কলকাতা ব্যুরো: পুজো যত এগিয়ে আসছে, করোনা ভাইরাসের দাপট তত বাড়ছে। শুক্রবারের পরিসংখ্যানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩,৮০০ ছুঁইছুঁই। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংখ্যাটা ৩,৮০০ পার হয়ে ৩,৯০০-র কাছাকাছি (৩, ৮৬৫)। বোঝাই যাচ্ছে, পুজো আসার আগেই দৈনিক সংক্রমণ ৪ হাজার পার হয়ে যেতে পারে। আর পুজোর পর কী হবে, তা ভাবতেও শিউড়ে উঠছেন বিশেষজ্ঞরাই।
নভেম্বরের গোড়ায় রাজ্যে অ্যাক্টিভ পজিটিভের (আক্রান্ত কিন্তু করোনামুক্ত নন এমন) সংখ্যা ৪০ হাজারে পৌঁছে যাবেন বলে তাঁরা প্রবণতা দেখে আঁচ করছেন। এই আঁচ করার অস্ত্র হল এফেক্টিভ রিপ্রোডাকশন (আর ভ্যালুও বলা হয়)। একজন করোনা আক্রান্ত আরও কতজনকে সংক্রামিত করার ক্ষমতা রাখেন, সেই মাত্রাটাই হল আর ভ্যালু।
রাজ্যে সেপ্টেম্বর মাসে এই আর ভ্যালু ছিল ০.৯৩। খেয়াল করলে মনে পড়বে, সেইসময় প্রায় টানা ছয় সপ্তাহ বাংলার করোনা পরিস্থিতি স্থিতাবস্থায় ছিল। ০.৯৩ আর ভ্যালু মানে প্রতি ১০০ জন আরও ৯৩ জনকে সংক্রামিত করতে পারেন। এখন এই অক্টোবরের মাঝামাঝি এসে সেই আর ভ্যালু হয়ে গিয়েছে ১.০৭, অর্থাৎ প্রতি ১০০ জন আরও ১০৭ জনকে সংক্রামিত করতে পারেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের টাস্কফোর্সের সদস্য সিতাভ্রু সিংহ জানিয়েছেন, এই আর ভ্যালু যদি এখন আর নাও বাড়ে, তবুও নভেম্বরের গোড়ায় গিয়ে অ্যাক্টিভ পজিটিভের সংখ্যা ৪০ হাজারে ঠেকে যেতে পারে। তখনই দেখা দেবে হাসপাতালের শয্যা সংকট। চিকিৎসক, নার্সের সংকট দেখা দিতে পারে। কেন না, তাঁরাও বিপুল সংখ্যায় তখন সংক্রামিত হতে পারেন বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। রাজ্য সরকার পুজোয় উৎসাহ দিচ্ছে বটে, কিন্তু ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করে এর মধ্যে একটা স্লোগান সামনে এনেছে, বিশে পুজো, একুশে উৎসব। কিন্তু কেউ তাতে কান দিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে না। সে কারণেই করোনা গ্রাফ উঠছে।
যে দুটি জেলা সবচেয়ে শঙ্কার কারণ, সেই কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনায় দৈনিক সংক্রমণ প্রায় ৮০০ ছুঁয়ে ফেলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৮৪ জন, উত্তর ২৪ পরগনায় ৭৯২ জন। দৈনিক মৃত্যু খুব না বাড়লেও কমছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনার বলি ৬১ জন। এঁদের মধ্যে ১৫ জন কলকাতার, ১৫ জন উত্তর ২৪ পরগনার। এছাড়া ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে হাওড়ায়, ৪ জন দক্ষিণ ২৪ পরগনার, ৪ জন হুগলির, ৪ জন নদিয়ার, ৩ জন পূর্ব মেদিনীপুরের, ১ জন পশ্চিম বর্ধমানের ও ১ জন পশ্চিম মেদিনীপুরের। কলকাতায় গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৬০৮ জন, উত্তর ২৪ পরগনায় ৬১৭ জন। সুস্থতার হারেও কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ৩,১৮৩ জন, সংখ্যাটা সামান্য হলেও আগের দিনের চেয়ে কম।
হাওড়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৪৫, সংক্রমণমুক্ত ১২৫ জন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এই দুই সংখ্যা হল যথাক্রমে ২৫৩ ও ২৭২, হুগলিতে ১৪৮ ও ২০৩, নদিয়ায় ১৫৮ ও ১৫৪ এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ১৫৪ ও ১২৭। দৈনিক করোনা টেস্ট কিন্তু সেই ৪৩ হাজারের (৪৩, ৪২৮) ঘরে দাঁড়িয়ে আছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝাতে আরেকটি পরিসংখ্যান দেওয়া যেতে পারে।
করোনা প্রাদূর্ভাবের পর থেকে জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রাজ্যে করোনা আক্রান্তের মোট সংখ্যা ছিল ৫২ হাজারের আশেপাশে। আর এই অক্টোবরের ১ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৫২ হাজারের বেশি। অর্থাৎ প্রথম দিকে চার মাসে যতজন আক্রান্ত হয়েছিলেন, শুধু শেষ ১৫ দিনেই সেই সংখ্যা ছুঁয়ে ফেলেছে বাংলা।