এক নজরে

Surajit Sengupta: প্রয়াত প্রাক্তন ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্ত

By admin

February 17, 2022

কলকাতা ব্যুরো: প্রয়াত সুরজিৎ সেনগুপ্ত। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। শিল্ডের সেমিফাইনালে কোরিয়া একাদশের বিরুদ্ধে দুরূহ কোণ থেকে তাঁর করা গোল এখনও অনেকের স্মৃতিতে টাটকা। সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে গোল করার পরে বার ধরে ঝুলে পড়ার ছবির কথা এখনও টাটকা।

কলকাতা ময়দানে তাঁর মতো শিল্পী ফুটবলার খুবই কম এসেছে। বেশ কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। করোনা আক্রান্ত হয়ে বাইপাসের ধারের একটি হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার শেষ হয়ে গেল তাঁর লড়াই। দৌড় থেমে গেল উইংগারের।

সাতের দশকের ময়দানের অন্যতম সেরা ফুটবলারের প্রয়াণে শোকার্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি টুইটারে লেখেন, ময়দানের স্টার ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্তকে আমরা হারালাম। তাঁর প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। ব্যক্তিগত ভাবে আমি তাঁকে সুভদ্র মানুষ হিসেবে জানতাম। তাঁর প্রয়াণে ক্রীড়া জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি সুরজিৎ সেনগুপ্তের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।

গত ২২ জানুযারি চলে গিয়েছেন আরেক দিকপাল ফুটবলার সুভাষ ভৌমিক। সেই শোকের ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি কলকাতার ফুটবল। তার মধ্যেই খবর সুভাষের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং একসময়ের সতীর্থ প্রাক্তন ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্ত প্রয়াত। অতীতে বহু ডিফেন্ডারের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। সেই ফুটবলার করোনার ট্যাকলে হেরে গেলেন।

মারডেকায় খেলতে গিয়ে মালয়েশিয়ার ডিফেন্স নিয়ে ছেলেখেলা করেছিলেন। এক ডিফেন্ডারের বুটের স্টাডের আঘাতে তাঁর কান ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল। গোল করার পরে খুব একটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেন না। কিন্তু সন্তোষ ট্রফিতে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ফাইনালে গোল করার পরে উচ্ছ্বসিত সুরজিৎ বার ধরে ঝুলে পড়েছিলেন। সেই ছবি ছাপানো হয়েছিল সংবাদপত্রে। সেই সময়ে প্রবল চর্চা হয়েছিল সুরজিৎ সেনগুপ্তর সেই আনন্দপ্রকাশ ঘিরে।

১৯৭৩ সালে প্রথম বড় ক্লাব হিসেবে মোহনবাগানে সই করেছিলেন। এক বছর সবুজ-মেরুন জার্সিতে খেলার পর পরের বছরই ইস্টবেঙ্গলে চলে যান তিনি। ১৯৭৮-৭৯ সালে ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়ক হয়েছিলেন। জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। সুরজিৎ সেনগুপ্তকে নিয়ে ময়দানে ছড়িয়ে রয়েছে কত গল্প, তার ইয়ত্তা নেই। গুরু পিকে ব্যানার্জি ছাত্র সুরজিতের খেলা দেখে এতটাই মোহিত হয়ে গিয়েছিলেন যে স্ত্রীকে লেখা একটি চিঠির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্তই ছিলেন শিল্পী উইংগার।

প্রথম দিকে তাঁর বাঁ পা খুব একটা সচল ছিল না। কিন্তু তাঁর কোচ ‘ভোলাদা’র প্রশিক্ষণে কালক্রমে তাঁর বাঁ পাও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। লেফট উইংগার হিসেবে ডাক পেয়েছিলেন জাতীয় দলে। যে গোলের কথা উঠলে এখনও সবার রক্তের গতি বেড়ে যায়, শিল্ডের শেষ চারে কোরিয়া একাদশের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচের আগে কোচ অচ্যুৎ ব্যানার্জির কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। অচ্যুৎ ব্যানার্জি মাঠের দুরূহ কোণ থেকে সুরজিৎ সেনগুপ্তকে শট প্র্যাকটিস করাচ্ছিলেন। কোরিয়া একাদশের বিরুদ্ধে পরের দিন লাল-হলুদ জার্সিতে সুরজিৎ ফুল ফুটিয়েছিলেন।

ফুটবলজীবন শেষ হওয়ার পরে তাঁর অনেক সতীর্থই কোচ হিসেবে পা রেখেছিলেন বিভিন্ন ক্লাবে। সুরজিৎ সেনগুপ্ত কিন্তু কোচ হননি। এদিন থেমে গেল সেই মহাজীবন। ময়দানের সবুজ ঘাসে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর অসংখ্য স্মৃতি।