খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল। বাদ যাননি প্রাক্তন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও।কেবল তাই নয় অনলাইন জায়ান্ট অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজস থেকে শুরু করে মার্কিন সংগীত শিল্পী কেনি ওয়েস্ট, এমনকি বিল গেটসের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল। এঁদের প্রায় সবার অ্যাকাউন্ট থেকে বিটকয়েন চেয়ে পোস্ট করা হয়এবং ঘণ্টা খানেকের মধ্যে দ্বিগুণ ফেরত দেওয়া হবে বলে দাবি করা হয়েছিল।
মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের টুইট ছিল, ‘আপনারা আমাকে যতগুলো বিট কয়েন দেবেন, ৩০ মিনিটের মধ্যে তার দ্বিগুণ ফেরত দেওয়া হবে।’তবে টুইটগুলি পোস্ট করার কিছুক্ষণের মধ্যে আবার সরিয়ে ফেলা হয়। একদিনে এতজন প্রভাবশালীদের অ্যাকাউন্ট হ্যাকের ঘটনা তার আগে কোনওদিন হয় নি। ঘটনার পর সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রাচেল টোবাক জানিয়েছিলেন, ‘সম্ভবত এটাই সাইবার জগতে সবচেয়ে বড় হামলা’। তবে হ্যাকিং-এর ঘটনা তেমন নতুন নয়।বহুদিন ধরে এ নিয়ে দেশে বিদেশেচর্চা চলছে। উল্লেখিত ঘটনার আগে সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছিল সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট, স্কাইপি থেকে শুরু করে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের ওয়েবসাইট।

এছাড়াও হ্যাকাররা দক্ষিণ কোরিয়ার বহু নাগরিকের ক্রেডিট কার্ড-এর তথ্য এবং জার্মানির দেড় কোটি মানুষের বিভিন্ন তথ্য হাতিয়ে নিয়েছিল। আমেরিকার সুপার শপের ৭০ লাখ গ্রাহকের তথ্য বহুদিন হ্যাকারদের হাতের মুঠোয় ছিল।তবে ঘটনা হল হ্যাকারদের এ ধরণের একের পর এক হামলার পরও তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। কিন্তু কিভাবে? কেন অনুসন্ধান চালিয়েও তাদের টিকি পাওয়া যায় না।নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা প্রতিটি ঘটনার শেষেই এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছে।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের কথা থেকে জানা যাচ্ছে,হ্যাকাররা যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সব ধরণের অনুসন্ধান থেকে গা বাঁচিয়ে নিতে পারছে তাভার্চুয়াল কিছু টেকনোলোজির কারণেই। বিশ্বজুড়ে অসংখ্য হ্যাকার গ্রুপ রয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান গোপনীয় তথ্য নিয়ে কাজ করে। অনেক হ্যাকার গ্রুপ মোটা অঙ্কের টাকা পেলে অনলাইনে সংগৃহীত সব তথ্য ছেড়ে দিতে পারে। এসব তথ্যের মধ্যে ব্যাঙ্কের গোপনীয় তথ্য থেকে শুরু করে ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের ইমেইল, পাসওয়ার্ডও রয়েছে বলে মনে করা হয়।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘হ্যাকাররা সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ পাসওয়ার্ড পাওয়ার জন্য অভ্যান্তরীন তথ্যের সাহায্যে ব্যাক-এন্ড সার্ভার ব্যবহার করে।

