কলকাতা ব্যুরো: বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, চড় মারার হুমকি এবং আত্মপক্ষ সমর্থনে জোর গলায় দাবি। শিক্ষাঙ্গনে প্রায় নজিরবিহীন তাণ্ডব চালিয়ে শেষমেশ পুলিশের হাতে ধরা পড়লো আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন ইউনিট সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মণ্ডল। টেকনো সিটি থানার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে বলে খবর।
গিয়াসউদ্দিনের ঘটনার উল্লেখ করে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তাঁর হৃদয় ব্যথিত বলে উল্লেখ করেছেন। যদিও গিয়াসুদ্দিনের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নেই বলে দাবি টিএমসিপির রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য, রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের। তবে গিয়াসউদ্দিন দাবি করেছেন, এখনও তিনি বহাল তবিয়তে তৃণমূলে রয়েছেন এবং দলের কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে জড়িত।
বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত রাজ্যপাল সোমবার মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে রাজভবনে তলব করেছেন ৷ দুপুর ১ টার সময় মুখ্যসচিবকে ডেকে পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল। রবিবার টুইটে রাজ্যপাল লেখেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োতে যে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি প্রতিফলিত হয়েছে তার প্রেক্ষিতে আগামীকাল দুপুর ১ টায় মুখ্যসচিবকে ডেকে পাঠিয়েছি ৷ এই ধরণের ঘটনা যেখানে আইন লঙ্ঘনকারীরা আইনের তোয়াক্কা না করে নিজেদের পথে হাঁটছে, তা আইনমান্যকারীদের জন্য ভয়ের ৷ এই ঘটনার ভিডিয়োও এদিন টুইটারে শেয়ার করেছেন রাজ্যপাল ৷
সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছে উপাচার্যের ঘরে ঢুকে তাণ্ডব চালাচ্ছে কয়েকজন প্রাক্তন ছাত্র। সেখানে উপাচার্যকে চড় মারার হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিতে দেখা যায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন ইউনিট সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মণ্ডলকে। কিন্তু কী নিয়ে সমস্যার সূত্রপাত, তা স্পষ্ট নয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা শুরু হয়ে যায়।
সমালোচনার মুখে পড়ে অবশ্য নিজের অবস্থান থেকে এতটুকুও সরেনি গিয়াসউদ্দিন। তার পালটা দাবি ছিল, বিক্ষোভের মাঝে উপাচার্যের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা যথাযথ। তার জন্য একটুও অনুতপ্ত নয় সে। তবে উপাচার্যকে হেনস্তার মতো গুরুতর ঘটনায় তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক স্তরে পদক্ষেপ গ্রহণ করা শুরু হয়েছিল। শেষমেশ ঘটনার ২ দিন পর টেকনো সিটি থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে গিয়াসউদ্দিনকে।
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ জানান, ও বহুদিন আগে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য ছিল। কিন্তু নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে আগেই দল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, তার বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ ছিল। গিয়াসউদ্দিনের বিরুদ্ধে আরও কতটা কড়া ব্যবস্থা নেয় পুলিশ প্রশাসন, সেটাই এখন দেখার।
তবে প্রশ্ন উঠছে, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের ঘরে কীভাবে ঢুকে অকথ্য গালিগালাজ করার সাহস পেলেন বহিষ্কৃত ছাত্র গিয়াসউদ্দিন? নিরাপত্তা রক্ষীরাই বা কী করছিলেন? তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কেউ না হলে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ তৎক্ষণাৎ কেন করা হয়নি টিএমসিপি-র তরফে? পুলিশের ভূমিকা নিয়েও উঠছে একাধিক প্রশ্ন।
উল্লেখ্য, ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার পর গিয়াসউদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ, গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে আরও অনেকে ছিল। তাদের কেন গ্রেফতার করা হল না। এ ঘটনায় রাঘব-বোয়ালরা জড়িত বলে দাবি পড়ুয়াদের একাংশের।