কে হবেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই নানা মহলে জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছিল। ভারতীয় জনতা পার্টি রেখা গুপ্তাকে বিধানসভার নেতা হিসেবে ঘোষণা করায় দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য সেই জল্পনার অবসান ঘটল। রেখা গুপ্তা ২০ ফেব্রুয়ারি রামলীলা ময়দানে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে শপথ নেবেন। বুধবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে দলের সদর দফতরে নবনির্বাচিত সব বিজেপি বিধায়কদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন যে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গোটা মন্ত্রিসভাও শপথ নেবে। এর আগে, দিল্লিতে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে, সুষমা স্বরাজ, শীলা দীক্ষিত, অতিশীর দায়িত্বভার সামলেছেন। আর এবার ফের একবার দিল্লি পেল মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। এদিন দিল্লিতে বিজেপির পরিষদীয় দলের বৈঠকে রেখা গুপ্তার নাম প্রস্তাব করেন পরবেশ বর্মা। উল্লেখ্য, দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে পরবেশ হারিয়েছিলেন আপের অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। অনেকেই মনে করেছিল, পরবেশই হতে পারেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। পরবেশ আগাগোড়াই রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তাঁর বাবাও ছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। তবে দিল্লির রাশ বিজেপি রাখল এক মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই। সুষমা স্বরাজের পর ফের এক মহিলাকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদে বেছে নিল বিজেপি।

২৭ বছর পর দিল্লিতে বিজেপি ফের ক্ষমতা দখল করল। বিজেপির শেষ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সুষমা স্বরাজ। তাঁর কন্যা দিল্লির সংসদ সদস্য বাঁশুরী স্বরাজের নাম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। কিন্তু উত্তরাখন্ড, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানার মতো দিল্লির ভারও তুলে দেওয়া হলো নতুন মুখের হাতে। দিল্লির রাজনীতিতে রেখা গুপ্ত স্বল্প পরিচিত। এই প্রথমবার টিকিট পেয়ে তিনি নির্বাচিত হন। সুষমা স্বরাজ, শীলা দিক্ষীত ও আতিশির পর রেখা হচ্ছেন দিল্লির চতুর্থ নারী মুখ্যমন্ত্রী।মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রবল দাবিদার অবশ্য ছিলেন প্রভেশ সিং বার্মা। তাঁর বাবা সাহেব সিং ভার্মা একসময় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। এবার ভোটে প্রভেশ হারান আম আদমি পার্টির নেতা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে।দিল্লি বিধানসভার ভোট গণনা হয়েছিল ৮ ফেব্রুয়ারি। একাধিক দাবিদারের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাকে বেছে নেওয়া হবে, তা ঠিক করতে যথেষ্ট সময় যায় শীর্ষ নেতৃত্বের। বুধবার প্রথমে দলের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক বসে। এরপর বোর্ড মনোনীত পর্যবেক্ষকেরা নির্বাচিত বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর বসে পরিষদীয় দলের বৈঠক। সেখানেই রাত সাড়ে আটটায় নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়। যদিও এর আগেই বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণ পর্বের চিঠি বিলি করা হয়। সেই চিঠিতে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কে শপথ নিচ্ছেন সেই উল্লেখ ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করতে বিজেপির টালবাহানা দেখে আম আদমি পার্টি কটাক্ষ করে বলেছে, পাঁচ বছরে অন্তত তিনজন মুখ্যমন্ত্রী পেতে দিল্লিবাসী যেন প্রস্তুত থাকেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আম আদমি পার্টির দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও আতিশির সঙ্গে কংগ্রেসের দিল্লি প্রদেশের সভাপতি দেবেন্দ্র যাদবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

পঞ্চাশ বছর বয়সি রেখা ছোট থেকেই আরএসএসের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। দিল্লি বিজেপির যুবনেত্রী হিসাবেও বেশ পরিচিত রেখা। ২০২৪ সালেই প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচনে জেতেন রেখা। ১৯৭৪ সালে হরিয়ানার জিন্দ জেলায় নন্দগড় গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা স্টেট ব্যাঙ্কের আধিকারিক ছিলেন। মাত্র দুবছর বয়সে হরিয়ানা ছেড়ে দিল্লিতে চলে আসেন রেখা। রাজধানীতেই পড়াশোনা করেছেন তিনি। প্রথমবার বিধানসভায় পা রেখেই সোজা মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসতে চলেছেন বেনিয়া সম্প্রদায়ের এই নেত্রী। এই নিয়ে চতুর্থবার মহিল মুখ্যমন্ত্রী পেতে চলেছে রাজধানী।

ছোট থেকেই আরএসএসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন রেখা। তারপর ছাত্র সংগঠন এবিভিপির হাত ধরে ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১৯৯৪ সালে দৌলত রাম কলেজের ছাত্র সংসদের সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরের বছর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সেখানকার ছাত্র সংসদেরও সম্পাদক হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৮ সালে স্পেয়ার পার্টস ব্যবসায়ী মণীশ গুপ্তকে বিয়ে করেন তিনি।২০০৭ সালে রাজনীতির ময়দানে রেখার প্রথম সাফল্য মেলে দিল্লির পুরভোটে। উত্তর পিতমপুরার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ২০২২ সালের পুরভোটে তাঁকে মেয়র পদপ্রার্থী শেলি ওবেরয়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী করে গেরুয়া শিবির। সেখানে যদিও সাফল্য পাননি। তবে দলের অন্দরে রেখার গুরুত্ব বাড়তে থাকে। সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনেও আপের ১০ বছরের শক্ত ঘাঁটি শালিমার বাগে রেখার উপরে আস্থা রেখেছিল বিজেপি। ২৯৫৯৫ ভোটে আপের বন্দনা কুমারীকে হারান রেখা। প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচনে জেতা ‘আনকোরা’ মুখকেই মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য বেছে নিল বিজেপি। প্রবেশ বর্মার মতো হেভিওয়েটকেও পিছনে ফেলে দিলেন রেখা। উল্লেখ্য, দেশে একাধিক রাজ্যে বিজেপি সরকার থাকলেও রেখাই গেরুয়া শিবিরের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version