কলকাতা ব্যুরো: আগে অভিযোগ উঠেছিল চিকিৎসায় গাফিলতির। সেই অভিযোগের সারবত্তা পেয়ে ক্লিনিক্যাল এস্তব্লিশমেন্ট কমিশন ওই নার্সিংহোমকে দু লক্ষ টাকা জরিমানা করেছিল। আর এবার বেলঘড়িয়ার সেই মিডল্যান্ড নার্সিংহোম এর বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ। করোনায় মৃত রোগীদের দেহ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে নিয়ে পাচার করার অভিযোগে ওই নার্সিংহোম এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলো হাইকোর্টে। এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করার পরে সেই রোগিনী ওই নার্সিংহোমেই রহস্যজনকভাবে মারা গিয়েছেন বলে অভিযোগ তার পরিবারের। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থর নির্দেশ, সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনও রেখে দেওয়া সেই রোগিনীর মৃতদেহের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করতে হবে। এন আর এস মেডিকেল কলেজ haspatl তার জন্য তিন সদস্যের কমিটি গড়বে। একই সঙ্গে ওই চিকিৎসকদের দেখতে হবে, ওই রোগিনীর কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ খোয়া গিয়েছে কিনা।

কাকলি সরকারের দ্বিতীয় বার ময়না তদন্তের নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। এন আর এস এর তিন জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কে নিয়ে এই দ্বিতীয় ময়না তদন্ত করতে হবে।
অভিযোগ মিডল্যান্ড নার্সিংহোমে করোনা নিয়ে ভর্তি হন কাকলি দেবী। হঠাৎ তার পরিবারের কাছে ফোন আসে তার অবস্থা খারাপ। কাকলি দেবীর ভাই তৎক্ষণাৎ ওই নার্সিংহোমে যান। তিনি আইসিইউতে ঢোকার পর তার দিদি তার কাছে জানান, এই নার্সিংহোমে একটা racket চলছে। রোগীদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তাকে বাঁচাতে এখান থেকে নিউল্যে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কাকলি দেবী ভাইকে এই কথার বলার সঙ্গে সঙ্গে একজন নার্স এসে তাকে একটি ইনজেকশন দেন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হয় কাকলি দেবীর। যদি ঘড়ির সময় অনুযায়ী মৃত্যুর গু ঘণ্টা পরেও তাকে অক্সিজেন দেয়া হয়েছে বলে নথি রয়েছে হাসপাতালের।
এর পরেই তাঁর পরিবার ময়না তদন্তের দাবি জানায়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর দেখা যায় কাকলি দেবী মুখ দিয়ে গ্যাজলা উঠে মারা গেছেন। হাতেও তার ইনজুরি রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে এই ধরনের পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হবে।
এর পরেই তাঁর পরিবার রাজ্যের হেলথ রেগুলেটরি কমিশনের দ্বারস্থ হন। কমিশনের চেয়ারম্যান নির্দেশ দেন ওই মিডল্যান্ড নার্সিংহোম কোন রোগী ভর্তি করতে পারবে না। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয়। এতে পুরো সন্তুষ্ট না হয়ে পরিবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। হাইকোর্টে পরিবারের দাবি ৩০৪ নয়, ৩০২ ধারায় মামলা তদন্ত হোক। বেলঘড়িয়া থানা নয় সিআইডি বা অন্য কোনো তদন্ত সংস্থাকে দিয়ে এর তদন্ত করানো হোক। বিচারপতি রাজশেখর মান্থা দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এরাজ্যে বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম এর বিরুদ্ধে কিডনি পাচারের জড়িত থাকার অভিযোগ আগেই উঠেছে। সম্প্রতিক অসমের একটি চক্র ধরা পড়েছে, অসমের গ্রাম থেকে টাকার লোভ দেখিয়ে দালালরা লোক নিয়ে এসে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল কিডনি বিক্রি করাতো বলে অভিযোগ। এবার করোনা রোগীদের দেহ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে নিয়ে বিক্রির চক্র চালানোর অভিযোগ যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তারা মনে করছেন, যেহেতু করোনা আক্রান্ত হলে তাদের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়, সেই সুযোগে তাদের অঙ্গহানি করলে তা টের পাওয়ার উপায় নেই, যদি সেই রোগী মারা যান। সেই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ একেবারে অমূলক নয় বলেই মনে করছেন চিকিৎসক মহল। তাই তারা চাইছেন, খুব গুরুতর হিসেবে ধরে নিয়ে এর তদন্ত হোক।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version