এক নজরে

ডেডলাইন, দাবি না মিটলে সর্বাত্মক চিকিৎসক ধর্মঘট  

By admin

October 19, 2024

১০ দফা দাবি নিয়ে আমরণ অনশন করছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়; তারই প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন জুনিয়ার ডাক্তারেরা, তাঁদের সমর্থন জানান সিনিয়ার ডাক্তারেরা এবং সর্বস্তরের মানুষ রয়েছেন সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিবের সঙ্গে জুনিয়ার ডাক্তারদের একাধিক মিটিং হয়েছে, কিন্তু সবগুলির ফলাফলই শূন্য। সরকারের তরফে যেসব মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার কোনোটি এখনও পর্যন্ত কাজে আসেনি। এই আবহে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। রাজ্য সরকারকে ডেডলাইন বেঁধে দিয়ে আগামী সোমবারের মধ্যে দাবিপূরণ না হলে পরেরদিন মঙ্গলবার থেকে সর্বাঙ্গীণ ধর্মঘটের ডাক দিলেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। এই ধর্মঘটের আওতায় থাকবে সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। শুক্রবার সিনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকের পর এই কথা জানান জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস হালদার।

ইতিমধ্যেই আরজি কর হাসপাতালের জন্য কাজ চলছে বলে সরকার জানিয়েছে। সেটা আরও আগে শেষ করতে হবে। আগামী ২৫ অক্টোবর তারিখের মধ্যে রাজ্যের অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ‘রাত্রিরের সাথী’ অথবা নিরাপত্তার কাজ, রেস্টরুমের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। আরজি কর হাসপাতালের কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় ৩১ অক্টোবর তারিখের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে। সেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘‌জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্সদের সংগঠনগুলির কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, একটা সমাবেশ হোক। সেখান থেকে আমাদের চিৎকার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছক। সোমবার অবস্থান বিক্ষোভের কর্মসূচি নিচ্ছি। তবে সোমবার পর্যন্ত সরকারকে সময়সীমা দিচ্ছি। তার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে আমাদের সব দাবি মানার জন্য আলোচনায় বসতে হবে। আশা করি মঙ্গলবার যে কর্মসূচির কথা বলছি তা আমাদের নিতে হবে না।’‌

আন্দোলনের পরবর্তী রূপরেখা স্থির করতে শুক্রবার মেডিক্যাল সিনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। বৈঠকের পর দেবাশিস জানান, শনিবার সোদপুর থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করা হবে। রবিবার ধর্মতলার মঞ্চে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। ওই মহাসমাবেশে জুনিয়র ও সিনিয়র চিকিৎসকদের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রত্যেককে যোগদানের আহ্বান জানানো হয়েছে। সোমবার রাজ্যের প্রত্যেকটি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে অবস্থান বিক্ষোভে শামিল হবেন চিকিৎসকরা। সোমবার পর্যন্ত রাজ্য সরকারকে ডেডলাইন বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে আলোচনায় বসতে হবে। মেনে নিতে হবে দশ দফা দাবি। অন্যথায় মঙ্গলবার সর্বাঙ্গীণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। তাতে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের প্রত্যেক জুনিয়র ও সিনিয়র চিকিৎসকরা শামিল হবেন। তার ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবা থমকে যাবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এদিন কারও প্রাণহানি হলে তার দায় মুখ্যমন্ত্রীকে নিতে হবে বলেই দাবি আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস হালদারের।

ইতিমধ্যেই পরিকাঠামো এবং নিরাপত্তার কাজ কেমন হচ্ছে?‌ কতদূর হয়েছে?‌ এইসব প্রশ্নের উত্তর গতকাল নিজের বাসভবনে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তার জবাব দেন মুখ্যসচিব। তখনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাজের গতি বাড়াতে নির্দেশ দেন। আরজি কর ইস্যুতে ১০ দফা দাবিতে গত ৫ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় আমরণ অনশনে বসেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। অনশনে কর্মসূচি চলছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালেও। শুক্রবার বিকেলে অনশন মঞ্চ থেকে অনশনরত সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, সিগ্ধা হাজরারা প্রশ্ন তোলেন, “মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপুজোয় মেতে আছেন। অথচ গত ১৩ দিন ধরে আমরা শুধু জল খেয়ে আছি। অথচ আমাদের দেখতে উনি এক বারের জন্যেও এলেন না!” তাঁরা এই প্রশ্নও তোলেন,  কোথায় গেল ওঁর মাতৃসত্তা?”

উল্লেখ্য, জুনিয়র ডাক্তাররা প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পাঁচটি দাবি করেছিলেন। যার মধ্যে চারটি সঙ্গে সঙ্গে পূরণ হয় বলে জানানো হচ্ছে। তারপর আবার ১০টি দাবি তোলেন তাঁরা। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন, সাতটি দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। বাকি তিনটির ক্ষেত্রে সময় লাগবে। দেবাশিস হালদারের বক্তব্য, ‘‌এই কর্মসূচির সময় কারও প্রাণহানি হলে তার দায় মুখ্যমন্ত্রীকে নিতে হবে। গত ১৩ দিন ধরে আমাদের সহকর্মীরা অনশন করছেন। মুখ্যমন্ত্রী কার্নিভাল নিয়ে ব্যস্ত। এখন মানবিক মুখ্যমন্ত্রীকে দরকার ছিল। এরপরও যদি কোনও ইতিবাচক উত্তর আমাদের কাছে না আসে তাহলে মঙ্গলবার থেকে ধর্মঘট হবে।’‌