কলকাতা ব্যুরো: জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা। লাইনচ্যুত পাটনা থেকে গুয়াহাটিগামী বিকানির এক্সপ্রেসের একাধিক কামরা। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টা নাগাদ বেলাইন হয়ে যায় ১৫৬৩৩ আপ বিকানের-নিউ জলপাইগুড়ি এক্সপ্রেস। সন্ধ্যায় ময়নাগুড়ির দোমোহনি এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয়রা উদ্ধারকাজ শুরু করেছেন। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত শতাধিক। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০-২০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ইতিমধ্যেই চালু করা হয়েছে ট্রেনের হেল্পলাইন নম্বর ৯০০২০৪১৯৫১, ৯০০২০৪১৯৫৫ এবং ৯০০২০৪১৯৫২, ০৬৪৫২২৩০৬৯২। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে ৫১টি অ্যাম্বুলেন্স। জানা গিয়েছে, দোমহনির কাছে এদিন বিকানের এক্সপ্রেস হঠাৎ এমনভাবে ব্রেক কষে যে একটি বগির সঙ্গে অন্য বগির সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনায় একটি বগির উপর একটি বগি উঠে যায়। মোট চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে বলে খবর। কিন্তু কী কারণে ব্রেক কষতে হয়েছিল তা এখনও জানা যায়নি।
রেলের তরফে জানানো হয়েছে, ইঞ্জিনের পর থেকে মোট ১২টি যাত্রীবাহী কামরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় সম্ভাব্য ৪০ কিমি বেগেই চলছিল ট্রেন। ঘটনায় ইতিমধ্যে খোঁজ শুরু করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেল সূত্রে খবর ট্রেনে ছিলেন ৭০০-রও বেশি যাত্রী। তবে কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটলো? উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রেল। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, সিগন্যালিংয়ে সমস্যা ছিল না ৷ তদন্তকারীদের অনুমান, রেললাইনের ত্রুটি থেকেই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ৷
উল্লেখ্য, এদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সময়েই দুর্ঘটনার খবর পান মুখ্যমন্ত্রী। উচ্চপদস্থ কর্তাদের ঘটনাস্থলে যেতে নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি বৈঠক চলাকালীনই মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে ট্রেন দুর্ঘটনার খোঁজ নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। আলিপুরদুয়ারের বিভাগীয় রেল আধিকারিক দিলীপ কুমার সিং জানিয়েছেন, বিকানের এক্সপ্রেসের ৫টি কামরা লাইনচ্যুত হয়েছে। করোনার জেরে ট্রেনে যাত্রী কম ছিল। ইতিমধ্যে রেলের আধিকারিকরা উদ্ধারকারী ট্রেন নিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। ঘটনাস্থলে আছেন DRMও। নিউ ময়নাগুড়ি ও দোমোহনির মাঝখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
জলপাইগুড়ির জেলা শাসক মৌমিতা দেবী জানালেন তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে এখনও। তবে আহতের সংখ্যা প্রায় ৫০ জন বলে খবর।
ইতিমধ্যেই স্থানীয় আরপিএফ পাঠানো হয়েছে এলাকায়। উদ্ধারের জন্য পাঠানো হয়েছে বিশেষ ট্রেনও। ডিআরএম-সহ উচ্চপদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। শুরু হয়েছে উদ্ধারকার্য। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। ৫টি কামরা লাইনচ্যূত হয়েছে বলে রেল সূত্রে খবর।
আহত এক যাত্রী জানিয়েছেন হঠাৎ করেই ধাক্কা অনুভব করেন ৷ তার পর আর কিছু মনে নেই ৷ পরে দেখেন যে ট্রেনের বেশ কয়েকটি বগি লাইনচ্যূত হয়ে পড়ে রয়েছে ৷
ইতিমধ্যেই স্থানীয় হাসপাতালগুলিতে আহতদের পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে সন্ধে হয়ে আসার কারণে উদ্ধারকার্যে বেগ পেতে হচ্ছে কর্মীদের। তবে সূত্রের খবর ইতিমধ্য়েই আলোর ব্যবস্থা করে উদ্ধারের কাজ করা হচ্ছে। গ্যাসকাটার দিয়ে কেটে বার করা হচ্ছে কামরাগুলি, বের করা হচ্ছে যাত্রীদের। প্রাণ বাঁচাতে ঝাপ দিয়েছেন অনেকেই। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল থেকে ইতিমধ্যেই ৩০টি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক নার্সদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রস্তুতির। জানা যাচ্ছে আহতদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে। তবে অবস্থার অবনতি হলে অথবা অতি সঙ্কটজনক রোগীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। উদ্ধার কাজ করতে বেশ অসুবিধায় পড়েছে প্রশাসন। একে দুর্গম জায়গা, তার ওপর অন্ধকার। ঘটনাস্থলে প্রচুর মানুষ।