কলকাতা ব্যুরো: কলকাতা পুরনিগমের ভোটে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা ও সন্ত্রাসের অভিযোগে হাইকোর্টে দায়ের হলো জোড়া মামলা। এদিন হাইকোর্টে সিপিআইএম ও সিপিআই জোড়া মামলা দায়ের করেছে। আগামীকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার এই দুই মামলার শুনানি সম্ভাবনা।
খিদিরপুরের অন্তর্গত ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী ফৈয়াজ আহমেদ খান এদিন মামলার আবেদনে জানিয়েছেন,
১৯ ডিসেম্বর কলকাতায় ভোট লুঠ হয়েছে, তার সঠিক তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) বা কোন নিরপেক্ষ তদন্তকারী সংস্থা দ্বারা স্বচ্ছভাবে তদন্ত করা হোক।
যে সমস্ত বুথে অস্বাভাবিক ভোট পড়েছে সেই সমস্ত বুথের ভোট বাতিলের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
আগামী নির্বাচনগুলিতে ১৪৪ ধারা বুথ থেকে ৩০০ মিটার পর্যন্ত করা হোক।
কোনও বুথ থেকে বিরোধী এজেন্টকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠলে সেই বুথের ভোট বাতিল করা হোক।
আগামী নির্বাচনে ভোটের ৭ দিন আগে থেকেই ভোটারদের মনোবল বাড়াতে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামাতে হবে।
প্রতিটি বুথে সিসিটিভি সচল আছে কিনা এবং সেগুলো যথাযথ কাজ করছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।
প্রসঙ্গত রবিবার পুরভোট চলাকালীন শহর জুড়ে বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা উঠে আসে। আক্রান্ত হন খিদিরপুরের অন্তর্গত ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী ফৈয়াজ আহমেদ খানও। ভোটগ্রহণ চলকালীন একদল বহিরাগত সেখানে ঢুকে পড়ে বলে অভিযোগ ফৈয়াজের। তাদের সামনে পড়ে জখম হন ফৈয়াজ। তাঁর পায়ে চোট লাগে। নাক থেকেও রক্ত পড়তে দেখা যায়। পাশাপাশি হাতেও আঘাত পান ফৈয়াজ। তাঁর গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
সিপিএম প্রার্থী ফৈয়াজের দাবি, প্রথমে তাঁর এজেন্টকে বেধড়ক মারধর করা হয়। তার পর তাঁকে মাটিতে ফেলে মারতে শুরু করে দুষ্কৃতীরা। গাড়িতে উঠে পালাতে গেলে ভাঙচুর করা হয়। দুষ্কৃতীদের বাধা দেওয়ার কোনও চেষ্টাই পুলিশ করেনি বলে অভিযোগ ফৈয়াজের। আর এই হামলার প্রতিবাদে দুপুরে খিদিরপুর মোড়ে বসে প্রতিবাদ জানান আক্রান্ত ফৈয়াজ। আর এই ঘটনার প্রতিবাদের বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে মামলা দায়ের করলেন আহত এই সিপিএম প্রার্থী।
অন্যদিকে কলকাতা পৌরনিগমের ভোটে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা ও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ নিয়ে বুধবারই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সিপিআইয়ের দুই প্রার্থী। মৌসুমী ঘোষ ও বিমান গুহঠাকুরতা নামে ওই দুই প্রার্থী যথাক্রমে ৩৬ ও ১২৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, ভোটার তালিকা সংশোধন করা হয়নি। পুরনো ভোটার তালিকা অনুযায়ী এই পৌরভোট হয়েছে। ফলে যে সমস্ত ভোটার কলকাতা ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন, তাঁরা হয়ত এখন সেই জায়গার ভোটার, তার পরও তাঁদের নাম এবারের তালিকায় ছিল। পাশাপাশি যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের নামও তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। ওই সব জায়গায় ভোট পড়েছে।
একই সঙ্গে অভিযোগ, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে যে বোমাবাজি হয়েছিল ভোটের দিন, সেই সময় পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। প্রার্থীরা বারবার প্রশ্ন তুলেছেন, ভোটারদের নিরাপত্তা কোথায়? তারপরও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দুই প্রার্থীর তরফে আইনজীবী রাজনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, ১৯ ডিসেম্বর ভোটের দিন ও ২১ ডিসেম্বর গণনার দিন কী হয়েছে, তা সবাই দেখেছে। আমাদের অভিযোগ নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য পুলিশের সামনে ভোট লুঠ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে করতে। পাশাপাশি রাজ্য পুলিশ নিষ্ক্রিয় থেকেছে। এর বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের হয়েছে। তিনি আরও জানান, জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।