কলকাতা ব্যুরো: ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সোমবার সকাল এগারোটা পনেরো নাগাদ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসে পৌঁছন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। প্রায় ঘণ্টা তিনেকের জেরার পর ইডি অফিস ছাড়লেন তিনি। উল্লেখ্য, এদিন সকালে রাহুলের বাড়িতে যান প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। দাদার পাশে দাঁড়াতে ইডি দপ্তর পর্যন্ত গিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। হাজিরার আগে দলের সদর দপ্তরেও গিয়েছিলেন রাহুল। সেখান থেকেই ইডির অফিসে পৌঁছন। একটানা তিন ঘণ্টার জেরার পর দুপুরে মাঝে অল্প সময়ের বিরতি৷ ফের ইডি অফিসে দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হল রাহুল গান্ধীর৷
ন্যাশনাল হেরাল্ড দুর্নীতি মামলায় সোমবার সকাল ১১টার পর থেকেই চলছে জিজ্ঞাসাবাদ৷ তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর রাহুলকে লাঞ্চ ব্রেক দেওয়া হয়৷ তখন ইডি অফিস থেকে বেরিয়ে তিনি সোজা চলে যান বাড়িতে৷ সেখানে খাওয়া-দাওয়া সেরে ফের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রাহুল৷ তবে ইডি অফিসের দিকে না গিয়ে রাহুলের কনভয় চলে যায় গঙ্গা রাম হাসপাতালের দিকে৷ রবিবার সকাল থেকে দিল্লির এই হাসপাতালে ভর্তি করোনা আক্রান্ত সোনিয়া গান্ধী৷ অসুস্থ মাকে দেখতে সেখানে যান রাহুল। ইডির জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে দু’জনের কথাবার্তা হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷ এর কিছুক্ষণ বাদে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আবার ইডির অফিসে ঢোকেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি৷ চলছে দ্বিতীয় রাউন্ড জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব৷
উল্লেখ্য, ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় প্রাথমিকভাবে রাহুল গান্ধীকে গত ২ জুন এবং তাঁর মা সোনিয়া গান্ধীকে আগামী ৮ জুন হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইডি। কিন্তু রাহুল গান্ধী তখন ব্যক্তিগত সফরে বিদেশে ছিলেন। তাই ইডির দপ্তরে হাজিরা দিতে পারেননি। বদলে চিঠি লিখে তিনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে অতিরিক্ত সময় চেয়েছিলেন। রাহুলের সেই অনুরোধ মেনে তাঁকে ১৩ জুন দিল্লিতে ইডির সদর দপ্তরে হাজিরা দিতে বলা হয়। সেই মতোই এদিন সকাল ১১টা ১৫ নাগাদ ইডি দপ্তরে হাজির হন কংগ্রেস নেতা। সঙ্গে ছিলেন দিদি প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এদিন কংগ্রেসের সদর দফতর থেকে পায়ে হেঁটে ইডির দফতরে যান রাহুল। তাঁর সঙ্গে কংগ্রেসের নেতা-সমর্থকদের ইডি অফিস পর্যন্ত মিছিল করে যাওয়ার দাবি ছিল। কিন্তু সেই অনুমতি দেয়নি দিল্লি পুলিশ।
এদিকে কংগ্রেস সাংসদকে তলব করার পরেই দলের তরফে জানানো হয়েছিল, দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখানো হবে। সেই মতোই সোমবার সকাল থেকেই দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দপ্তরের সামনে ভিড় জমাতে থাকেন সমর্থকেরা। ইডি দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। জনপ্রিয় সিনেমা ‘পুষ্পা দ্য রাইজ’এর সংলাপ অনুকরণে ‘ঝুঁকেগা নেহি’ পোস্টার নিয়ে প্রতিবাদ জানান।
পাশাপাশি এদিন কলকাতাতেও ইডি অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা। সিটি সেন্টার থেকে পদযাত্রা করে সিজিও কমপ্লেক্সের সামনে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন বলে জানা গিয়েছে।
কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বলেন, মোদি সরকার ভয় পেয়েছে। তিনি বলেন, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে ‘সত্যের সংগ্রাম’ চলবে। ব্রিটিশ সরকারও কংগ্রেসের লড়াইকে থামাতে পারেনি, সেখানে মোদি সরকার কী করবে? বেশকিছু বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে দিল্লি পুলিশ।
প্রসঙ্গত, রাহুল গান্ধী এবং সোনিয়া গান্ধীর মালিকানাধীন ‘ইয়ং ইন্ডিয়ান প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের একটি সংস্থা ২০১১ সালে ন্যাশনাল হেরাল্ড, কোয়াম-ই-আওয়াজ, এবং নবজীবন, এই তিনটি সংবাদপত্র ‘অ্যাসোসিয়েট জার্নালস লিমিটেডে’র কাছ থেকে অধিগ্রহণ করে। অভিযোগ ছিল, ওই অধিগ্রহণ নিয়ম মেনে হয়নি। ঘুরপথে মাত্র ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ‘অ্যাসোসিয়েট জার্নালস লিমিটেডের’ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়ে গিয়েছে কংগ্রেসের ফার্স্ট ফ্যামিলি পরিচালিত ‘ইয়ং ইন্ডিয়ান প্রাইভেট লিমিটেড’।
২০১২ সালে প্রথম অভিযোগ প্রকাশ্যে এলেও ইডি তদন্ত শুরু করে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সালে। ২০১৫ সালে এই মামলায় গান্ধীরা আগাম জামিন পেয়ে যান। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গেকে তলব করে ইডি। তাঁর বক্তব্যের পরেই ডেকে পাঠানো হয় সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীকে।