কলকাতা ব্যুরো: দৈনন্দিন জীবনে গ্যাসের আবির্ভাব ঘটলেও এখনো কালো সোনার জুড়ি মেলা ভার। গ্যাসে সবকিছু চটচলদি ও ব্যবহার উপযোগী হলেও কয়লাকে পুরোপুরিভাবে অগ্রাহ্য করা প্রায় অসম্ভব। এমন অনেক প্রয়োজনে দৈনন্দিন জীবনেও মানুষকে সেই কয়লারই শরণাপন্ন হতে হয়। তবে কয়লাকে শৈল্পিকভাবে ব্যবহার করে কীভাবে মানুষকে চমকে দেওয়া যায় তার হাতে গরম প্রমান দিলেন আসানসোলের খনি অঞ্চলের এক ভূমিপুত্র। তাঁর কাজ দেখলে আপনিও ওই কালো সোনার প্রেমে পড়তে বাধ্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

১৭৭৪ সালে রানিগঞ্জে কয়লা উত্তোলনের সূত্রপাত। এমজে হিটলি এবং জন সামনার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে কয়লা তোলার অনুমোদন নিয়ে কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরু হয়েছিল এখানে। কিন্তু কয়লার গুণগত মান খারাপ হওয়ায় এক বছরের মধ্যেই সেই উদ্যোগ গুটিয়ে নেওয়া হয়। এই ঘটনার ৩০ বছর পরে ১৮১৬ সালের শেষের দিকে রুপার্ট জোন্স ফের এই এলাকায় কয়লার অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেন। তখন এগারা গ্রামে উচ্চমানের কয়লার খোঁজ মেলে।

ঠিক এই সময়ে কয়লা শিল্পে প্রথম ভারতীয় হিসেবে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের আবির্ভাব। ১৮২৮ সালে প্রিন্স দ্বারকানাথের কার টেগোর অ্যান্ড কোম্পানির নীল কারখানা পরিবর্তিত হয় ভারতের কয়লা শিল্পের প্রথম প্রশাসনিক ভবন হিসেবে। ঠিক এর ১৫ বছর বাদে ১৯৪৩ সালে গিলমোর হামফ্রে অ্যান্ড এবং কার টেগোর অ্যান্ড কোম্পানির সংযুক্তিকরণের ফলে জন্ম নেয় বেঙ্গল কোল কোম্পানি।
ইদানিং কয়লাকে যে অন্যভাবে ব্যবহার করেও সাধারণ মানুষকে তাক লাগিয়ে দেওয়া যায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ শিল্পী প্রশান্ত ভট্টাচার্য। কয়লার শুধু কালো রংই নয়, কয়লার গুঁড়োকে রং হিসাবে ছবিতে ব্যবহার করে সমগ্র কয়লা খনি অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন বিশিষ্ট এই শিল্পী l

সম্প্রতি খনি অঞ্চলের ভূমিপুত্র শিল্পী প্রশান্ত ভট্টাচার্যর ৫৬টি ছবি নিয়ে আসানসোলের বিদ্যাসাগর আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হলো চার দিন ব্যাপী চিত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শিত সব ছবিগুলিই সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের উপর কালো রং দিয়ে আঁকা l তবে শুধু কালোই কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে শিল্পী জানান, কয়লা খনির ভূমিপুত্র আমি l কালো মাটিতেই আমার জন্ম। কালো ব্যর্থতা, হতাশা, দুঃখ ও বেদনার প্রতীক হলেও আমি এই রঙের মধ্যেই আলোর উৎস ও ঘুরে দাঁড়াবার প্রেরণা পথ খুঁজে পাই l

উল্লেখ্য, বিদ্যাসাগর আর্ট গ্যালারিতে এতদিন পর্যন্ত যতজন শিল্পীর প্রদর্শনী হয়েছে একমাত্র শিল্পী প্রশান্ত ভট্টাচার্যের প্রদর্শিত ছবিতে উঠে এসেছে দেশের কালো হীরের প্রাত্যহিক জীবনের ছবি l তাই শিল্পীর এই কালো রঙের নিখুঁত ব্যবহার l জীবনমুখী শিল্পের একটি আদর্শ উদাহরণ শিল্পী প্রশান্তর এই প্রদর্শনী।