কলকাতা ব্যুরো: বদলির নির্দেশের পরেও কেন শিক্ষিকাকে নিয়োগ করা হলো না? আসলে এটা একজন মহিলা সহ কর্মীর সামনে পৌরুষ দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়। বোর্ড কেন খালি পদের তালিকা না দেখে ওই স্কুলে পাঠালো? তারাও দায় এড়াতে পারে না। রাজ্যের অন্যতম একটা নামী স্কুল, জেই স্কুলে প্রতি বছর মাধ্যমিকে বেশ কয়েক জন প্রথম দশে জায়গা করে নেয়, তার কি হাল! সোমবার মামলায় এমনই প্রশ্ন তুললেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ওই শিক্ষিকাকে স্কুলে কাজে যোগ দেওয়ার ব্যাবস্থা করুন, না হলে কিন্তু আপনাদের ভালো হবে না, সরাসরি এই ভাষাতেই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে সতর্কতা হাইকোর্টের।
স্কুল পরিদর্শক বা ডিআই-এর নির্দেশ থাকার পরও শিক্ষিকাকে স্কুলে নিয়োগ করতে চাননি প্রধান শিক্ষক। শূন্যপদ নেই, এই কারণ দেখিয়ে ডিআই-এর নির্দেশও মানেনি ওই স্কুল। স্কুলে শিক্ষকতা করা তো দূরের কথা, গত এক বছরের মধ্যে বেতন পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছে ওই শিক্ষিকার। প্রধান শিক্ষক তথা স্কুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই শিক্ষিকা। আর সেই মামলাতেই সোমবার প্রধান শিক্ষককে ভর্ৎসনা করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধ করার নির্দেশ আগেই দিয়েছে আদালত।
বিচারপতি এদিন বলেছেন, আসলে এটা পৌরুষত্বের আস্ফালন, তাই একজন মহিলাকে চাকরি পেতে একবছর ধরে রাস্তায় ঘুরতে হয়? জানা গিয়েছে এক বছর ধরে কোনও কারণ ছাড়াই শিক্ষিকার বেতন বন্ধ। আর সে ক্ষেত্রে মূল অভিযোগ স্কুল কথা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এই মামলায় প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ। সেই সঙ্গে কেন ওই শিক্ষিকার বেতন বন্ধ হল, সেই কারণ দর্শাতে প্রধান শিক্ষককে সোমবার আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। আর সেই নির্দেশ মতো এদিন হাইকোর্টে উপস্থিত ছিলেন রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও টিচার ইনচার্জ।
জানা গিয়েছে রায়গঞ্জের বাসিন্দা সংযুক্তা রায় বদলির আবেদন জানিয়েছিলেন। গত বছর তাঁকে রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলে বদলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই স্কুলে যোগ দিতে গেলে, স্কুলের পক্ষ থেকে তাঁকা বলা হয় ওই স্কুলে তিনি যোগ দিতে পারবেন না। তাঁকে বোঝানো হয়, স্কুলের যে শূন্যপদে তাঁর চাকরি করার কথা, সেই শিক্ষক একটি খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের দাবি, তাঁর মামলাটি বিচারাধীন, তিনি যে কোনও দিন ফিরে এসে স্কুলে যোগ দিতে পারেন। তাই আপাতত শিক্ষিকা যোগ দিতে পারবেন না।
গোয়ালপোখর তুতিকাটা হরমা আদিবাসী জুনিয়র গার্লস স্কুলের ইংরেজি শিক্ষিকা ছিলেন সংযুক্তা রায়। সেখান থেকে বদলির আবেদন করেন। পর্যদ সেই আবেদন মঞ্জুর করে। কিন্তু রায়গঞ্জ করোনেশন স্কুলে যোগ দিতে গেলে তাকে বাধা দেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। চাকরিতে যোগ দিতে না পেরে ১৩ মাস বেকার ছিলেন সংযুক্তা। তারপরই এনিয়ে মামলা করেন হাইকোর্টে।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানতে চেয়েছিলেন এই এক বছর শিক্ষিকা বেতন পেয়েছেন কি না। মামলাকারী আইনজীবী অঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, এক বছর ধরে বেতন বন্ধ। এমনকি ডিআই বলার পরেও তাঁকে কাজে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। এরপরেই ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারপতি বলেন, একজন মহিলাকে এভাবে হেনস্থা করা আদালত বরদাস্ত করবে না। ডিআই প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে দেবেন।
কোনও মামলায় কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। তিনি আর চাকরি করতে পারেন না। তাই এ ক্ষেত্রে শিক্ষিকার দাবি, ইচ্ছাকৃত তাঁকে কাজের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। সোমবারের শুনানিতে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি। তিনি বলেন, এটা আসলে পৌরুষত্বের আস্ফালন, তাই একজন মহিলাকে চাকরি পেতে এক বছর ধরে রাস্তায় ঘুরতে হয়। আগামী দুদিনের মধ্যে চাকরি না দিলে প্রধান শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হতে পারে বলেও জানান বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
পাশাপাশি এ দিন স্কুলের টিচার ইনচার্জ টি শার্ট ও জিন্স পরে হাইকোর্টে এলে ধমক দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ১০ মিনিটে পোষাক বদলে আসার নির্দেশ দেন তিনি। বিচারপতি বলেন, আপনি একজন টিচার ইন চার্জ। জিনস, টি-শার্ট পরে আদালতে এসেছেন? এদিন শুনানি শেষে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন আগামী ২৫ তারিখের মধ্যে চাকরি দিতে হবে শিক্ষিকাকে। রায়গঞ্জ করোনেশন স্কুলেই দিতে হবে চাকরি। আর তা হলে কড়া ব্যবস্থা নেবে আদালত। আর চাকরি পাওয়ার পরেই, আদালত প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধের নির্দেশ খারিজ করবে।