কলকাতা ব্যুরো: শেষ হলো ‘বাঘবন্দির খেলা’। তর্জন-গর্জনের পর অবশেষে জালে ধরা দিলো রয়্যাল বেঙ্গল। টানা ৬ দিন কুলতলি এলাকায় ত্রাস ছড়ানোর পর মঙ্গলবার সকালে বনদপ্তরের ছোড়া ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু হল বাঘটি। গত বৃহস্পতিবার থেকেই বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছিল কুলতলির বিভিন্ন এলাকায়। লোকালয়ের খুব কাছে চলে আসে বাঘটি। মাঝে মধ্যেই শোনা যাচ্ছিল তার গর্জনও। পিয়ালি নদীর চর সংলগ্ন জঙ্গল এলাকায় রীতিমত আতঙ্ক ছড়ায়।

গত শুক্রবার সকাল থেকেই বাঘ ধরতে শুরু হয়েছিল বন দফতরের তৎপরতা। পিয়ালির চর কেল্লা এলাকার জঙ্গল জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন বন কর্মীরা। বার বার অবস্থান বদলায় বাঘটি। পরে শেখপাড়া এলাকায় বাঘের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পরেই নাইলনের জাল লাগানো হয়। সোমবার সারাদিন ধরে নানানভাবে চেষ্টা চালানো হয় কিন্ত দক্ষিণরায়কে ধরা সম্ভব হয়নি। অবশেষে মঙ্গলবার সকালে ধরা পড়ে বাঘটি। খাঁচা বন্দিও করা হয় তাঁকে।

বনকর্মীরা গত কয়েকদিন ধরে জাল, খাঁচা পেতে রাখলেও বাঘটিকে ধরতে না পারায় গত রবিবার বনাধিকারিক ও বন কর্মীদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। একদিকে বাঘের আতঙ্কে প্রাণ সংশয়, অন্যদিকে চার-পাঁচদিন ধরে কাজে যেতে না পারায় চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন গ্রামের দিন-আনা, দিন খাওয়া মানুষগুলো। বাঘটি ধরা না পড়ার জন্য বন দফতরের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন গ্রামবাসী থেকে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও।

সোমবার বাঘের নাঙাল পেতে চকোলেট বোম ফাঁটানো থেকে চিৎকার চেচামেচি সবই হয়েছে। কিন্তু তার দেখা মেলেনি। এর আগে বাঘের অবস্থান জানতে ড্রোন ওড়ানো হয়। সেই ড্রোন কয়েক ঘণ্টা উড়িয়েও জঙ্গলের মধ্যে কোথায় ঘাপটি মেরে আছে ডোরাকাটা, তার হদিশ পায়নি। শেষ পর্যন্ত সোমবার দমকলের গাড়ি ডাকা হয়। বাঘটি জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে তা নিশ্চিত করার পর দমকলের হোস পাইপ থেকে জল ছোড়া শুরু হয়। তাতেই কাজ হয়। বাঘ জঙ্গল থেকে কিছুটা লোকালয় বেরিয়ে আসতেই, ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয়। বন্দি হয় বাঘ। এর আগে প্রায় শ’খানেক চকলেট ফাটিয়েও তাকে জঙ্গল থেকে বের করা যায়নি।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঘটির পায়ের নীচে এবং কাঁধে দু’টি গুলি চালানো হয়েছে। তার ফলেই আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে সে। জালের ওপারে খাঁচা তৈরি করে রাখা হয়েছিল। সেখানেই ঢুকিয়ে দেওয়া হয় দক্ষিণরায়কে।

এদিকে বাঘ ধরা পড়ার খবর পেয়ে রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বাঘটিকে ৬ দিন পরে যে কাবু করা গিয়েছে তা বন কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। এই শীতের রাতে তাঁরা অমানুষিক পরিশ্রম করেছেন। এত দিন কোনও ভাবেই বাঘটিকে বাগে আনা যাচ্ছিল না।

প্রসঙ্গত, এ দিনই বন দফতরের তরফে ঠান্ডা জল ছুঁড়ে বাঘটিকে বের করে আনার চেষ্টা করে। জানা গিয়েছে, এবার তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। দাঁত, পা ঠিক আছে কিনা, দেহে কোথাও আঘাত আছে কিনা দেখে, প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা করে তারপর তাকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version