রেষারেষি হানাহানি মানুষের মধ্যে আদিম কাল থেকেই চলে আসছে। আর তারই জেরে সেই সময় থেকেই খুন জখমের ঘটনা চলে আসছে। প্রথম মানুষ খুনের ঘটনাটি ঠিক কবে ঘটেছিল এ নিয়ে বিভিন্ন ধর্মে নানা ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের হাতে যার অকাট্য প্রমাণ ছিলনা। তবে কয়েক বছর আগে স্পেনের একদল বিজ্ঞানী জানিয়েছিলেন, তারা অন্তত ৩০ হাজার বছর আগের মানুষ খুনের প্রমাণ পেয়েছেন। এই প্রমান পেতে ১৯৪১ সাল থেকে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু করছিলেন তারা।

১৯৪১ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রোমানিয়ার ট্রান্সিলভেনিয়া-র একটি গুহায় ফসফেট খুঁজতে গিয়ে খনি শ্রমিকরা খুঁজে পান প্রাচীন একটি খুলি। ওই খুলিটি মানুষের মাথার ক্ষতিগ্রস্ত খুলি হলেও খুঁজে পাওয়া যায়নি শরীরের বাকি অংশের অস্তিত্ব। খুলিটি যে জায়গায় পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে পাওয়া যায় বেশ কিছু ভাল্লুকের জীবাষ্মও। তা থেকে বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই খুলিটি সম্ভবত এক শিকারীর। হয়ত শিকার নিয়ে ঝগড়া থেকেই এই খুনের ঘটনা।ওই খুলিটি নিয়ে গবেষকদের মধ্যে সেই সময় শুরু হয়েছিল মত পার্থক্য। খুলিটি দেখে মনে হয়েছিলো কেউ এর মাথাটা থেতলে দিয়েছে। কেউ বলেছিলেন, পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন এই ব্যক্তি। কেউ বা বলেছিলেন, তাকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু সঠিক কী হয়েছিল, তখন তখনই সেই রহস্যের সমাধান করা যায়নি।

কয়েক বছর আগে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই রহস্যের সমধান করা সম্ভব হয়। প্রত্মতাত্তি¡করা জানিয়েছেন, এই খুলিটি একজন পুরুষের, যিনি আদিম যুগের একজন ইউরোপীয় নিয়ানডারথাল গোত্রের এক মানুষের। খুলিটিতে ছিল আঘাতের চিহ্ন, দু’টি ছোট আঘাত ছিল খুলিটির সামনে এবং পিছনে আরও একটি গভীর আঘাত। বিজ্ঞানীরা মাথার সামনের ছোট আঘাত দু’টিকে ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ বলেই মনে করেছেন। তবে মাথার পিছনের গভীর আঘাতটি মৃত্যুর আগের, না কি পরে হয়েছে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে তাদের। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, যে ভাবে তার মাথায় আঘাত করা হয়েছে, তার থেকে স্পষ্ট যে, তার শরীরেও আঘাত থাকতে পারে।বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করে আরও জানতে পারেন যে, ঘটনাটি ঘটেছে প্রায় ৩৩ হাজার বছর আগে। যে সময় প্রস্তর যুগের ইউরোপিয়ানরা বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরির মাধ্যমে নিজেদের উন্নত করছিল।

বিজ্ঞানীরা আঘাতের মাত্রা অর্থাৎ কী ভাবে আঘাত লেগেছিল এবং এই আঘাতে কতটা ক্ষতি হতে পারে তা পরিমাপ করতে একটি সিনথেটিক খুলির মডেল বানিয়েছিলেন। আঘাতটি পরীক্ষা করার জন্য সিনথেটিক খুলিটিতে ব্যাট ও পাথর দিয়ে নানা ভাবে আঘাত করেন। এই পরীক্ষা থেকে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে আসেন, এই ব্যক্তিকে হাতে ধরা কোনও পাথর অথবা কাঠের কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। যে সময় এই ঘটনাটি ঘটে, তখন মধ্য প্রস্তর যুগ থেকে নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ প্রবেশ করছিল। পরিবর্তন হচ্ছিল তাদের জীবনযাপনের। এই ঘটনা সেই সময়কার মানুষের ব্যবহারেরও পরিচয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, ৪ লক্ষ ৩০ হাজার বছর আগে প্রথম কোনও মানুষ খুন হয়। সম্প্রতি স্পেন থেকে উদ্ধার হওয়া মানুষের মাথার খুলি পরীক্ষা করে, বিজ্ঞানীদের ধারণা হয়েছে, তাকে খুন করা হয়েছিল। খুলিতে আঘাতের চিহ্ন থেকেই এতটা নিশ্চিত হয়েছেন গবেষকরা। গবেষকরা জানিয়েছেন, উত্তর স্পেন থেকে উদ্ধার হওয়া এই নরখুলিটি মধ্য প্লেইস্টোসিন যুগের, প্রায় ৪ লক্ষ ৩০ হাজার বছরের পুরনো। একটি গুহা থেকে ২৮টি নরকঙ্কাল তাঁরা উদ্ধার করেন, তার মধ্যেই রয়েছে ‘খুন’ হওয়া এই আদিম মানবের খুলিটি। ১৩ মিটার গভীরে সেই গুহায়, এত কঙ্কাল কীভাবে এল, তা রহস্যও তৈরি করে গবেষক-মনে। বিজ্ঞানীদের অনুমান, ব্যক্তিগত বিবাদের জেরে নিজেদের মধ্যে দাঙ্গাতেই মারা গিয়েছিল মধ্য প্লেইস্টোসিন যুগের ওই মানুষেরা।