এক নজরে

ডার্বিতে মানববন্ধন সোমবার নবান্নে বৈঠক

By admin

October 19, 2024

দু’মাস আগে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে, যুবভারতী স্টেডিয়ামে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের ডুরান্ড কাপের ডার্বি বাতিল করেছিল পুলিশ। ডুরান্ড কাপের ম্যাচ বাতিল হলেও, গোটা বিশ্ব সাক্ষী থেকেছিল এক অভিনব প্রতিবাদের। যে প্রতিবাদে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে এক সুরে ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছিল। শনিবার ফের কলকাতা ডার্বিতে মুখোমুখি হল লাল হলুদ ও সবুজ মেরুন। স্থান সেই যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন। সময় বদলালেও বদলায়নি পরিস্থিতি। আর জি কর কাণ্ডের দু’মাস ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও বিচার এখনও অধরা রয়ে গিয়েছে। বিচারের দাবিতে চলছে প্রতিবাদ। এই আবহেই ফের একবার একজোটে ন্যায়ের ডাক দিল কলকাতা ময়দান। শনিবার সন্ধ্যা ৭:৩০ থেকে ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগে বিকেল ৫টার সময় মানব বন্ধন করার ডাক দিয়েছিল দু’দলের সমর্থকরা। যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনকে মাঝখানে রেখে একদিকে উল্টোডাঙা আর অন্যদিকে রুবি মোড় পর্যন্ত মানববন্ধন করেন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান সমর্থকরা। সবুজ-মেরুন ও লাল হলুদ সমর্থকরা বলেন, ‘গত বার পুলিশের জন্য ডার্বি হয়নি। পুলিশ দিয়ে আমাদের আটকেছিল। এবার মাঠেও খেলা হবে। মাঠের বাইরেও খেলা হবে। মানববন্ধন করে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ জানাব আমরা। ন্যায় বিচারের দাবিও জানাব’।

উল্লেখ্য, গত অগস্ট মাসে ডুরান্ড কাপের ডার্বিতে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে গ্যালারিতে টিফো, ব্যানার-পোস্টের নামানোর পরিকল্পনা ছিল দু’দলের সমর্থকদেরই। কিন্তু পুলিশের তরফে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাতিল করা হয় ম্যাচ। কিন্তু তাতেও থামেনি প্রতিবাদ, মাঠের বাইরে গর্জে উঠেচিল সমর্থকরা। পুলিশ সমর্থকদের উপর লাঠি চার্জও করে। কয়েকজন সমর্থককে ধরে প্রিজন ভ্যানে পর্যন্ত তোলা হয়। কিন্তু ঘটি-বাঙালের ঐক্যের কাছে হার মানে প্রশাসন। তাদের সেখানেই ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এবার অবশ্য সমর্থকদের তরফে পুরোটাই আরও শান্তিপূর্ণ ভাবে করার পরিকল্পনা ছিল, সে কারণে তাদের হাতে চিল শুধুমাত্র প্ল্যাকার্ড-ব্যানার। গতবার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের জন্য এক হয়েছিল ময়দানের তিন প্রধান। বিচারের দাবিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্লোগান তুলেছিল ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের সমর্থকরা। স্লোগান উঠেছিল ‘ঘটি বাঙালের এক স্বর, জাস্টিস ফর আরজি কর।’ তাতে সুর মিলিয়েছিল মহমেডানের অনুরাগীরাও। ২ মাসের মাথায় শনিবার আরও একটা ডার্বিতে আইএসএল-এ আবার মুখোমুখি হয় ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান। ম্যাচও সেই যুবভারতীতেই। এদিন ফের ম্যাচ শুরুর আগে বিচারের দাবিতে এক হলেন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান সমর্থকরা। তাঁদের দাবি, এই ডার্বি ‘দ্রোহের ডার্বি’।

শনিবার সন্ধে সাড়ে ৭টায় ম্যাচ শুরুর আগে, বিকেল পাঁচটায়, সল্টলেক স্টেডিয়ামকে মাঝে রেখে, একদিকে উল্টোডাঙা, অন্যদিকে রুবির অভিমুখে মানববন্ধন কর্মসূচি করেন দুই প্রধানের সমর্থকরা। আবার একযোগ প্রতিবাদ করেন ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগান সমর্থকরা মানববন্ধন করে। শুধু মানববন্ধনই নয়, ফুটবল সমর্থকরা কালো ব্যাজ, কালো পতাকা হাতে। মাঠে যেমন খেলা চলে তেমনি মাঠের বাইরেও খেলা হয়। মানববন্ধন করে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ জানান তাঁরা। ফের একবার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর জি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে রাজপথে নামেন। ফের আওয়াজ ওঠে, ‘বাঙাল-ঘটির এক স্বর, জাস্টিস ফর আর জি কর।এই মানববন্ধনের মধ্যে কিন্তু সমর্থকদের পাশাপাশি বেশ কিছু ডাক্তাররাও উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে, বিচার চেয়ে ফের পথে নেমেছেন জুনিয়র ডাক্তাররাও। জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের ডাকে সোদপুর থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত হয়েছে ন্যায়বিচার যাত্রা। আগামীকাল ধর্মতলার অনশনমঞ্চে ‘মহাসমাবেশে’র ডাকও দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আর জি কর কাণ্ডের দুই মাসেরও অধিক সময় পার হয়ে গেলেও, প্রতিবাদ, আন্দোলনের ঝাঁঝ যে এতটুকুও কমেনি, তা কিন্তু বলাই বাহুল্য।

এদিকে সোমবার ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জুনিয়র ডাক্তারদের আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিকেল ৫টায় নবান্নে। আন্দোলনকারীদের বৈঠকে ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার ধর্মতলার ধর্নামঞ্চে জুনিয়র ডাক্তারদের আমরণ অনশন ১৫ দিনে পড়ল। এদিনই ধর্মতলার ধর্নামঞ্চে গিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিব, সঙ্গে ছিলেন ডিসি সেন্ট্রাল। সেই সময় মুখ্যসচিবের মোবাইল ফোনে মমতা কথা বলেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। তিনি অনশন তুলে নেওয়ার আর্জি জানান। পাশাপাশি জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য সচিবের অপসারণ ছাড়া অর সমস্ত দাবির সঙ্গে তিনি একমত। তারপরই তিনি বৈঠকে ডাকেন।  মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য আন্দোলনকারীদের দুটি বিষয়ে স্পষ্ট জানিয়েছেন। একটি হল- আন্দোলনকরীদের তরফে ১০ জনের প্রতিনিধি দল, দ্বিতীয় শর্ত হল আন্দোলনকারী প্রতিনিধি দলের সদস্যরা যেন নবান্নের বৈঠকে পৌঁছাতে বিলম্ব না করেন। এর আগের বৈঠকগুলিতে জুনিয়র ডাক্তারদের ২০র বেশি প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল। পাশাপাশি তাদের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে থাকতে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। নবান্ন থেকে কালীঘাট- সর্বত্রই ছিল একই ছবি। এবার যাতে সেই ঘটনার পূনরাবৃত্তি না হয় তার কথাই আগেভাগে জানিয়ে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এখনই তাঁরা অনশন তুলছেন না। আরও দুই দিন অনশন চলবে। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সোমবার পর্যন্ত পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিগুলি চলবে বলেও জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। রবিবারের ধর্মতলায় সমাবেশ হবে। ধর্মতলায় অনশন মঞ্চে সাধারণ মানুষকেও যোগ দেওয়ার আহ্বান জনিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।