কলকাতা ব্যুরো: হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকর করতে শেষ পর্যন্ত সক্রিয় ভূমিকায় পুলিশ ও প্রশাসন। ফলে গত কয়েকদিন ধরে আইন মেনে কতটা ছট পুজো হবে তার নিয়ে যে নানান আলোচনা চলছিল, শেষ পর্যন্ত সব আলোচনায় জল ঢেলে দিল প্রশাসন। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে প্রথমত রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবরে মাছি গলার সুযোগ দিল না পুলিশ।
আবার রাস্তায় ভিড় করে দলে দলে পুজো করতে যাওয়ার যে পুরনো ছবি এতদিন দেখতে অভ্যস্ত ছিল শহর কলকাতা, সেই ছবি পাওয়া গেল না এদিন। যদিও গঙ্গার ঘাটে ভিড় হয়েছে যথেষ্ট। কিন্তু সেখানেও কোথাও একটা ভয় ছিল আইন মানার ব্যাপারে। ফলে কখনোই সেই ভিড় দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কিন্তু তারপরেও সামগ্রিকভাবে আদালতের নির্দেশ মানাতে পুলিশ প্রশাসন চেষ্টা করেছে বলেই মনে করছেন নাগরিকদের একটা বড় অংশ।
বিকেল থেকে কেমন যাবে সকাল পর্যন্ত তা নিয়ে সংশয় ছিল এদিন। কেননা এ দিন সকালেই রবীন্দ্র সরোবরে তিন নম্বর গেটের দিকে বিক্ষোভ শুরু করেন একদল মানুষ। তাদের দাবি, ছট পূজার জন্য কিছুটা সময় তাদের লেকে ঢুকতে দিতে হবে। বাস্তবে পুলিশ তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও প্রথমে তারা তা মানতে চাননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা পিছু হটেন। এরপরে ছিল আদালতের নির্দেশ মেনে দলে দলে ভিড় করে গঙ্গায় বা অন্যান্য বড় জলাশয়গুলোতে পুজো না করতে যাওয়ার নির্দেশ মানানোর চ্যালেঞ্জ।
এদিন দুপুরের পর থেকেই বোঝা গিয়েছে অন্যান্যবারের সেই চেনা কাতারে কাতারে ভিড় এবার হবে না। বাস্তবে হয়েছেও তাই। রাস্তা দিয়ে মানুষ পুজো করতে গিয়েছেন। কিন্তু কোথাও সেই মারাত্মক ভিড়ের ছবি দেখা যায়নি। গাড়িতেও যারা গিয়েছেন তারাও আদালতের নির্দেশ মতই দু-তিনজন করে নেমে পুজো দিয়ে আবার গঙ্গার ঘাট থেকেই গাড়িতে উঠে পড়েছেন।
অন্যান্যবার ছট পুজোর দিন শহরের প্রায় সব রাস্তাই চলে যায় বাবুঘা টের মুখে। কারণ কাতারে কাতারে বাস-ট্রাক, গাড়ি করে মানুষ বাবুঘাটে গিয়ে সেখানে পুজো দেন। এবার কিন্তু সেই ছবিটা ছিল অনেকটাই ভিন্ন। খুব হাতে গোনা গাড়ি গিয়েছে গঙ্গায়। যার সঙ্গে অন্যান্য বছরের তেমন কোনো তুলনাই চলে না।
তার সঙ্গেই থাকে নানান রকম শব্দ যুদ্ধ থাকে প্রতিবার। কোথাও ডিজে বাজিয়ে চলে গান, আবার কোথাও ব্যান্ড পার্টির ঢ্যাং কুরা কুর কুর। আর রাস্তায় চলতে চলতে বাজি ফাটানোর সেই ছবি ছিল না প্রায় একেবারেই। ফলে আদালতের নির্দেশ এক্ষেত্রেও অনেকটাই পালন হয়েছে বলে মনে করছেন পরিবেশ কর্মীরাও।
এবার সেসবের তেমন বালাই ছিল না। আর মানুষের ভিড় রাস্তায় ছিল অনেক কম। কারণ যখন ছট পুজোর সঙ্গে যুক্ত মানুষরা বুঝতে পারেন যে, আদালতের নির্দেশে এবার আর কোনভাবেই ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই, তখন অধিকাংশরাই আর ঝামেলা না বাড়িয়ে নিজেদের এলাকাতেই পুজো করেন। কেউ কেউ নিজেদের বাড়ির ছাদেই কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করে সেখানেই নিয়ম রক্ষা করতে পুজো করেন। আর চারিদিকে পুরসভার তরফে পাড়ায় পাড়ায় কৃত্রিম জলাশয় তৈরি আগেই করে দেওয়া হয়েছিল। সেখানেও পুজো দেন অনেকে।