মঙ্গলবার কলকাতায় জোড়া কার্নিভাল। রাজ্য সরকারের পুজো কার্নিভাল রেড রোডে, অন্যদিকে চিকিৎসদের ঘোষিত ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ রানি রাসমণি রোডে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে ৬৫ দিন। কিন্তু এখনও মেলেনি বিচার। তাই এদিন ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারেরা মানব বন্ধন করবেন। তাঁদের কথায়, কিছু মানুষ উৎসবে মাতলেও, চিকিৎসকদের পক্ষে কোনওভাবেই এই পুজো কার্নিভাল মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই ‘দ্রোহের কার্নিভাল’-এর ডাক দিয়েছে সিনিয়র চিকিৎসকদের ৮টি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস। আরজি কর কাণ্ডে বিচার যেমন মেলেনি তবে এরই মধ্যে এই অপরাধের প্রতিবাদে আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও বেড়েছে। পুজোর মাঝেও জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন মঞ্চে সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা গিয়েছে। সেই আবহেই পুজো কার্নিভালের দিনেই অনুষ্ঠিত হবে ডাক্তারদের ‘দ্রোহের কার্নিভাল’। জুনিয়র ডাক্তারদের ‘আমরণ অনশন’-এর প্রতি সংহতি জানিয়েই জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ ডেকেছে।

আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের অন্যতম ‘মুখ’ দেবাশিস হালদার ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, পুজোর কার্নিভাল নিজের মতো চলবে। সঙ্গে চলবে ‘দ্রোহের কার্নিভাল’। তাঁরা পুজোর কার্নিভালে কোনওরকম বাধা দেবেন না। এই দ্রোহের কার্নিভালের জন্যে ধর্মতলা থেকে তৈরি করা হবে মানববন্ধন। তাঁরা নিজেদের মতো করে প্রতিবাদ জানাবেন। এদিকে দ্রোহের কার্নিভালে অনুমতি নেই পুলিশের। কিন্তু কেন এমন আবেদন? আয়োজক সংস্থার ব্যাখ্যা— ‘‘দূরবর্তী জেলা বা মহকুমা থেকে ক্ষোভের আগুনে দগ্ধ অসংখ্য মানুষের এই কেন্দ্রীয় কার্নিভালে অংশগ্রহণ করা স্বাভাবিক কারণেই খুব আসুবিধা। তাই জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সমস্ত গণতান্ত্রিক চেতনাদৃপ্ত সহনাগরিক, সাধারণ জনগণ এবং সমস্ত সামাজিক সংগঠনের কর্মীদের কাছে আবেদন রাখছে।’’ সেই আবেদনে বলা হয়েছে— ‘‘আপনার নিজের এলাকায় চিকিৎসক-সহ সমস্ত পেশার স্থানীয় প্রতিনিধি, সংস্কৃতিকর্মী এবং যত বেশি সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণকে সুনিশ্চিত করে এই সপ্তাহের মধ্যে সুবিধামতো দিন, সময়, স্থান নির্বাচন করে দ্রোহের কার্নিভাল সংগঠিত করুন। গান, কবিতা, পথনাটিকা, স্লোগান, মিছিল, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, ঢাকি ইত্যাদির সুনিপুণ সংমিশ্রণে প্রত্যেক জেলার অধিবাসী এক অভূতপূর্ব কার্নিভালের সাক্ষী থাকুক।’’

তবে ‘দ্রোহের কার্নিভাল’-এর ছাড়পত্র দেয়নি কলকাতা পুলিস। পুলিস সাফ জানিয়ে দিয়েছে কোনওভাবেই পুজো কার্নিভালের দিন ওই কর্মসূচি করতে পারবেন না সিনিয়র চিকিৎসকরা। এমনকি মুখ্যসচিব ইমেইল করে অনুরোধ করেছিলেন রেড রোডে পুজোর কার্নিভালের দিন রানি রাসমনি রোডে ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ করবেন না। কিন্তু অনুরোধ শোনেননি চিকিৎসকরা। ‘জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টর্‌স’-এর তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের আটকানো যাবে না। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও কার্নিভাল বন্ধ করতে চেয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। এমতাবস্থায়, ‘দ্রোহের কার্নিভাল’-এর কারণে পুজোর কার্নিভালে অশান্তি ছড়ানোরও আশঙ্কা করছে পুলিস। তাই এই অশান্তির পরিস্থিতি আটকাতে এক দিনের জন্য ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা জারি করেছে কলকাতা পুলিস। কলকাতার পুলিস কমিশনার মনোজ বর্মা সোমবার রাতে এক নির্দেশিকায় জানিয়েছেন কোন কোন এলাকা গুলিতে এই ধারা জারি করা হয়েছে। ফলে, ওই এলাকা গুলিতে এক সঙ্গে পাঁচজন বা তার বেশি কেউ জড়ো হতে পারবেন না। কোনও ধরনের মিছিল, সভা, ধর্না, জমায়েত বা বিক্ষোভও প্রদর্শন করা যাবে না। লাঠি বা কোনও অস্ত্র নিয়েও ঘোরা যাবে না।

এদিকে কলকাতা পুলিশের ধর্মতলা ও তার আশেপাশের এলাকায় ১৬৩ ধারা জারি করার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছে জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট৷ ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ কর্মসূচিতে যাতে কোনও বাধা উৎপন্ন না-হয়, তাই কলকাতা হাইকোর্টের জরুরি বেঞ্চে আবেদন করা হয়েছে৷ বেলা ২টোর সময় বিচারপতি রবি কিষাণ কাপুরের বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা৷ কার্নিভালের দিন হাওড়া থেকে গাড়ি ঘুর পথে চালানো হবে। রেড রোডে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। তার পরিবর্তে সাধারণ মানুষ চাইলে ধর্মতলার মেয়ো রোড হয়ে দক্ষিণ কলকাতার দিকে যেতে পারেন।  পুজো কার্নিভালে যাতে যান চলাচল ব্যবস্থায় কোনও রকমের বিরূপ প্রভাব না পড়ে, তার জন্য প্রায় ৪৭ জন ট্রাফিক সার্জেন্ট সকাল থেকেই রাস্তায় নেমেছেন।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version