এক নজরে

আগাম চাকরি ছেড়ে জন্মভিটে থেকে ভোটে দাঁড়ানোর আশায়

By admin

October 08, 2020

কলকাতা ব্যুরো: তার আমও গেল, ছালাও গেল। বাংলার অতি প্রচলিত এই প্রবাদটি মনে হয় এখন ঠিকঠাক বিহারের প্রাক্তন ডিজি গুপ্তেশ্বর পান্ডের জন্য। সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু নিয়ে কয়েকদিন আগেই যিনি জ্বলে উঠেছিলেন মুম্বাই পুলিশের বিরুদ্ধে। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের হয় ব্যাট ধরেছিলেন বিতর্কিত অভিনেত্রী রেহান চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে।

বিহারের সেই পুলিশের ডিজি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন নীতীশ কুমারের দলে। লক্ষ্য ছিল নিজের জন্মভিটে বক্সার জেলার থেকে বিধানসভা ভোটে বিজেডি র টিকিটে জিতে বিধানসভা যাওয়ার। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু তার সে আশায় জল ঢেলে দিল বিজে ডির -বিজেপি সিট ভাগাভাগির অংক।

বিজেডির সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে বক্সার আসন চলে গিয়েছে বিজেপির দখলে। ফলে এ যাত্রায় আর সেখান থেকে টিকিট পেয়ে জিতে আসার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে অবসরের পাঁচ মাস আগে পুলিশ অধিকর্তার চাকরিকে বাই বাই জানানো গুপ্তেশ্বর পান্ডের।

যদিও এইটা প্রথম নয়, এর আগেও ২০০৯ সালে নাকি তিনি পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনে দাঁড়াতে চেয়ে ছিলেন। গুপ্তেশ্বর পান্ডে ২০০৯ সালে এই বক্সা লোকসভা আসন থেকেই সেবার তিনি বিজেপির টিকিটে দাঁড়ানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে কথাবার্তা অনেকটাই এগিয়ে গেলেও সেবারেও শেষ যাত্রায় নিতিশ কুমার বাদ সাধেন। তিনি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার আবেদন করলেও তা গ্রহণ করেননি মুখ্যমন্ত্রী নিতিশ কুমার।

এবার বক্সা এবং শাহপুর দুটি আসোনি পেয়ে গিয়েছে বিজেপি। ফলে বাস্তবে গুপ্তেশ্বর পান্ডের জন্মভিটে থেকে ভোটে লড়ার আশা এই যাত্রায় আর নেই বললেই চলে। যদিও অনেকেই মনে করছেন, বিজেপি এখনো প্রথম তালিকায় ওই দুই আসনে নিজেদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। সে ক্ষেত্রে বিজেপি গুপ্তেশ্বর পান্ডেকে একটি আসন ছেড়ে দেবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেখানেও কাটা বিছিয়ে দিয়েছে সুশান্ত সিং রাজ পুতের রহস্য মৃত্যু বিতর্ক।

প্রথমত গুপ্তেশ্বর পান্ডে সেই সময় যেভাবে সরাসরি মহারাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়ে গিয়েছিলেন, তাতে এই যাত্রায় বিজেপির পক্ষে তাকে টিকিট দেওয়া কতটা বাস্তবোচিত হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমত এখনো সর্বভারতীয় দল বিজেপির জোট সঙ্গী শিবসেনা। ইতিমধ্যেই শিবসেনা হুঁশিয়ারি দিয়েছে গুপ্তেশ্বর পান্ডেকে টিকিট দেয়া হলে তার বিরুদ্ধে শিবসেনা প্রার্থী দেবে।

পাশাপাশি বিহারে বিজেপির তরফে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, আগামীতেও মহারাষ্ট্রে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদে মুখ। ফলে পান্ডেকে টিকিট পাইয়ে দিলে মহারাষ্ট্রে মারাঠা বিরোধী হিসেবে তাকে শিবসেনা যে দেগে দেবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত রাজনীতিক ফর নবিশ।

আবার মহারাষ্ট্রের চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ ইতিমধ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, যেভাবে সুশান্ত সিং রাজপুত এর মৃত্যুর পর পরিবারের তরফে তোলা খুনের অভিযোগে কার্যত মৌখিক সীলমোহর দিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন বিহার পুলিশের ডিজিপি, তা এখন মিথ্যে প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। এইমসের প্রাথমিক রিপোর্ট দেওয়ার পর পাশা এখন মুম্বাই পুলিশের দিকে। ফলে তাকে টিকিট পাইয়ে দিলে বিজেপির বিশেষ করে দেবেন্দ্র ফড়নবিসের জন্য মারাঠীদের তরফেই একটা বাড়তি চাপ আরো তৈরি হবে।তবে বিজেপি তার ব্যাপারে যতই উন্নাসিক বা আপত্তি দেখাক না কেন, তাতে অবশ্য বিহারের প্রাক্তন ডিজির খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তিনি যদি রাজি থাকেন, তাহলে নিতিশ কুমার তাকে অন্য যে কোন আসন থেকে জিতিয়ে আনতে পারেন।

তাছাড়াও যদি বি জে ডি -বিজেপি জোট ক্ষমতায় আসে, সে ক্ষেত্রে ক্যাবিনেটে একটা মন্ত্রিত্ব নিতিশ কুমার তাকে উপহার স্বরূপ দিতেই পারেন। ফলে বিজেপি কাটায় আপাতত বিদ্ধ হলেও গুপ্তেশ্বর পান্ডের আগামী দিন কুসুমাস্তীর্ণ হতেই পারে, শুধু নীতীশ কুমারের ছত্রছায়ায় থাকার জন্যই।