কলকাতা ব্যুরো: করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে, বায়ু দূষণ কমাতে সারা দেশে আজ রাত ১২ টা থেকে সব রকম বাজি বিক্রি নিষিদ্ধ করলো জাতীয় পরিবেশ আদালত বা গ্রীন ট্রাইবুনাল। ৩০ নভেম্বর রাত পর্যন্ত এই নির্দেশ জারি থাকবে। এ ব্যাপারে সব রাজ্যকে এই নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে। রাজ্যগুলির মুখ্য সচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজিদের কাছে এদিনই নির্দেশ পাঠিয়ে তা বাস্তবায়নের কথা বলেছে ন্যাশনাল গ্রীন ট্রাই। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান তথা বিচারপতি আদর্শ কুমার গোয়েল অবশ্য যেসব শহরে বায়ু দূষণের পরিমাণ যথেষ্ট কম, বা দূষণ তেমন নেই, সেসব জায়গায় ছট পুজো, কালীপুজো বা এই ধরনের অন্য উৎসবে দু’ঘণ্টার জন্য আতস বাজি পোড়ানোর ছাড়পত্র দিয়েছেন।
তিনদিন আগেই এরাজ্যে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট একই নির্দেশ জারি করেছিল। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এ রাজ্যে বাজি কেনাবেচা ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। এবার জাতীয় সবুজ আদালতও একই রায় দিল। যদিও তা দেওয়া হল সারা দেশের পরিপ্রেক্ষিতে। এবার প্রশ্ন হল, আদালতের রায়ের পরেও বাস্তবে কতটা নিরুপদ্রবে এই দীপাবলি কাটবে? কারণ এ রাজ্যে সরকারিভাবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বাজি ব্যবসা হয়। আর বেসরকারিভাবে সংখ্যা কয়েক হাজার কোটির। দিওয়ালির সময়টাই বাজি ব্যবসার সবচেয়ে ভালো সময় হিসেবে দেখা হয়। ফলে এ রাজ্যের প্রায় ৩১ লক্ষ মানুষ এই ব্যবসার সঙ্গে ইতিমধ্যেই যুক্ত হয়েছেন। কয়েক লক্ষ টন কাঁচামাল ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই বাজি তৈরি হয়ে গিয়েছে।
এমনকি বাজির পাইকারি বাজারে বিক্রিও শুরু হয়েছিল। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে এ রাজ্যে বাজি কেনাবেচা ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।ফলে বাস্তবে বায়ু দূষণ ঠেকাতে কতটা বাজি ব্যবহার আটকানো যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কলকাতা ও আশপাশের শহরগুলিতে এখনো অনেকটাই প্রকাশ্যে বাজি পাওয়া যাচ্ছে। বড় দোকানগুলিতে সামনে থেকে বাজি বিক্রি বন্ধ হলেও, পিছন থেকে টাকা দিলেই পর্যাপ্ত পরিমাণে বাজি পাওয়া যাচ্ছে।
বাজি ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বাবলা রায় বলেছেন, যখন বাজি-তৈরি শেষ করে ব্যবসা শুরু হয়ে গিয়েছে, তখন এই নির্দেশ না দিয়ে, আরও কয়েক মাস আগে এব্যাপারে ভাবলে অনেক বড় ক্ষতি ঠেকানো যেত। কারণ ধার দেনা করে বহু মানুষ এই ব্যবসায় লগ্নি করেন। তারা সেসব লগ্নি করে দিয়ে বাজি ইতিমধ্যে তৈরি করে ফেলেছেন। এখন আদালত নির্দেশ দেওয়ায় তারা বাজি বিক্রি করতে পারবেন না এটা ঠিক। ফলে তাদের বিশাল একটা আর্থিক ক্ষতি হবে।
নুঙ্গি চম্পাহাটির মত বাজি তৈরির কারখানাগুলির মালিকদের একাংশের বক্তব্য, সারা রাজ্যে যত বাজি তৈরি হয়ে রয়েছে, তা কি হবে বুঝে ওঠা যাচ্ছে না। এত বাজি নষ্ট করে ফেলা যাবে না। তাতে দূষণও বাড়বে জমিতে। এই অবস্থায় তারা সবটাই ছেড়ে দিয়েছেন পুলিশ ও প্রশাসনের উপরে।