনও ভিড় সামলেই ঢাকিদের মহড়া দেখা যায় স্টেশনে।
এখনও ষষ্ঠী, সপ্তমীতে গেলে দেখা যায় বিভিন্ন ক্লাবের উদ্যোক্তারা ঢাকিদের বায়না দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বায়না নিতে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকিরা জড়ো হন শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনে। পুজো উদ্যোক্তারা স্টেশনে এসে তাঁদের বাজনা দেখে এবং বিচার করে আগাম ঢাকি বুকিং করেন।
মালদা, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ির বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রত্যেক বছর প্রায় দেড়শো এই স্টেশনে আসতেন। পাহাড় থেকে শুরু করে চা বাগান, এই সমস্ত জায়গার জন্য প্রতিমা আসত ট্রেনে করে। ঢাকিরাও বাদ পড়তেন না। তাঁদের বাজনশৈলী দেখে বিচার করে নিয়ে যাওয়া হত। সমগ্র জায়গার পুজো কমিটিগুলি স্টেশন থেকে ঢাকিদের নিয়ে যেতেন।
ঢাকি বুকিং করতে পুজোর সময় ভিড় জমায় সকলেই। তবে এই টাউন স্টেশনের সংরক্ষণে উদ্যোগী শিলিগুড়ি। তবে আগে যেভাবে এই স্টেশনে পুজো হত, সেটা অনেকটা ঝিমিয়ে গিয়েছে। আগে রীতিমত রমরমা কারবার ছিল পুজো ঘিরে। কিন্তু এখন সেই কমিটিও নেই, তেমন উৎসাহও নেই।’
অন্যদিকে চতুর্থীর দিন থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে কলকাতায় আসতে শুরু করেছেন ঢাকিরা। শিয়ালদহ স্টেশনে ভিড় জমছে। ঢাকের বোলে রীতিমত উৎসবের মেজাজ মহানগরের।
গত বছর করোনা-লকডাউনের জেরে ঢাকের ব্যবসায় ভাঁটা ছিল। এবার সেই খরা কাটিয়ে পেটের টানে ফের শহরমুখী হয়েছে ঢাকিরা। তাঁরা জানেন বায়না হলেই মিলবে টাকা। প্রতিবার এই সময়েই ঢাকিরা আসেন কলকাতায়।
একে পঞ্চমী তারওপর রবিবার। প্রতিপদ থেকেই উৎসবের মেজাজে শহর। কোথাও সাবেকীয়ানা, কোথাও থিমের বাহার। কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ, আলো ঝলমলে মণ্ডপে প্রতিমা দর্শন। কোথাও আবার প্রতিমা আনার প্রস্তুতি। চলছে তোড়জোড়। এরই মধ্যে চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটাও।
তবে তৃতীয়ার দিন থেকেই বিভিন্ন মণ্ডপে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন দর্শনার্থীরা। ফলে প্রথম থেকেই সতর্ক পুলিশ প্রশাসন। যানজট ও ভিড় মোকাবিলায় রাস্তায় থাকছে অতিরিক্ত পুলিশ। তবে চিকিৎসকরা সচেতন থাকতে বলছেন, যাতে করোনা আবহে পুজোর উচ্ছ্বাস আরও বড় বিপদ ডেকে না আনে।