মৈনাক শর্মা

একসময় বাড়তে থাকা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিতর্কের শিরোনামে ছিলো চিনের ওয়ান চাইল্ড নীতি। জনসংখ্যা কমাতে ১৯৭৯ সালের নীতির কুফল হিসাবে চিনে বাড়তে থাকে বরিষ্ঠ নাগরিকের সংখ্যা। অবশেষে ৪০ বছরের নীতি বদলে দুটি সন্তান নেওয়ার অনুমতি দেয় চিন, কিন্তূ সুরাহা হয়নি তাতেও। ২০১৬ সালে দুই সন্তানের নীতির পড়েও আগের চেয়েও বেশি কমতে থাকে প্রজননের হার। তাই বর্তমানে তিন সন্তানের নীতির পথে বেজিং।

চিনের এই পদক্ষেপ খুব আশ্চর্যজনক নয়। ১৯৭৯ সালের ওয়ান চাইল্ড নীতি ভঙ্গের ফলে জরিমানা দিতে হয় অনেক পরিবারকে। নীতি ভঙ্গের কারণে একাধিক ব্যাক্তিকে হারাতে হয় চাকরিও। গর্ভপাত হয় বহু মেয়ে সন্তান জন্মের সম্ভবাদের। গত বছর ১ কোটি ২০ লক্ষ শিশু জন্মেছিল চিনে, ১৯৫০-এর দশকের পর থেকে যা সব চেয়ে কম। সরকারি হিসেব বলছে, প্রতি বিবাহিত মহিলাপিছু বর্তমানে গড়ে ১.৩ জন সন্তান জন্মায় এ দেশে। মেয়ে সন্তানের অভাবে বর্তমানে তিন কোটি ব্যক্তি এখনও অবিবাহিত রয়েছে। আসে পাশের দেশ থেকে বাড়ছে নারী পাচার। মায়ানমার, থাইল্যান্ড থেকে একাধিক নারী পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি পাকিস্থানে সংখ্যালঘু জাতির মহিলাদের ও পাচরের অভিযোগ সামনে আসে। ফলে চিনে বাড়ছে অন্য দেশের মহিলার সংখ্যা। এমনি চলতে থাকলে ভবিষ্যতে গ্লোবাল হাব চিনে দেখা যাবে শ্রমিকদের অভাব।

তবে তিন সন্তানের নীতির নেপথ্যে রয়েছে অন্য আর একটি কারণ। নিজের শক্তি বাড়াতে সুপার আর্মি তৈরীর পরিকল্পনাতেও বাঁধা ছিল স্বল্প জনসংখ্যা। কিন্তূ ২০১৬ সালে অতি কঠোর জন্ম নিয়ন্ত্রণ নীতি সামান্য শিথিল হলেও এখানকার বেশির ভাগ শহরে থাকা-খাওয়ার খরচ এতটাই বেশি যে তখনও সাধারণ মানুষ একের বেশি সন্তান নেওয়ার কথা খুব একটা ভাবতেন না। এ বারও সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে। বেশির ভাগ দম্পতিরই বক্তব্য, তাঁরা চাইলেও তিনটে সন্তান বড় করার সামর্থ্য তাঁদের নেই। চিনা সোশ্যাল মিডিয়া উইবো-তে এক জন লিখেছেন, ‘‘আমিও তিন সন্তান নিতে চাই। কিন্তু তার জন্য বছরে অন্তত ৫০ লক্ষ ইউয়ান লাগবে।’’ অর্থাৎ এইবারও জনসংখ্যা বাড়াতে কঠিন চ্যালেঞ্জ চিনের সামনে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version