এক নজরে

ইলিশ দিয়েও পেঁয়াজ পাচ্ছে না বাংলাদেশ

By admin

September 16, 2020

কলকাতা ব্যুরো: বাংলাদেশ যেদিন ১২ টন ইলিশ পাঠিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরো মধুর করার বার্তা দিল, সেদিনই হঠাৎ ঢাকাকে পেঁয়াজ পাঠানো বন্ধ করে দিল দিল্লি। এতে আগামীতে ইলিশ পাওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা তা নিয়েই এখন ভাবতে বসেছে বাঙালির একাংশ। কেননা বাঙালির পাতে বাংলাদেশি ইলিশ যেমন অতীব সুস্বাদু, তেমনই বাজারে ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের দামে কিনতে গেলে চোখে জ্বালা ধরাচ্ছে সকলের।

এ রাজ্যের স্থল বন্দরগুলি দিয়ে বাংলাদেশ ঢোকার পথে এখন প্রায় ১৬ হাজার টন নাসিকের পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক অনিশ্চয়তায় পড়ে আটকে রয়েছে। গত দুদিনে কয়েক হাজার টন পেঁয়াজ ইতিমধ্যেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে আশঙ্কা। এই অবস্থায় বিলাসপুর থেকে প্রায় পনেরশো টন পেঁয়াজ ওয়াগানে নিয়ে একটি মালগাড়ি গেদে দিয়ে বাংলাদেশের দর্শনায় পৌঁছানোর জন্য মাঝরাস্তায় রয়েছে।

বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে আগেই চুক্তি ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই গত কয়েক দিন ধরে এ দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ রাজ্যে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ ৪০ টাকা কিলো দরে বিকোচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎই সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশ জারী করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তার ফলে এ রাজ্যের অন্তত ছ টি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার মুখে প্রায় সাড়ে ৬০০ ট্রাক এখন পেঁয়াজ বোঝাই করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আবার সীমান্ত চেকপোস্ট গুলিতে পৌঁছনোর জন্য মাঝ রাস্তায় বহু ট্রাক আটকে গিয়েছে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের জেরে। বাজারে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় আর কেন্দ্র রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় এখন সীমান্তের ওই ট্রাকগুলিকে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে কিনা সে ব্যাপারে রাজ্য সরকার কথা বলছে কেন্দ্রের সঙ্গে।

যদিও মঙ্গলবার দুপুরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক থেকে সীমান্ত চেকপোস্ট গুলিতে কোথায় কত ট্রাক পেঁয়াজ নিয়ে আটকে রয়েছে সে ব্যাপারে তথ্য জানতে চাওয়া হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে সীমান্ত এবং সীমান্তে পৌঁছানোর জন্য রাস্তায় ও রেল পথে সব মিলিয়ে প্রায় ১৬ হাজার টন পেয়াজ এখন মাঝ রাস্তায় আটকে গিয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের চেকপোস্টগুলিতে ক্লিয়ারিং এজেন্ট সংগঠনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেছেন, হটাৎ করে কেন্দ্র পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বেশ সমস্যা তৈরি হয়েছে সীমান্তে। যদিও কোথায় কত ট্রাক এখন পেঁয়াজ নিয়ে আটকে রয়েছে সে ব্যাপারে কেন্দ্র নতুন করে তথ্য জানতে যাওয়ায় এই জটিলতা দ্রুত কেটে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।

এখন ঘোজাডাঙ্গা সীমান্তে প্রায় ৩০০ ট্রাক, পেট্রাপোল সীমান্ত ও সীমান্তে যাওয়ার জন্য যশোর রোড ও চাকদা রোডে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় ৬০ টি ট্রাক, মালদার মহদীপুর সীমান্তে পেঁয়াজ নিয়ে আটকে আছে ২২৩ টি ট্রাক, হিলি সীমান্তে ২০০ ট্রাক ও চ্যাংড়াবান্ধায় অবশ্য গুটিকয়েক ট্রাক রয়েছে বলে খবর।

একদিকে করোনা আবহ ও অন্যদিকে আবহাওয়ার খামখেয়ালীপনা এরাজ্যে ইলিশ তেমনভাবে ওঠেনি। দীর্ঘদিন হাপিত্যেশ করে থাকার পর গত কয়েকদিন ধরে ধাপে ধাপে প্রায় ৪০০ টন ইলিশ বাংলাদেশ ভারতের বাজারে বিক্রির জন্য ছেড়ে দিয়েছে। গত তিন দিনে প্রায় ৫০ টন ইলিশ এসেছে কলকাতা ও হাওড়ার বাজারে। ফলে খাদ্য রসিক বাঙালি দাম বেশি দিয়েও পদ্মার ইলিশ খেতে সোশ্যাল ডিসটেন্স ভুলে গিয়ে থো লে হাতে বাজারে যাচ্ছেন। এই আবহে হাসিনা সরকারকে হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি ভারতের বন্ধ করে দেওয়ার ফলে ইলিশের বাজারে উল্টো ফল হবে কিনা তা নিয়ে এখন বাঙালি তাত্ত্বিকরা ভাবতে বসেছেন। যদিও প্রশাসনিকভাবে এখনো পর্যন্ত পেঁয়াজ নিয়ে কি করা হবে তা স্পষ্ট নয়।