আসলে হ্যাকাররা ভার্চুয়ালি কাজ করে। আইপি লুকনোর বিভিন্ন টুলস ব্যবহারের কারণে এরা ঠিক কোন জায়গায় ঘাঁটি গেড়ে কাজ করছে তার হদিশ পাওয়া সম্ভব হয় না। বিশেষজ্ঞরা অভিমত,সাধারণত হ্যাকাররা খুব প্রয়োজনীয় পাসওয়ার্ড পাওয়ার জন্য অভ্যান্তরীন তথ্যের সাহায্যে ব্যাক-এন্ড সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এই পদ্ধতিতে কাজ শুধু ভারত কিংবা বাংলায় নয়, বিশ্বব্যাপী চলছে।সাইম্যানটেকের একটি তথ্য অনুযায়ী, হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বে স্প্যামে ভারত প্রথম ও ভাইরাস আক্রমনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এর থেকে খুব সহজেই বোঝা যায় যে, হ্যাকার ও সাইবার অপরাধীরা ভারতের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত সমস্ত তথ্যের উপর নজরদারি রাখে এবং আক্রমন চালায়।ক্যাসপারেস্কি ল্যাবের সাউথ এশিয়ার চ্যানেল সেলস ডিরেক্টর জগন্নাথ পাটনায়েক বলেন, প্রতি সপ্তাহেই অন্তত একবার সব ধরণের পাসওয়ার্ড পালটে ফেলা দরকার। এ ছাড়া মাসে অন্তত দু’বার সব মেইল মুছে ফেলতে পারলেই ভাল। এর ফলে যদি আপনার মেইল হ্যাক হয় তাহলে সব মেইল বা তথ্যের নিয়ন্ত্রণ হ্যাকারদের হাতে যাবে না।পাটনায়েক বলেন, গুরুত্বপূর্ণ মেইল সংরক্ষণ করতে পিসি বা ল্যাপটপের একটি এনক্রিপশন ফোল্ডারে রাখা দরকার। এছাড়াও তিনি একই সঙ্গে মেইলের নিরাপত্তার জন্য টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
অধিকাংশ ঘটনায় হ্যাকাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও গ্যারি বাওজার নামে কানাডিয়ান এক হ্যাকারকে ধরা পড়ে কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ গুনতে হয়েছিল। গ্যারি বাওজার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি গেমস নির্মাতা নিনটেন্ডোর গেমিং কনসোল হ্যাক করেছিলেন। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে নিনটেন্ডোর গেম পাইরেসি করে বিক্রিও করেছিলেন।নিনটেন্ডোর মামলায় বাওজার ডমিনিকান রিপাবলিক থেকে গ্রেপ্তার হন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ডমিনিকান রিপাবলিক কর্তৃপক্ষবাওজারকে আমেরিকার কাছে হস্তান্তর করে। বাওজার'টিম এক্সিকিউটর' নামে একটি পাইরেসি দলের সদস্য ছিলেন। জেনে-বুঝে তিনি টিম এক্সিকিউটর গেমিং কনসোল নিনটেন্ডো সুইচ এবং থ্রিডিএস হ্যাক করেছিলেন এবং নকল সফটওয়্যার বানিয়ে তা বিক্রি করেছিলেন।
3 Comments
অনেকেই সখে বা অভ্যাসবশত হ্যাকিং চর্চা করতে করতে সাইবার ক্রাইমে জড়িয়ে পড়েন। তাদের কাজকারবারে বহু মানুষ ও প্রতিষ্ঠান নাজেহাল হয়। হ্যাকিং প্র্যাকটিসও এক ধরণের অপরাধ। অপরাধের মাত্রা কখনোই কমে না বরং বাড়তেই থাকে।
হোয়াটস্যাপ বেশ কিছুদিন নিরাপদ অ্যাপ্লিকেশন ছিল কিন্তু সেখানেও জাল বিস্তার করে ফেলেছে হ্যাকাররা। নানা রকম ফাঁদ পেতে হ্যাকাররা হোয়াটস্যাপও হ্যাক করছে।
ফেসবুক আইডি ছাড়াও ইমেল আইডি, ফেক আইডি করে ব্ল্যাকমেইল করা সেক্সটোরেশন ও নানা রকম হ্যারাশমেন্টের শিকার হচ্ছেন অনেকেই। পুলিশ এই ধরণের অপরাধ ধরতে ব্যর্থ। অনেকে শখের বশেও এই ধরণের কাজ করছে কিন্তু সেটাও অপরাধ।