কলকাতা ব্যুরো: কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা! আইনশৃঙ্খলার অজুহাতে কলকাতার জি ডি বিড়লা স্কুল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সকালে সাড়ে ছ’টা নাগাদ স্কুলে পৌঁছে পড়ুয়ারা দেখেন মূল ফটক বন্ধ। সেখানে ঝোলানো রয়েছে নোটিস। তাতেই বলা হয়েছে, পড়ুয়াদের কথা ভেবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আপাতত স্কুল বন্ধ রাখা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে স্কুলের এই আচরণে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। স্কুলের ফি বিতর্ক নিয়ে মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। ৮০ শতাংশের বেশি ফি দেওয়া সত্ত্বেও কেন নতুন ক্লাসে তোলা হয়নি, তা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। জিডি বিড়লা, মহাদেবী বিড়লা, অ্যাডামাস সহ বেশ কিছু স্কুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, এই ৮০ শতাংশ নিয়ে সমস্যা। অভিভাবকদের হিসেবে ৮০ শতাংশ, স্কুলের ধার্য করা অঙ্কের থেকে অনেক কম। তবে কাউকে বের করে দেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি করে স্কুল।
বৃহস্পতিবার সকালে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে স্কুলের তরফ থেকে। স্কুলের দরজায় সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই বিজ্ঞপ্তি। জানানো হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ও পড়ুয়াদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের বাইরে যে বিক্ষোভ দেখান হচ্ছে, সেই প্রসঙ্গই উল্লেখ করা হয়েছে।

বুধবারই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য প্রশ্ন তোলেন যদি কাউকে বের করে দেওয়া না হয় তাহলে সমস্যা কোথায়? আদালত জানায়, সবাইকে নতুন ক্লাসে নিতেই হবে। বৃহস্পতিবার থেকে যাতে স্কুলে যেতে পারে পড়ুয়ারা, সেই নির্দেশ দেন বিচারপতি। বিচারপতি আই পি মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের তরফে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। আগামী দু সপ্তাহের মধ্যে বাকি ২০ শতাংশ দিতে হবে বলেও নির্দেশ দেয় আদালত। আর এই নির্দেশের পর বৃহস্পতিবারই জিডি বিড়লা স্কুলের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হল যে স্কুল আপাতত বন্ধই থাকছে।
করোনা কালের অনলাইন ক্লাসের পাট চুকিয়ে এপ্রিলের শুরু থেকে স্কুলে ফিরছে পড়ুয়ারা। কিন্তু বেশকিছু পড়ুয়ার ফি বকেয়া থাকার দরুন তাদের ক্লাসে ঢুকতে বাধা দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, তাদের ক্লাস করতে দেওয়া হয়নি। স্কুল চত্বরেই চলে অভিভাবকদের বিক্ষোভ। এর পরই আদালতের দ্বারস্থ হন সেই অভিভাবকরা। দায়ের হয় পিটিশান। বুধবার কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট নির্দেশিকা দেয়, বেসরকারি স্কুলে ফি বকেয়া থাকলেও পড়ুয়াদের ক্লাসে ওঠা আটকানো যাবে না। বাধা দেওয়া যাবে ক্লাস করার ক্ষেত্রেও। আদালতের এই রায়ে নৈতিকভাবে জয় পান অভিভাবকরা।
এরপর স্বাভাবিকভাবেই বৃহস্পতিবার সকালে সাড়ে ছ’টায় স্কুলে যায় পড়ুয়ারা। কিন্তু স্কুলে ঢুকতে পারেনি তারা। নোটিস দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু জিডি বিড়লা নয়, শহরে এই গ্রুপের ৫টি স্কুলই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এই সিদ্ধান্তে ব্যাপক ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত পড়ুয়ারাও। এ প্রসঙ্গে এক পড়ুয়ার অভিভাবক বলেন, আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করছে স্কুল। কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না কখনই।
অভিভাবকদের আরও অভিযোগ বিড়লা গ্রুপ গুটিকয়েক অভিভাবকের কাছে হারটা মেনে নিতে পারছে না। অনৈতিকভাবে তাই স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে। এটা অভিভাবকদের একতার মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা। আমরা আইনি পথেই হাঁটব।
তবে এই প্রথমবার নয়, এর আগে ২০১৭ সালে জি ডি বিড়লা স্কুলে যখন পড়ুয়ার যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠেছিল, তখনও একইভাবে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।