এক নজরে

শেয়ার বাজারে ধস থেকে রেহাই পায়নি টাটা আম্বানিও

By admin

April 08, 2025

প্রায় কোনও সংস্থাই দেশের শেয়ার বাজারে ধসের হাত থেকে রেহাই পায়নি। এমনকি আদানি, আম্বানি থেকে শুরু করে টাটা গোষ্ঠীর শেয়ারও। শেয়ার বাজারে অস্থিরতার কারণে ‘ম্যাসিভ সেল অফ’ বা সর্বাত্মক শেয়ার বিক্রি হতে থাকে। অর্থাৎ লোকসানের ভয়ে বিনিয়োগকারীরা হুহু করে শেয়ার বিক্রি করতে থাকেন। ফলে সোমবার সর্বাত্মকভাবে ধসে পড়ে শেয়ার বাজার। অবশ্য মঙ্গলবার ছবিটা একটু অন্যরকম, গতকালের চেয়ে ভালো। তবে সোমবার আশঙ্কার জন্ম দিয়ে ছেড়েছিল। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ’-এর ‘নিফটি’ এবং ‘সেনসেক্সে’-এ একইদিনে প্রায় তিন শতাংশ পতন দেখা যায়। এই পতনের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক সংক্রান্ত ঘোষণার কথা বলা হচ্ছে। ট্রাম্প অনেক দেশের উপরই রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা করেছেন। যার মানে আমেরিকার পণ্য আমদানির উপর যে দেশ যেমন শুল্ক আরোপ করবে, তার উপর ভিত্তি করে সেই দেশের উপর আমেরিকা শুল্ক চাপাবে।

আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ‘ফেডারেল রিজার্ভ’ও জানিয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ আমেরিকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য নেতিবাচক হয়ে দাঁড়াতে পারে। শুধু তাই নয়, আমেরিকার অর্থনীতিও মন্দার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ওই প্রতিষ্ঠান। এদিকে এই ‘অস্থির’ পরিস্থিতিতে ভারতে সোমবার, শেয়ার বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাপক পরিমাণে শেয়ার ‘সেল অফ’ বা নির্বিকারে সর্বাত্মকভাবে শেয়ার বিক্রি হতে থাকে। এর সবচেয়ে বড় প্রভাব দেখা যায় আইটি কোম্পানি অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলোতে। পাশাপাশি, মেটাল স্টক এবং ফিনান্সিয়াল স্টককেও এর ফলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। বস্তুত পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, বাজারের অস্থিরতা মাপার সূচক ‘ইন্ডিয়া ভিআইএক্স’ও আতঙ্কের সৃষ্টি করে।’ইন্ডিয়া ভিআইএক্স’ শেয়ার বাজারের ওঠা-নামা পরিমাপের একটা সূচক। এটা এমন এক ধরনের সূচক যা ভারতীয় শেয়ার বাজারের আগামী ৩০ দিনের অস্থিরতা অনুমান করে তার পূর্বাভাস দেয়। এই সূচক গণনা করা হয়, ‘নিফটি ৫০-র’ বিকল্পের ‘বিড-আস্ক’ মূল্যের উপর ভিত্তি করে।যদি ‘ইন্ডিয়া ভিআইএক্স’ বেশি হয় তবে তার মানে দাঁড়ায় বাজারে ‘ভয়’ এবং ‘অনিশ্চয়তা’ বেশি রয়েছে। আর যদি ‘ইন্ডিয়া ভিআইএক্স’ কম হয়, তবে তার অর্থ বাজার ‘স্থিতিশীল’ রয়েছে।

এই আবহে, ভারতের শেয়ার বাজারে বড়সড় ধস লক্ষ্য করা গিয়েছিল সোমবার। সপ্তাহান্তে ছুটির পর সোমবার যখন ভারতীয় শেয়ার বাজার খোলে, তখন সারা বিশ্ব থেকে পাওয়া সংকেত এটা স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে এদিন বাজারে ব্যাপক পতন দেখা যাবে। সেই আশঙ্কাই বাস্তবায়িত হয়। তবে শুধুমাত্র ভারতেই নয়, সোমবার ইউরোপ এবং এশিয়ার শেয়ার বাজারেও ধস দেখা গিয়েছে। অস্থির পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। লোকসানের ভয়ে তাদের হাতে থাকা বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করতে থাকেন। সাংহাই, টোকিও, হংকং- সর্বত্র শেয়ার বাজারে ধস লক্ষ্য করা যায়। শেয়ার বাজারের এই অবস্থা কিন্তু দীর্ঘদিন দেখা যায়নি। তাইওয়ানে সোমবার বাজারে প্রায় ১০ শতাংশ পতন লক্ষ্য করা গিয়েছে এবং জাপানে নিক্কেই সূচকের পতন হয়েছে সাত শতাংশ। অন্যদিকে, শুক্রবার আমেরিকার বাজার সূচক ‘এসঅ্যান্ডপি ৫০০’-র প্রায় ছয় শতাংশ পড়ে গিয়েছিল। বিশ্ববাজারে এই ধসের প্রভাব দেখা গিয়েছে দেশীয় বাজারগুলোতেও।

উল্লেখ্য, ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টরদের অনেকেই নভেম্বর থেকে ভারতীয় বাজারে ব্যাপক পরিমাণে শেয়ার ‘সেল অফ’ করা শুরু করেছিল। গত মাসে তারা নিজেদের কৌশল পরিবর্তন করে এবং ভারতীয় শেয়ার কেনা শুরু করে। কিন্তু ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ঘোষণা তাদের কৌশল আবার বদলাতে বাধ্য করেছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ১৩ হাজার ৭৩০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলোর জন্য একের পর এক দুঃসংবাদ এসে চলেছে। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম প্রান্তিকেও কোম্পানিগুলির খারাপ ফলাফলের ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া সুদের হার নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। বুধবার ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের ঋণ নীতি নিয়ে পর্যালোচনা করার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে সুদের হার কিছু কমানোর কথা ঘোষণা করা হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।