কলকাতা ব্যুরো: দীর্ঘ দড়ি টানাটানির পর শুক্রবার দিনের শেষে নারদ মামলায় ধৃত চারজনের গৃহবন্দির নির্দেশই দিল দুই বিচারপতির বেঞ্চ। এ নির্দেশ প্রকাশ হওয়ার পরেই আলিপুর জেলে বন্দী মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম পুলিশের গাড়িতে চেপে তার চেতলার বাড়িতে পৌঁছে যান। বাকি তিন বন্দি সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায় গত সোমবার গ্রেপ্তারের পর থেকে অসুস্থতার কারণেই এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এদিন কলকাতা হাইকোর্ট তাদের জেল থেকে বাড়িতে পাঠানোর নির্দেশ দিলেও, আপাতত এ দিন রাত পর্যন্ত তারা তিনজন হাসপাতালেই রয়েছেন।
এদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল ও বিচারপতি অরিজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে এই রায় নিয়ে মতবিরোধ হওয়ায়, গোটা মামলা প্রক্রিয়ায় শোনার জন্য পাঁচ বিচারপতির নেতৃত্বে সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করেছে হাইকোর্ট। আগামী সোমবার বেলা ১১ টায় সেই বেঞ্চ একদিকে সিবিআইয়ের মামলার আবেদন ও অন্যদিকে জামিনের আবেদন বিবেচনা করে রায় দেবে।
গত ১৭ মে সিবিআই আদালত ওই চার জনের জামিন মঞ্জুর করার পরে সেই রাতেই সিবিআই এর আবেদন মেনে কলকাতা হাইকোর্ট রাত পর্যন্ত শুনানি করে। ওই রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়। পরবর্তীতে ১৯ মে শুনানি হলেও সেদিন কোন রায় প্রকাশ করেনি আদালত। বৃহস্পতিবার অনিবার্য কারণে প্রধান বিচারপতির এজলাস বসেনি। শুক্রবার সেই ডিভিশন বেঞ্চ বসার পর এই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির তরফে জানানো হয়, দুই বিচারপতির মধ্যে রায় নিয়ে মতান্তর তৈরি হয়েছে। এদিন বিকেলে এই ডিভিশন বেঞ্চের রায় আপলোড হয় ওয়েবসাইটে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৯ মে বিচারপতি অরিজিত বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা ঘটনার শুনানির পর ওই চার জনের জামিন এর পক্ষে মত দিয়েছেন। কিন্তু ওইদিনই নিজের রায়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তার ঠিক উল্টো পথে হেঁটে জামিন দিতে অরাজি হয়েছেন। সেই রায় সামনে রেখে শুক্রবার ধৃত চার জনকে গৃহবন্দী করার নতুন নির্দেশ জারি করে। আর তারপরেই একগুচ্ছ শর্ত দেওয়া হয় ধৃতদের বাড়ি যাওয়ার ক্ষেত্রে।
একই সঙ্গে হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও ওই পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে থাকবেন বিচারপতি ইন্দ্র প্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন, বিচারপতি বিচারপতি সৌমেন সেন।
এদিন হাইকোর্ট তার বিতর্কিত রায় দিনের শেষে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করলে প্রশ্ন উঠেছে, কেন ১৯ মে দেওয়া আদালতের রায় সেদিন প্রকাশ করা হয়নি। একই সঙ্গে যদি গোটা শুনানির জন্য নতুন করে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ বসাতে হয়, তাহলে কেন গত এক সপ্তাহ ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ মামলা শুনছিলেন। আইনজীবীদের বক্তব্য, সাধারণভাবে কোনো মামলায় দুই বিচারপতির রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে মতের অমিল হলে, তৃতীয় ব্যক্তির কাছে শুধুমাত্র ওই অংশটি যাচাই করার জন্য মামলা পাঠানো হয়। পরবর্তী ক্ষেত্রে মামলার বাকি বিচার সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের করা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি নতুন পাঁচজনের বেঞ্চ বসানোর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবিদের একাংশ।