কলকাতা ব্যুরো: মহামারীর জেরে এমনিতেই এই বছরটা রাজ্য কেন, গোটা বিশ্বের কাছে একটা ব্যতিক্রমী বা খুব খারাপ বছর। তার উপরে আম্ফান ঘূর্ণিঝড় বড় ক্ষতি করে দিয়েছে এ রাজ্যের বেশ কিছু অংশের। গত কয়েকমাসের অচলাবস্থায় বহু মানুষের চাকরি গিয়েছে, বহু মানুষ আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েছেন। পরিযায়ী শ্রমিক এর হাহাকার দেখেছে গোটা বিশ্ব। গোটা দেশ ছন্নছাড়া অবস্থায়। এরইমধ্যে রাজ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে শুরু করেছে। দলগুলির নানা ইস্যুতে একে অপরের চাপানউতোর চলছে। সকলেই আগামী বছরে রাজ্যের শাসন দখল করতে মরিয়া হয়ে এই অবস্থার মধ্যে মাঠে নেমে পড়েছে।

আবার এই মহামারীর মধ্যেই চিনের সঙ্গে যুদ্ধ আবহ, পাকিস্তানের পিছন থেকে উস্কানি রয়েছে সমান তালে। ইতিমধ্যেই একসঙ্গে কুড়ি জনের বেশি ভারতীয় সেনাকে মেরে ফেলেছে চিনের বাহিনী। আবার সেই ইস্যুতে চিনকে ব্যবসায়িকভাবে বয়কাট চলায় দেশের আর্থিক ক্ষতি বড় রকমের। এরইমধ্যে পঞ্জিকা মতে এবার আবার ব্যতিক্রম দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রেও। সাধারণভাবে মহালয়ার এক সপ্তাহ পরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এবার এই ব্যবধান এক মাস হয়ে গিয়েছে। বাজারে সবজির দাম আকাশছোঁয়া। মাছ, মাংস অপর্যাপ্ত। ডাল সহ অন্যান্য সামগ্রীর দামের ঊর্ধ্ব গতি। আর্থিকভাবে সংকটে নাগরিকরা, তবু পুজো উপলক্ষে দু’বেলা দু’মুঠো ভালো খাবার যোগানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখনো পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। যোগাযোগব্যবস্থার দেশের অন্যতম প্রধান মাধ্যম, ট্রেন চলাচল প্রায় শুরু হয়নি বললেই চলে।

এমন ব্যতিক্রমী অবস্থার মধ্যেই বাংলায় দুর্গাপূজার অনুষ্ঠান কতটা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন ছিল। কিন্তু কিছু লোককে কাজ পাইয়ে দেওয়ার বা দুর্গাপূজার সঙ্গে যে আর্থিক দিক জড়িত, তাতে অক্সিজেন যোগাতে শপিং মল, দোকানপাট খুলে দিয়েছিল সরকার। ব্যাবসা কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে গিয়ে গত কয়েক দিন থেকে রাজ্যে হু হু করে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয়, হাইকোর্টকেই হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। আবেগ, বিশ্বাসকে দূরে সরিয়ে একেবারে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। যার ফলে এবার চারিদিকে আলো জ্বলছে, মন্ডপ হয়েছে, ঠাকুর এসেছে, পুজো হচ্ছে, ঘন্টা বাজছে, মন্ত্রোচ্চারণ করছেন পুরোহিত, কিন্তু যাদের জন্য এতসব, সেই দর্শকশূন্য হয়ে গিয়েছে মন্ডপ। শেষটাই মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো শেষ মুহূর্তে আবহাওয়াও হয়ে গিয়েছে বিরূপ। পূর্বাভাস অনুযায়ী, আরো দুইদিন প্রবল বর্ষণ, সঙ্গে ঝড়ের আশঙ্কার কথা শুনিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস।

রাজ্যের বহু এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সমুদ্র উপকূলের জেলাগুলিতে রেড অ্যালার্ট জারি রয়েছে। কোথাও যেন একটা চূড়ান্ত অব্যবস্থা, অনিশ্চয়তা সকলের চোখে ধরা পরছে। আর এখানেই বয়স্ক মানুষদের মনে কূ ডাক। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী চারিদিকে দেখছেন, অন্যায় আর অনাচার। তাদের মতে, মানুষ যখন পাপ, অন্যায়-অনাচারে ডুবে যায়, তখন রাষ্ট্রকে নানা ভাবে বুঝিয়ে দেয় প্রকৃতি। অশুভ শক্তির বিনাশে যে দেবী দুর্গার আহ্বান হয়, এবার সেখানেও অন্যরকম বার্তা। ধর্মে বিশ্বাসী বয়স্ক মানুষেরা মনে করছেন, আগামীতে দেশের সামনে আরো নতুন কোনো সংকট এলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তারা মনে করছেন এবার দেবীর আহ্বান এবং স্বর্গে গমন এর মাধ্যমেও তার ইঙ্গিত রয়েছে।

গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে, দেবী দুর্গার এবার ঘোটকে আগমন ও ঘো টকেই গমন। দেবী ভাগবত পুরাণ অনুযায়ী, দুর্গার আগমন ও গমন- কিসে হচ্ছে তার উপরে ভবিষ্যতের ঘটনার ইঙ্গিত দেয়। এবছর দেবী আসছেন ঘোটক বা ঘোড়ায় চড়ে। পুরাণ অনুযায়ী ঘোড়ার পিঠে চড়ে এলে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, ঝড়-ঝঞ্ঝা, শাসন ক্ষমতায় পরিবর্তন -এমন নানান অশান্ত অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।

এবছর গমন ও ঘোড়াতেই। তাই এটাও অশুভ। জ্যোতিষশাস্ত্র ও পুরান মতে, ঘোটকে গমনে সব ছত্রভঙ্গ ইঙ্গিত। এই পরিস্থিতিতে দেশে রোগ-শোক বাড়তে পারে।
যদিও এত ধর্ম বা শাস্ত্রে যারা বিশ্বাসী নন, তারাও অবশ্য একটা কথা মানছেন, কোন একটা ব্যতিক্রমী কিছু ঘটেছে। যার জেরে অশান্ত হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। বাদ নেই এ রাজ্যও।