কলকাতা ব্যুরো: উৎসবের মরশুম বানচাল করাই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। আর সেই কারণেই নিশানা করা হয়েছিল ভারতের বাণিজ্যনগরী মুম্বই, রাজধানী দিল্লি-সহ ছয় শহরে একযোগে বিস্ফোরণ ঘটানোর। আর এজন্য দুষ্কৃতীদের প্রশিক্ষণে টাকা ঢেলেছিল ডি কোম্পানির নেতা দাউদ ইব্রাহিমের ভাই আনিশ ইব্রাহিম। প্রশিক্ষণে সাহায্য করেছিল পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। কিন্তু দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সাঁড়াশি আক্রমণে জঙ্গিদের যাবতীয় ছক বানচাল হয়ে গেলো। রাজস্থান, দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে মঙ্গলবার পুলিশের জালে ধরা পড়ে ছয় জঙ্গি। ধৃতদের মধ্যে দু’জন পাক জঙ্গি সংগঠন লস্কর এবং জৈইশের সদস্য বলে দাবি পুলিশের।

ধৃত জঙ্গিরা হলো জিসান কামার, ওমর, জান মোহাম্মদ, লালা,আবু বক্কর ও মোঃ আলী জাভেদ। এদের মধ্যে জিসান কামার ও ওমর এর অস্ত্র বিস্ফোরক প্রশিক্ষণ হয়েছে পাকিস্তানে। ধৃত জঙ্গিদের কাছ থেকে মিলেছে বিস্ফোরক এবং অস্ত্র।

দিল্লি পুলিশের স্পেশাল কমিশনার নীরজ ঠাকুর জানিয়েছেন, নবরাত্রি ও দীপাবলিতে নাশকতা ছড়াতে ভারতে ঢুকেছিল এই ছয় জঙ্গি। তাদের টার্গেট ছিল রাজধানী দিল্লি, মুম্বই-সহ যোগী রাজ্যের চার শহর প্রয়াগরাজ, লখনউ, রায়বরেলি এবং প্রতাপগড়।

দিল্লি পুলিশের আধিকারিক নীরজ ঠাকুর আরও জানিয়েছেন, ধৃতদের সঙ্গে পাক যোগ স্পষ্ট কারণ, তারা জেরায় স্বীকার করেছে দাউদ ইব্রাহিমের ভাই আনিশ ইব্রাহিমের টাকায় তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল আইএসআই এবং ওই প্রশিক্ষণ শিবিরে কমপক্ষে ১৪ থেকে ১৫ জন বাংলাভাষীও প্রশিক্ষণ নিয়েছে বলে দাবি দিল্লি পুলিশের। দিল্লি পুলিশ জানায়, ধৃত জঙ্গিরা জেরায় স্বীকার করেছে ওই ব্যক্তিরা বাংলাদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছিল।

প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই কমপক্ষে ২০ থেকে ২২ জন বাংলাভাষীর জঙ্গি শিবিরে যোগের খবর প্রকাশ্যে এসেছিল। আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতে জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে দিল্লিকে সতর্ক করা হচ্ছিল। বিশেষ করে উপত্যকায় নাশকতার ছক আরও বাড়বে বলেও আগাম সতর্ক করেছিলেন গোয়েন্দারা। এই সতর্কতার মধ্যেই উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লি পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হল এই ছয় জঙ্গি।

দিল্লি পুলিশের এক কর্তার দাবি, রাজস্থানের কোটায় নির্দিষ্ট সূত্রে খবর পেয়ে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয় সমীর নামের এক ব্যক্তিকে। তাকে জেরা করে এরপর দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয়। তালিবানকে কাজে লাগিয়ে জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপ বাড়াবে পাকিস্তান। গত কয়েকদিন এই আশঙ্কাই করছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের আশঙ্কাই সত্যি হলো।

এই ছয় জঙ্গির গ্রেপ্তারে আরও দু’টি বিষয় স্পষ্ট। এক, এখনও ভারতে নাশকতায় সক্রিয় ডি কোম্পানি। আর দুই, লস্কর এবং জইশের মডিউল হিসাবে বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন জেএমবির ভূমিকা। এই ছয় জঙ্গির গ্রেফতারের ঘটনায় আরও একটি বিষয়ও সামনে এলো। তা হল, ফের কথার খেলাপ করলো তালিবান কারণ, দোহার বৈঠকে তারা দাবি করেছিল, জঙ্গিদের জন্য আফগান মাটি নয়। কিন্তু আদতে দেখা যাচ্ছে হাক্কানিদের চাপে ভারতের বিরুদ্ধে নিজেদের অপারেশন শুরু করে দিল লস্কর এবং জইশ। 

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version