কলকাতা ব্যুরো: আনুষ্ঠানিক পুজো মানে সপ্তমী আরও দুদিন পর। এই চতুর্থীতেই শারোৎসব মুখর বাংলায় দৈনিক সংক্রমণ ৪ হাজারের ওপর উঠে গেল। কিছু কিছু জেলায় ঠেলে বাড়ছে পজিটিভিটির হার (টেস্টের নিরিখে সংক্রামিতের শতকরা হার)। বিশেষ করে কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনায়। এই হার কোথাও কোথাও রাজ্যের গড়ের তিন গুণ পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে।
রাজ্যের ৫টি জেলা নিয়ে উদ্বেগের মেঘ বেশি ঘণীভূত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪,০২৯ জন। এর মধ্যে কলকাতায় ৮০৯ ও উত্তর ২৪ পরগনায় ৮৭১। একদিন আগের রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে, নাইসেডে পরীক্ষিত লালারসের নমুনায় পজিটিভিটি রেট ১৮, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে এই রেট ২৬ এবং সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে ৩৭।
রাজ্যের গড় হার কিন্তু ৮.০৪। এই পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে মূলত কলকাতা ও দুই ২৪ পরগনার বাসিন্দাদের করোনা টেস্ট হয়। ফলে এই তিন জেলা এবং হাওড়ার ভয়াবহতা বোঝাই যাচ্ছে। এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে মৃত্যুর খতিয়ানে। গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় করোনা প্রাণ কেড়েছে ১৭ জনের, উত্তর ২৪ পরগনায় ১৩ জনের, হাওড়ার জনের, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩ জনের ও হুগলির ২ জনের।
গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের। দৈনিক মৃত্যু গত প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে ৬০-এর ওপরে রয়েছে। কলকাতা ও লাগোয়া জেলাগুলিতে পজিটিভিটি রেট ৪০ হয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। কিন্তু দৈনিক করোনা টেস্ট কিছুতেই তেমন ভাবে বাড়ানো হচ্ছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় টেস্টের সংখ্যা ৪৩,৭৬২। টেস্ট না বাড়ানোর কোন ব্যাখ্যা কিন্তু সরকার দেয়নি। সুস্থতা আবার সামান্য কমেছে। মঙ্গলবারের পরিসংখ্যানে ৮৭.৪৩। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ৩,৩৮২। দেশের ক্ষেত্রে যেখানে করোনা আক্রান্তের চেয়ে সংক্রমণমুক্তের সংখ্যা বেশি, বাংলায় সেখানে উল্টো ছবি। রাজ্যে মোট সংক্রমণমুক্ত এখন ২,৮৭,৭০৭ আর আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৩,২৯,০৫৭।
মোট মৃত্যু ৬,১৮০। কলকাতায় গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৮০৪ জন, উত্তর ২৪ পরগনায় ৮৪০, হাওড়ায় ২৯৭, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৫৫ ও হুগলিতে ২৩১। এই জেলাগুলি বাদে পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২ জন করে মৃত্যু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে। বাঁকুড়ায় মৃত ১। কিছু কিছু জেলায় সুস্থতার পরিসংখ্যান খুব খারাপ। যেমন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২২৫ জন, করোনামুক্ত হয়েছেন ৫৫ জন। নদিয়ার ক্ষেত্রে এই দুই পরিসংখ্যান যথাক্রমে ১৫৬ ও ১২ এবং মুর্শিদাবাদে যথাক্রমে ৯৩ ও ৮।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝে পুজোর ঠিক মুখে সরকারি হাসপাতালগুলিতে করোনা চিকিৎসার জন্য ২,২৭৪টি বেড বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন। অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বাড়াতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরবঙ্গের কিছু জেলায় প্রত্যেক পুজোমণ্ডপে একটি করে অ্যাম্বুলেন্স বা গাড়ি রাখতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
আগুন লাগার পর যেমন কুঁয়ো খুঁড়ে জল তুলে আর আগুন নেভানোর সময় পাওয়া যায় না, তেমনই সংক্রমণের এই তীব্রতার মুখে বেড বা অ্যাম্বুলেন্স বাড়িয়ে মহামারি কতটা আটকানো যাবে, তা নিয়ে সংশয় কিন্তু থেকেই গেল।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version