কলকাতা ব্যুরো: হলদিয়ায় ঠিকাদারদের ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙার হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্পষ্ট বার্তা, তৃণমূল করলে ঠিকাদারির পোষাক পরা চলবে না। আগামীদিনে হলদিয়া পুরভোটে কোনও ঠিকাদার প্রার্থী হবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন অভিষেক। এদিন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের হুঁশিয়ারি, যে সমস্ত ঠিকাদাররা অনুগামী পরিচয় দিয়ে শ্রমিকদের প্রাপ্য বঞ্চিত করেছে, তাদের শ্রীঘরে ঢোকানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। একইসঙ্গে শ্রমিকদের সঠির প্রাপ্য পাইয়ে দিতে নেতাদের পথে নামার নির্দেশও দিলেন তিনি।

একুশের বঙ্গ বিধানসভা ভোটের পর এই প্রথমবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর খাসতালুকে পা রাখলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। শনিবার হলদিয়া শিল্পতালুকের শ্রমিক সমাবেশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজেকে ‘শ্রমিকবন্ধু’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন অভিষেক। সেখান থেকে সাফ বার্তা, আপনাদের যা সমস্যা তা সরাসরি আমাদের জানান। আমরা শুনব আপনাদের কথা।

এদিন অভিযুক্ত ১৫-২০ জন ঠিকাদারকে উদ্দেশ্য করে অভিষেকের হুঁশিয়ারি, যারা মনে করছেন অনুগামী সেজে শ্রমিকদের প্রাপ্য কেটে, তাঁদের মুখে গ্রাস কেড়ে নেবেন। শ্রমিকদের মাথার উপর ছড়ি ঘোরাবেন, তাঁদের উদ্দেশে এই মঞ্চ থেকে আমি হুঁশিয়ারি দিচ্ছি। ১২ ঘণ্টা কাজ করিয়ে ৮ ঘণ্টার প্রাপ্য দেবেন, তা চলতে দেওয়া যাবে না। আমি এটা হতে দেব না।

পাশাপাশি দলের গুটিকয়েক ঠিকাদার নেতার উদ্দেশে তৃণমূল সাংসদের বার্তা, যাঁরা মনে করছে, উপরে টাকা পৌঁছে দিতে হবে বলে শ্রমিকদের টাকা নয়ছয় করব, এটা চলবে না। ঠিকাদারিও করব আবার তৃণমূলও করব, সেটা চলবে না। একইসঙ্গে স্থানীয়দের কাজে অগ্রাধিকার দেওয়ার পক্ষেও সওয়াল করেন তিনি।

এরপরই অভিষেক শ্রমিকদের কাছ থেকে ১০০ দিন সময় চান। এই সময়ের মধ্যে যে চাটার্ড অফ ডিমান্ড তৈরি হবে, সেখানে কোনও ঠিকাদার থাকবে না বলে কথা দেন তিনি। একইসঙ্গে অভিষেকের স্পষ্ট বার্তা, দল বদল করে যারা তৃণমূলে এসেছেন তাঁরা হলদিয়া পুরসভা ভোটে টিকিট পাবেন না। কোনও ঠিকাদারও ভোটের টিকিট পাবে না। এদিনের সমাবেশের মঞ্চ থেকে শ্রমিক নেতাদের অভিষেকের বার্তা, শ্রমিকদের প্রাপ্য পাইয়ে দিতে রাস্তায় নামুন।

এছাড়াও এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিশানা করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিদের একাংশকে। ‘তল্পিবাহক’ বলে কটাক্ষ করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তবে তাঁর এমন মন্তব্যকে ভালো চোখে দেখছেন না অনেকেই। ইতিমধ্যে অভিষেকের মন্তব্যের বিরোধিতায় সরব রাজনৈতিক মহল।

শনিবার হলদিয়ায় শ্রমিক সমাবেশের মঞ্চ থেকে দাঁড়িয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমার বলতে লজ্জা লাগে বিচারব্যবস্থায় ১-২ জন এমন আছেন, যাঁরা সম্পূর্ণ যোগসাজশে তল্পিবাহক হিসাবে কাজ করছেন। ১ শতাংশ হবে। কিছু হলেই সিবিআই দিচ্ছে। খুনের মামলায় স্থগিতাদেশ দিচ্ছে। শুনেছেন কোনওদিন? আদালত নিরাপত্তা দিতে পারে। অধিকার আছে। তা বলে স্থগিতাদেশ? আপনার যদি মনে হয় সত্যি কথা বলার জন্য ব্যবস্থা নেবেন তো নিতে পারেন। আমার তাতে কিছু যায় আসে না। ক্যামেরার সামনে সত্যি কথা ২ হাজার বার বলব। ১০ হাজার বার বলব। সত্যি বলতে আমার বিবেকে বাধে না।

তবে অভিষেকের এই মন্তব্যকে বেনজির আক্রমণ হিসাবেই দেখছেন অনেকেই। তৃণমূল নেতার মন্তব্যের বিরোধিতায় সরব রাজনৈতিক মহল। এই প্রসঙ্গে আইনজীবী তথা সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পাচ্ছেন অভিষেক। তাই এসব বলছেন। কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীও তীব্র নিন্দা করেন। তাঁর কথায়, পক্ষে রায় হলে বিচারব্যবস্থা ভালো। আবার বিপক্ষে রায় হলে ভালো না। সব কিছুকে অবজ্ঞা করার মানসিকতা তৈরি হয়েছে তৃণমূল নেতাদের। বুদ্ধিলোপ পাচ্ছে ওদের।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version