নিম্নচাপ সরে গিয়েছে। বৃষ্টিও বন্ধ হয়েছে। কিন্তু তাতেও দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়ে গিয়েছে।দরজায় কড়া নাড়ছে দুর্গাপুজো। বাংলা তথা বাঙালির সেরা উৎসবের আগে ডিভিসি-র ছাড়া জলে কার্যত দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলার বেশ কিছু অংশে বন্যার আশঙ্কা। ইতিমধ্যে কোনো কোনো জায়গায় দামোদরের উপচে যাওয়া জল পৌঁছে গিয়েছে গৃহস্থের বাড়ির একেবারে দুয়ারে। আবার কোনো কোনো জায়গায় সেই জল থই থই করছে গ্রামের পর গ্রাম। বিষয়টি নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্পষ্ট দাবি, গোটাটাই ‘ম্যান মেইড বন্যা’। তবে বন্যা যে কারণেই হোক না কেন হুগলির আরামবাগের পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান জেলায় জামালপুর ও রায়না ২ ব্লকের কয়েকটি অঞ্চল সহ গুসকারর বাসিন্দাদের এখন চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। প্রশাসনের কথায় ঘর বাড়ি ছেড়ে কেউ বাঁধে আবার কেউ পাকা রাস্তায় ঠাঁই নিয়েছেন। তবে মাথার উপর আচ্ছাদন দেওয়ার মত ত্রিপল ও খাবারদাবার যথা সময়ে না মেলায় বানভাসিদের মধ্যে অনেকে ক্ষোভ উগরে দেন।

ডিভিসি-র ছাড়া জলে সব থেকে বেশি বানভাসি হয়েছে আরামবাগের গোঘাট ও খানাকুল প্রভৃতি এলাকা। ততটা না হলেও দামোদর ও মুণ্ডেশ্বরীর সংযোগস্থলে থাকা পূর্ব বর্ধমানের জালালপুর ব্লকের জ্যোৎশ্রীরাম অঞ্চলের অমরপুর, শিয়ালী, কোরা ও উজিরপুর এলাকার বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার নিয়েছে। এই সব এলাকার বাসিন্দারের যথেষ্টই ভোগান্তিতে ফেলেছে। এই সব এলাকার কম বেশী পঞ্চাশটি পরিবার জলবন্দি হয়ে রয়েছে। দামোদর ছাপিয়ে জলে পৌঁছে গিয়েছে শিয়ালী গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গোটা বিদ্যালয় চত্বর এখন হাঁটু সমান জলে ভাসছে। অনেক গৃহস্থের বাড়ির চৌকাঠ ছাপিয়ে জল ঘরের ভিতর পর্যন্ত প্রবেশ করেছে। ধান ছাড়াও সবজি চাষের জমিও জলে ডুবেছে।

সূত্রের খবর, শিয়ালি, কোরা ও উজিরপুর এলাকার বহু মানুষ মঙ্গলবার বিকেল থেকেই স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ আবার উঁচু রাস্তায় ঠাঁই নিয়েছেন। ঘর-বাড়ি ছেড়ে যারা আসতে পারেন নি তাদের অনেকে প্লাবন পরিস্থিতির মধ্যেও নিজের নিজের বাড়িতেই জলের মধ্যে রয়ে গিয়েছেন। বন্যা পরিস্থিতিতে যথেষ্ট ত্রিপল ও খাবারদাবার পৌছায় নি বলে অনেকেই অভিযোগ এনেছেন। দুর্ভোগে পড়া এইসব এলাকার অনেক মানুষ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন।প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রায়না ২ ব্লকের বড়বৈনান গ্রাম সহ গোতান অঞ্চলের কয়েকটি গ্রামেও। এছাড়াও আউশগ্রামের গুসকরা শহরও প্লাবিত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

জানা গিয়েছে গত বুধবার মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ফের প্রায় ১ লাখ কিউসেক কম জল ছাড়া হয়। ডিভিসি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, মাইথন এবং পাঞ্চেত থেকে মোট ৮০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ডিভিসি জল ছাড়ার পর তা দামোদর নদ হয়ে দুর্গাপুর ব্যারেজে যায় । এদিকে, ডিভিসির জল ছাড়ার ফলে দামোদর ও মুন্ডাশ্বরীর জল বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে। দামোদর নদের দুই ধারে সব জায়গা জলমগ্ন । ঘরছাড়া বহু মানুষ। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া, হুগলির একাধিক এলাকা। মুখ্যমন্ত্রী বুধবারই বানভাসী জেলাগুলির পরিদর্শনে যান- প্রথমে হুগলির পুরশুরা, তারপর পশ্চিম মেদিনীপুরে। এরপর মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ করেন, এ বারে জল বেশি ছাড়া হয়েছে। ২০০৯ সালের পর এত জল ছাড়া হয়নি। ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলে ডিভিসি ঝাড়খণ্ডকে বাঁচায়। সব জল ছেড়ে দেয়। এ বার তিনি হাত জোড় করে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু সাড়ে তিন লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। যে কারণ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটা ‘ম্যান মেড’ বন্যা। বাংলাকে ইচ্ছা করে বঞ্চনা করা হচ্ছে।

রাজ্যের তরফে বারবার এই ব্যাপারে অনুরোধ করা হয়েছিল ডিভিসিকে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, রাজ্যের কথা কানেই তোলা হয়নি। আর এই কারণে পুজোর আগে বাংলাকে ফের ম্যান মেড বন্যার মুখে পড়তে হল। অর্থাৎ আবারও একবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির জন্য এর আগেও কেন্দ্রের উদাসীনতা ও রাজ্যকে না জানিয়ে ডিভিসির জল ছাড়াকে দায়ী করেছিলেন। গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বন্যা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক আকার নিয়েছে। হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত। পশ্চিম মেদিনীপুর বাঁকুড়াতেও বন্যার পরিস্থিতি বেশ খারাপ। বেশি মাত্রায় জল ছাড়ায় দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জায়গা প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া এবং হুগলির খানাকুল, আরামবাগ–সহ দামোদরের তীরবর্তী এলাকাগুলি জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। ইতিমধ্যেই হুগলি–হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় প্লাবন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।