কলকাতা ব্যুরো: গত ১৯ ডিসেম্বরের কলকাতা পুরভোটের সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ ও ইভিএম সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ। পাশাপাশি, ভোটের দিন প্রত্যেক বুথে যে সমস্ত প্রিসাইডিং অফিসার ছিলেন তাঁদের ডায়েরি সংরক্ষণের তালিকায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ছাপ্পা ভোট ধরতে যে রেজিস্ট্রিতে সই করে বা বুড়ো আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ভোটদান করেন সেই নথিও সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। তবে কলকাতার পুরভোট ব্যাপক বেআইনি হয়েছে বলে অভিযোগ করে তদন্তের জন্য এই সমস্ত নথি আগেই সংরক্ষণের জন্য বিরোধীরা হাইকোর্টে আবেদন করে। মামলাকারীরার ওই সংক্রান্ত যাবতীয় নথি কমিশনের থেকে নিয়ে হাইকোর্টকে নিজের হেফাজাতে রাখার আবেদন করেছিল। কিন্তু এদিনের রায়ে হাইকোর্ট কমিশনকেই সেসব নিজের দায়িত্বে সংরক্ষন করতে বলেছে। মামলাকারীদের দাবি মেনে আদবে তদন্ত কি হবে, তাই নিয়েও রায়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেনি আদালত। পাশাপাশি আগামী পুরভোটগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে পরবর্তী শুনানিতে ফের আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট।
আগের দিন ভোট মামলার শুনানি হয় সেই রায় শুক্রবার হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে তোলা হয়। হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আগামিদিনে যে পুরসভা নির্বাচন হবে সেখানে সব বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে হবে এবং ক্যামেরাগুলি যেন সঠিক জায়গায় বসানো হয় তা খেয়াল রাখতে হবে এবং সমস্ত ফুটেজ সংরক্ষণ করতে হবে। কলকাতার পুরভোটে ব্যাপক রিগিং, বুথ দখল, মৃত ব্যক্তিদের নামে ভোটদান-সহ একাধিক অভিযোগ এসেছে। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট পরবর্তী ভোটগুলিতে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য কমিশনকে এই নির্দেশ দিল বলে মনে করা হচ্ছে।
কলকাতা পুরভোটে ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে মামলা হয়েছে এবং সেই মামলায় সদ্য সমাপ্ত কলকাতা পুরনির্বাচন বাতিলেরও দাবি জানানো হয়েছে। আদালতের তরফে জানানো হয়েছে এই বিষয়ে ভারতীয় সংবিধানের ২৪৩ নম্বর ধারার কথা মাথায় রেখে এবং এই মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার মামলার শুনানির সময় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে হাইকোর্টে জানানো হয়েছিল, রাজ্যে বকেয়া পুরসভার ভোট দু’দফায় সম্পন্ন করে ফেলতে চায় তারা। প্রথম দফায় নতুন বছরের ২২ জানুয়ারি বিধাননগর, শিলিগুড়ি, আসানসোল, চন্দননগর ও হাওড়ায় পুরভোট এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি বাকি সমস্ত পুরসভার ভোট সম্পন্ন করে ফেলা হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।
পাশাপাশি, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের তরফে আদালতে জানানো হয়েছে, হাওড়া থেকে বালিকে পৃথক করার বিলে রাজ্যপাল ইতিমধ্যেই সম্মতি দিয়েছেন। হাইকোর্টের এদিনের রায় এডভোকেট জেনারেলের সেই বক্তব্য লিপিবদ্ধ করা হয়। ফলে রাজ্যপাল বালি নিয়ে বিলে সই করেছেন বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। যদিও শুক্রবার রাতে রাজ্যপাল টুইট করে জানিয়েছেন, বালির ইস্যুতে এখনো বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। ফলে বালি পুরভোট নিয়ে ধোঁয়াশা জারি রয়েছে। পরবর্তী পৌরভোটগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহারের দাবি সংক্রান্ত বিষয়ে, সঠিক সময়ে (নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর) যথাযথ তথ্য প্রমাণ-সহ আবেদন জানানোর নির্দেশও প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এদিন দিয়েছে।