ইঙ্গিত ছিলোই,তবে সরকার চাইলে তার গতি খানিক শ্লথ হতে পারতো
শ্রাবণী মূখাৰ্জী
সহযোগী অধ্যাপকসিমবায়োসিস স্কুল অফ ইকনমিক্স
দেবদুলাল ঠাকুর
সহযোগী অধ্যাপকসিমবায়োসিস ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের সামগ্রিক দেশীয় উৎপাদনকে প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলার অবধি নিয়ে যাবার কথা বলেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে যা পরিস্থিতি তাতে দুবেলা দুমুঠো অন্ন জোগাড় করতে পারলেই খুশি দেশের মানুষ। ট্রিলিয়ন , বিলিয়ন-এসব খায় না মাথায় দেয় সে নিয়ে ভাববার অবকাশ নেই। থাকলেও তা অতি বিলাসিতার পর্যায়ে পরে।৩১ সে অগাস্ট কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, চলতি আর্থিক বছরের এপ্রিল, মে ও জুন মাসে দেশের জিডিপি প্রায় ২৪% (২৩.৯ %) কমেছে।এর আক্ষরিক অর্থ হলো, ২০১৯ এর এপ্রিল , মে ও জুন মাসে দেশে যা জিডিপি ছিলো, ২০২০ তে তা ২০১৯ এর তুলনায় ২৪% কমেছে।যেটা দেখার সেটা হলো, এই কোবিড-১৯ এর রেশ আরও বেশ কিছুকাল যে চলবে, তাতে সন্দেহ নেই। আমাদের দেশে কোবিড-১৯ এর বাড়বাড়ন্ত হবার অনেক আগেই কিন্তু জিডিপি পড়তির দিকে ছিলো প্রায় ৫% র মতো। কোবিড-১৯ পরবর্তী সময়ে তা যে আরও তলানিতে যাবে, এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। ৫% হারে জিডিপি থাকলেও তা কোনোভাবেই ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারতো না। সেটা ভাবাও ঠিক নয়। অর্থাৎ, সরকারি স্তরে একটা ব্যাখ্যা তৈরি রাখার যথেষ্ট কারণ তখনো ছিল, এখনো আছে- কেন কর্মসংস্থান হলোনা তা নিয়ে। কিন্তু সব হিসেব ওলট-পালট করে দিয়ে গেল এই কোবিড-১৯। এখন কাজ চলে যাওয়াটাই যেন রুটিন।দারিদ্র আরও বাড়বে, এটাই যেন ললাট লিখন। সরকার কিংকর্তব্যবিমূঢ় – অতয়েব খামোখা আর সরকারকে দোষারোপ করে লাভ নেই . এটাকে ‘ প্রাকৃতিক মগজ ধোলাই’ বললে বোধকরি অত্যুক্তি হবে না। সেসব কথা থাক।বরং একটু দেখে নেওয়া যাক , এই সংকোচনের কারণ কি কি হতে পারে। জিডিপি-র প্রায় একটা বড় অংশ আসে আমার আপনার মত সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত খরচ বা ব্যাক্তিগত ব্যয় থেকে। এরপর, ব্যক্তিগত ব্যবসার থেকে আসে আরও একটি বৃহৎ অংশ। তৃতীয়ত , সরকারি তরফে দ্রব্য ও সেবা ক্ষেত্রে যে চাহিদা তৈরি হয় এবং সর্বোপরি দেশের মোট রপ্তানি – এই চারটে ক্ষেত্র থেকে যে উৎপাদন বা আয় হয় সেটার সমষ্টিগত রূপ এই জিডিপি।সুক্ষ বিশ্লেষণে না গিয়ে, খুব সাধারণ ভাবে বললে, এই চারটে নিয়েই দেশের জিডিপি।এটা ঠিক যে কাগজে কলমে সরকারি স্তরে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৭ % (১১ % থেকে ১৮%), কিন্তু বাকি তিনটে ক্ষেত্রে যে পরিমান ধস নেমেছে, সেটাকে সামলানোর জন্য যে পরিমার্জন সরকারি স্তরে ব্যয় দরকার ছিলো, এই ১১ % থেকে ১৮% তার ধারে কাছেও নেই। ফলস্বরূপ, জিডিপি-র এই সাংঘাতিক অধোগমন।বলা বাহুল্য, এটা সরল পাটিগনিত। এর জন্য অর্থনীতির পন্ডিত হবার প্রয়োজন নেই। এই ধস হয়তো নামতোই কিন্তু মোদ্দা কথা হলো, সরকার চাইলে এর গতি কিঞ্চিৎ কম হতে পারতো। ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অনেক রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে এই অবস্থা সামাল দেওয়া যায়।অনেক পন্ডিত মানুষ বলছেন যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এর উচিত রাজকোষের ঘাটতি পূরণ করা। এই অসম সময়ে দাঁড়িয়ে, যখন সরকার বিদেশী বিনিয়োগের কথা বলছে তখন অর্থনীতির এই তর্ক বিতর্ক চলতেই থাকবে।কিন্তু অতি বড় তার্কিক ও একমত হবেন যে এই কঠিন সময়ে একমাত্র সরকারি ব্যয় বাড়িয়েই ( যেমন মনরেগা, রাস্তা ঘাট বানানো, অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদি) ধীরে ধীরে আবার অর্থনীতির চাকা নিজের পথ খুঁজে পাবে। নয়তো বড় দেরি যাবে।